নয়া দিল্লি: ‘হাতি যখন কাদায় পড়ে, তখন ব্যাঙেও লাথি মারে’। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল এবং সরকার গড়ার ক্ষেত্রে জোটসঙ্গীদের দাবির প্রসঙ্গে এ কথাই বলেছেন রাজ্য়ের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাই সরকার গড়ার জন্য জোটসঙ্গীদেরই মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে বিজেপিকে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই একাধিক দাবি রেখেছে জোটশরিকরা। একদিকে যেমন চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি-র দাবি স্পিকারের পদ, সেখানেই জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একাধিক মন্ত্রকের দাবি জানিয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম হল রেল মন্ত্রক। ওদিকে, বিহারেরই এনডিএ-র আরেক জোটসঙ্গী এলজেপি-র নেতা চিরাগ পাসওয়ানও রেলমন্ত্রীর পদ দাবি করেছেন বলেই সূত্রের খবর। বিহারের নেতারা সবাই রেল মন্ত্রকই দাবি করছেন কেন? এর পিছনে কী লুকিয়ে বড় কোনও কারণ?
এশিয়ার বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক হল ভারতীয় রেলওয়ে। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের বিভিন্ন কোণ জুড়েছে এই রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই। সেই কারণে রেল মন্ত্রক যার হাতে থাকবে, স্বাভাবিকভাবেই তার গুরুত্ব বেশি হবে মন্ত্রিসভায়।
অন্যদিকে, এখনও রেলের চাকরিকে অন্যতম সেরা সরকারি চাকরি বলেই গণ্য করে জনগণ। প্রতি বছর লক্ষাধিক যুবক-যুবতী রেলের বিভিন্ন পদে নিয়োগের পরীক্ষায় বসে। রেলে স্পোর্টস কোটা সহ একাধিক সংরক্ষণও থাকে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জনসংযোগের অন্যতম উপায় হল রেল। নেতারা মনে করেন, রেলওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকলে জনগণের সঙ্গে আরও জুড়ে থাকা যায় এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।
মোদী জমানায় বিগত ১০ বছরে রেল পরিষেবায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির অন্যতম প্রচারের হাতিয়ার ছিল রেলের উন্নয়ন। বন্দে ভারত, অমৃত ভারতের মতো সেমি হাইস্পিড ট্রেন, বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের ডিজাইনার সুন্ধাশু মানি দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী সাম্প্রতিককালে রেলের বাজেট বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা করেছেন। রেল পরিকাঠামো বদলেও একাধিক পদক্ষেপ করেছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে বড় নেটওয়ার্ক নিজেদের কাছেই রাখার চেষ্টা করবে তারা। কিন্তু জোটশরিকদের দাবির কাছে মাথা নত করতে হয় কি না, তা জানা যাবে মন্ত্রিত্ব বন্টনের পরই।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে রেলমন্ত্রী ছিলেন নীতীশ কুমার। এবারও এনডিএ জোট নির্বাচিত হতেই জনতা দল ইউনাইটেড রেল মন্ত্রকের দাবি জানিয়েছে। এনডিএ জোটে আসন সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন নীতীশ কুমারের দল। এই কারণেই বিজেপির পক্ষে তাঁর দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা সহজ নয়।
রামবিলাস পাসোয়ান দেশের রেলমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে তিনি বিহারের হাজিপুরে রেলওয়ে জোন তৈরি করেছিলেন। তার সময়ে রেল সেক্টরও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। দলের মতোই চিরাগ পাসওয়ান মন্ত্রিত্বেও তাঁর বাবার উত্তরাধিকারই দাবি করছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আটজন রেলমন্ত্রী বিহার থেকে এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাবু জগজীবন রাম (১৯৬২), রাম সুভাগ সিং (১৯৬৯), ললিত নারায়ণ মিশ্র (১৯৭৩), কেদার পান্ডে (১৯৮২), জর্জ ফার্নান্দেস (১৯৮৯), রাম বিলাস পাসওয়ান (১৯৯৬), নীতীশ কুমার (১৯৯৮ ও ২০০১) এবং লালু প্রসাদ যাদব (২০০৪)। ইউপিএ জমানায় রেল মন্ত্রক নিয়ে লালু প্রসাদ যাদব এবং রাম বিলাস পাসওয়ানের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত লালু প্রসাদ যাদবই মন্ত্রিত্ব ছিনিয়েনিতে সফল হন।