রেললাইন ধরে ১২০০ কিমি হেঁটে বাড়ি ফিরলেন ‘প্রতারিত’ শ্রমিক
লকডাউন(Lockdown)-র সময় পরিযায়ী শ্রমিক(Migrant Workers)-দের পায়ে হেঁটে আসার চিত্র উঠে এসেছিল। কিন্তু লকডাউন পরবর্তী সময়েও যে একই চিত্র উঠে আসবে, তা হয়তো কল্পনাতীত ছিল।
ধানবাদ: সংসারে অভাব। পেটের দায়েই চাকরির খোঁজে পাঁচ মাস আগে ঝাড়খণ্ড (JharKhand) থেকে দিল্লি (Delhi) গিয়েছিলেন বেরজোম বামদা পাহাড়িয়া (৫৬)। তবে ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি, যে এজেন্টের কথায় দিল্লি গিয়েছিলেন, সেই ঠকিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এটুকু শুনেই সিনেমার গল্প মনে হলেও এটাই বাস্তব। আর ঘটনার বাকি অংশটুকু জানলে চমকে উঠবেন আরও।
পকেটে টাকা না থাকায় দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার হেটে অবশেষে দিল্লি থেকে ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন পাহাড়িয়া। সেখানে এসেই তাঁর যাত্রার কাহিনী তুলে ধরেছেন। পাহাড়িয়ার কথায়, এজেন্ট ঠকিয়ে সমস্ত টাকা নিয়ে পালানোয় বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের ভাড়াটুকুও ছিল না তাঁর কাছে। সেই কারণেই দিল্লি থেকে সাহিবগঞ্জের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তিনি। ধানবাদের মহুদায় পৌছতেই সেখানে এক চোরের খপ্পরে পড়েন তিনি। সে তাঁর ব্যাগ চুরি করে পালায়। ওই ব্যাগেই যৎসামান্য টাকা ও পরিচয় পত্র ছিল। সেগুলিও খোয়া যায়।
একের পর এক প্রতারণার ঘটনায় কার্যত ভেঙে পড়েন তিনি। তবে আশার আলো দেখায় রোটি ব্যাঙ্ক (Roti Bank)। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নজরে পড়েন পাহাড়িয়া। প্রয়োজনীয় খাবার ও জলের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাঁরাই সাহিবগঞ্জ অবধি পৌছনোর জন্য একটি বাসের টিকিটও কেটে দেন। এরপরই সুরক্ষিতভাবে বাড়ি পৌছতে পারেন পাহাড়িয়া।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে যাচ্ছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত, যাবেন সিঙ্গুরেও
তবে দিল্লি থেকে ধানবাদ অবধি তিনি পৌছলেন কী করে, এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই পাহাড়িয়া জানান, ওই ১২০০ কিলোমিটার তিনি পায়ে হেঁটেই এসেছেন। সড়ক পথ নয়, রেললাইন ধরেই তিনি হেঁটে এসেছিলেন। সারা দিন-রাত ধরেই তিনি হাঁটতেন। যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, রেল লাইনের ধারেই শুয়ে পড়তেন। ব্যাগ চুরি হওয়ায় আগে ব্যাগে যে সামান্য টাকা ছিল,তা দিয়েই মাঝেমধ্যে খাবার কিনে খেতেন। দুবেলা পেট ভরে খাবার তো দূরের কথা, নিয়মিত একবেলার খাবারটুকুও জুটতো না তাঁর।
পাহাড়িয়ার এই ১২০০ কিমি পদযাত্রার বিষয়ে জানতে পেরে ধানবাদের রেল আধিকারিক আশীষ বনসল বলেন, “সংবাদমাধ্যমেই গোটা বিষয়টি জানতে পেরেছি। ওই ব্যক্তি রেল পথ অনুসরণ করেই ১২০০ কিমি রাস্তা হেঁটে এসেছিলেন। এই বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ অবগত ছিলেন না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জানলে আমরা ওনার বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে পারতাম।”
লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে আসার চিত্র মানবতাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও পাহাড়িয়ার এই জীবনযুদ্ধকে মর্মস্পর্শী বলেই অ্যাখ্যা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন: ভাইয়ের জন্মদিনের ডিজে বাজানো নিয়ে বচসা, আমন্ত্রিতের গুলিতে খুন দাদা