নয়া দিল্লি: গত বেশ কয়েকমাস ধরেই জাতিগত আদমশুমারির আহ্বান জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিহারে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকারের অধীনে জাতিগত জনগণনা করে তার ফলও প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর, অন্যান্য কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যেও এই ধরনের জনগণনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। জাতীয় স্তরেও জাতিগত জনগণনার ডাক দিয়েছে হাত শিবির। জাত-পাতের রাজনীতি দিয়েই মোদী সরকারের দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরাটা বেলাইন করতে চেয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু, গত বছরের শেষে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেসের এই কৌশল ভোট টানতে পারছে না। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি), এই জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এদিন তিনি বলেন, “আজকাল দেশে ফের জাত-পাত নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কেন তারা এই সব কথা তুলছে জানি না। যাইহোক, দলিত, আদিবাসী এবং অনগ্রসর শ্রেণি – জন্মলগ্ন থেকেই কংগ্রেস এই তিন জাতির সবথেকে বড় বিরোধী। মাঝে মাঝে তো আমার মনে হয়, বাবাসাহেব আম্বেদকর না থাকলে, এসসি-এসটি সংরক্ষণ হত কিনা কে জানে?” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের সাংসদরা প্রতিবাদ জানালে, মোদী বলেন, তাঁর কাছে এর প্রমাণ আছে। তিনি জানান, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুই সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিলেন।
মোদী বলেন, “ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী নেহরু বলেছিলেন, ‘আমি সব রকমের সংরক্ষণের বিরোধী। বিশেষ করে চাকরি ক্ষেত্রে তো নয়ই। যা থেকে অদক্ষ এবং খারাপ মানের পণ্য তৈরি হয়, আমি সেই সবের বিরোধী। এই আমি বলি যে তারা জন্মলগ্ন তেকেই সংরক্ষণের বিরোধী। সরকার যদি সেই সময়ে তাদের চাকরিতে নিয়োগ করত এবং সময়ে সময়ে তাদের পদোন্নতি দিত, তাহলে তাদের আজ অনেক উন্নতি হত। কংগ্রেসীরা নেহরুরর কথা অন্ধের মতো মেনে চলে। তাঁর এই মানসিকতা দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে তো সাত দশক ধরে এসসি-এসটিরা সংরক্ষণের অধিকার পাননি। আমরা অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পরই এই অধিকার পেয়েছেন তাঁরা।” প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালের ২৭ জুন ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের এই চিঠি লিখেছিলেন জওহরলাল নেহেরু। তিনি বলেছিলেন, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলিকে ভাল শিক্ষার সুযোগ দিয়ে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে, জাতি ভিত্তিক সংরক্ষণের মাধ্যমে নয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও দাবি করেন, কংগ্রেস কখনই ওবিসিদের সম্পূর্ণ সংরক্ষণ দেয়নি। তাই তাদের সামাজিক ন্যায়বিচারের কথছা বলার অধিকারই নেই। তিনি বলেন, “কংগ্রেস ওবিসিদের সম্পূর্ণ সংরক্ষণ দেয়নি। সাধারণ শ্রেণির দরিদ্রদের সংরক্ষণ দেয়নি। তারা বাবা সাহেব আম্বেদকরকে ভারতরত্ন পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেনি। শুধুমাত্র নিজেদের পরিবারের সদস্যদের ভারতরত্ন দিয়েছে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের চিন্তা-ভাবনাকে ভুলিয়ে দিতে চেষ্টার কোনও কসুর রাখেনি কংগ্রেস। বিজেপির সমর্থনে অন্য দলের সরকার আসার পরই, তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়। এমনকি, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সীতারাম কেশরীর কী অবস্থা হয়েছিল, তা সকলে জানে। দলিত নেতা সীতারাম কেশরীকে সভাপতির পদ থকে সরিয়ে ফুটপাতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল কংগ্রেস। তার ভিডিয়োও রয়েছে। তারা এখন আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচারের পাঠ দিচ্ছে। যাদের নেতার কোনও গ্যারান্টি নেই, নীতির কোনও গ্যারান্টি নেই, তারা মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”