Sitaram Yechury: বাংলার পাশে দাঁড়িয়ে কমরেড কারাতের বিরুদ্ধেও গিয়েছিলেন সীতারাম

Sitaram Yechury: এই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর ভবিষ্যতের কমরেড, প্রকাশ কারাতের। এই দুই তরুণ ছাত্রনেতার হত ধরেই গত শতাব্দীর সাতের দশকে জেএনইউ হয়ে উঠেছিল বাম ছাত্র আন্দোলনের ঘাঁটি। তবে, অদ্ভুতভাবে এই দুই বন্ধু তথা কমরেড ছিলেন সিপিআইএম-এর দুই ভিন্ন লাইনের নেতা। ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে মিলের থেকে অমিলই বেশি দেখা গিয়েছিল।

Sitaram Yechury: বাংলার পাশে দাঁড়িয়ে কমরেড কারাতের বিরুদ্ধেও গিয়েছিলেন সীতারাম
সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাত - ছাত্র জীবন থেকেই কমরেডImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Sep 12, 2024 | 9:31 PM

নয়া দিল্লি: ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থায় সময় জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন সিপিআইএম-এর সদ্য প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি করছিলেন তিনি। জরুরী অবস্থা জারি হওয়ায় তিনি আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেখানেই থেমে গিয়েছিল তাঁর ডক্টরেটের পড়াশোনা। ১৯৭৫-এ আরও অনেক বিরোধী নেতার মতো গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকেও। ১৯৭৭-এ জেল থেকে বেরিয়ে ওই বছর একই বছরে তিনি তিনবার জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর ভবিষ্যতের কমরেড, প্রকাশ কারাতের। এই দুই তরুণ ছাত্রনেতার হত ধরেই গত শতাব্দীর সাতের দশকে জেএনইউ হয়ে উঠেছিল বাম ছাত্র আন্দোলনের ঘাঁটি। তবে, অদ্ভুতভাবে এই দুই বন্ধু তথা কমরেড ছিলেন সিপিআইএম-এর দুই ভিন্ন লাইনের নেতা। ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে মিলের থেকে অমিলই বেশি দেখা গিয়েছিল।

সীতারামকে মনে করা হয়, সিপিআইএম-এর নরমপন্থী নেতা। অন্যদিকে, প্রকাশ কারাত ছিলেন চরমপন্থী লাইনের। মোদী সরকারের বিরোধিতা করতে কংগ্রেস-সহ সকল বিজেপি বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে এক জায়গায় চেয়েছিলেন সীতারাম। অন্যদিকে, প্রকাশ কারাত শিবিরের মতে এই লড়াই কমিউনিস্ট পার্টিতে একাই লড়তে হবে। কংগ্রেসকে তারা দূরে রাখারই পক্ষপাতী ছিলেন। এমনকি, ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গের সিপিআইএম নেতারা যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে চেয়েছিলেন, বিরোধিতা এসেছিল কারাত শিবির থেকে। ঝড় বয়ে গিয়েছিল দলে। কিন্তু, বঙ্গ নেতাদের সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন ইয়েচুরি। তাদের ভরসা দিয়েছিলেন। নির্বাচনী সাফল্য না আসলেও, শেষ পর্যন্ত জোট বেঁধেছিল বঙ্গ সিপিএম ও কংগ্রেস। শুধু এই ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন সময়েই বঙ্গের নেতারা পাশে পেয়েছিলেন ইয়েচুরিকে।

১৯৯৬ সালে যখন জ্যোতি বসুর সামনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল। সেই সময় কারাত শিবির রাজি হয়নি। সীতারাম চেয়েছিলেন জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করা হোক। জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের কোনায় কোনায় সিপিআইএম দলের নাম ছড়িয়ে পড়বে, বঙ্গের নেতাদের এই যুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন সীতারাম। ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তির প্রেক্ষিতে, ইউপিএ-২ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাখ্যানেরও যে সিদ্ধান্ত কারাতের নেতৃত্বাধীন সিপিআইএম নিয়েছিল, তারও বিরোধিতা করেছিলেন সীতারাম। এরপর, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যখন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দল তেকে বহিষ্কার করা হল, তারও বিরোধিতা করেছিলেন সীতারাম। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ বঙ্গের প্রায় সব নেতার সঙ্গেও তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। এমনকি, তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফেরানোরও উদ্য়োগ নিয়েছিলেন তিনি। তা অবশ্য সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সোমনাথ।

প্রকাশ কারাতের সঙ্গে এই ‘লাইনগত’ বিভেদ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বন্ধুত্ব শেষ পর্যন্ত ছিল অটুট। তবে, বঙ্গের প্রতি ইয়েচুরির একটা অন্য টান ছিল। মাতৃভাষা তেলুগু ছাড়াও, ইংরাজি, হিন্দি, মালয়ালম, তামিলের সঙ্গে সঙ্গে গড়গড়িয়ে বাংলাও বলতে পারতেন তিনি। বঙ্গের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কিংবা বাংলায় আসলেও সবসময় তিনি বাংলাই বলতেন। সীতারামের প্রয়াণে, দলের মধ্যেও অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল বঙ্গ সিপিআইএম।