Udaipur Chintan Shivir: আজই শেষ চিন্তন শিবির, হিন্দুত্বের পথেই কি চলবে কংগ্রেস? এখনও তীব্র বিভ্রান্তি

Udaipur Chintan Shivir: রবিবারই শেষ উদয়পুরের চিন্তন শিবির। তার আগে রাজনৈতিক পথ নির্ধারণে তীব্র বিভ্রান্তিতে কংগ্রেস

Udaipur Chintan Shivir: আজই শেষ চিন্তন শিবির, হিন্দুত্বের পথেই কি চলবে কংগ্রেস? এখনও তীব্র বিভ্রান্তি
চিন্তন শিবিরে সনিয়া-রাহুল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 1:35 PM

উদয়পুর: আজ রবিবার, শেষ হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেসের তিন দিনের ‘নবসংকল্প চিন্তন শিবির’। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক পথ ধরবে শতাব্দী প্রাচীন দল? জানা যাবে আজই। তবে, শনিবার পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থা অনেকটাই যেন ‘কোন পথে যে চলি’র মতো। সূত্রের খবর, ‘চিন্তন শিবিরে’ মল্লিকার্জুন খড়গের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্যানেলে আলোচনা হয়েছে মূলত দুটি বিষয় নিয়ে – বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলা করা যাবে কীভাবে? সেই সঙ্গে, কীভাবে বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যাবে জাতীয়তাবাদী দলের তকমা? যদিও স্থায়ী কংগ্রেস সভাপতি নিয়ে প্রশ্নের কোনও জবাব এখনও মেলেনি।

হিন্দুত্বে নরম থেকে চরম?

গত কয়েক বছরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বারংবার ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। কংগ্রেস হিন্দু-বিরোধী দল বলে তকমা লাগানোর চেষ্টা করেছে গেরুয়া শিবির। একের পর এক ভোটে দলের ভরাডুবির পিছনে এটাই সবথেকে বড় কারণ। উদয়পুর চিন্তন শিবিরে, রাজনৈতিক কমিটির আলোচনায় অংশ নেওয়া কংগ্রেসের একটা বড় অংশের নেতা এমনটাই মনে করছেন। তাঁরা দাবি করছেন, কংগ্রেস নেতাদের উচিত সংখ্য়াগুরু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া। এই অংশের দাবি, সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিলেই তাদের ভোট পাওয়া যাবে। এইভাবেই বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলা করা যাবে। সূত্রের দাবি, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, “নিজের রাজ্যে এই রাজনৈতিক পথেই তিনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আক্রমণ ভোঁতা করে দিয়েছেন। মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথও এই মতের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কংগ্রেস যে হিন্দুত্বের হাত ধরেনি এমনটা নয়। নির্বাচনের আগে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বিশেষ করে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরে পুজো দিতে। কিন্তু তাঁদের এই পদক্ষেপকে কংগ্রেসের ‘সিজনাল হিন্দুত্ব’ বলে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। এই ধরনের ‘হিন্দুত্ব’ নীতিতে ভোটবক্সে যে ভাবে ফলও পায়নি কংগ্রেস।

নকলদের কেন সমর্থন করবেন?

তবে, ওই একই আলোচনায় এই মতের সম্পূর্ণ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কংগ্রসের আর একাংশের নেতারা। বিশেষ করে কেরল, অন্ধ্র প্রদেশের মতো দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলির নেতারা রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন, এমনটাই সূত্রের দাবি। এই মতের সপক্ষে থাকা কংগ্রেস নেতারা চিন্তন শিবিরে বলেছেন, হিন্দুত্ব কংগ্রেসের পথ নয়। সকলেই বিজেপিকে হিন্দুত্ববাদী দল হিসাবে চেনে। তারা, আসল হিন্দুত্ববাদীদের ছেড়ে, তাদের নকল করা দলকে সমর্থন কেন করবেন? তাছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের সমর্থন এখনও রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে। নরম হিন্দুত্বের রাস্তা ধরলে, তাঁরা কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারাবেন।

ভোটের সময় মন্দির-মসজিদে নয়

নরম হিন্দুত্বের রাস্তা কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ধরুক বা ধর্মনিরপেক্ষতাতেই ভরসা রাখুক, কংগ্রেস নেতারা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, ভোটের সময় নেতাদের মন্দির-মসজিদ ভ্রমণে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। বস্তুত, বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলা করতে, রাহুল গান্ধী-প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা দীর্ঘদিনই নরম হিন্দুত্বের পথ ধরেছিলেন। গত বেশ কয়েকটি ভোটের আগে তাঁদের বিভিন্ন মন্দির দর্শন করতে দেখা গিয়েছে। রাহল গান্ধী খোদ নিজেকে শিব-ভক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন। চিন্তন শিবিরে কিন্তু ভোটের মুখে ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার বিরুদ্ধেই মত উঠে এসেছে। অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই মনে করছেন এর ফলে ভোটারদের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছচ্ছে না, তাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

কংগ্রেসই প্রকৃত জাতীয়তাবাদী

একই সঙ্গে চিন্তন শিবিরে বিজেপির কাছ থেকে জাতীয়তাবাদী দলের তকমা ফিরিয়ে আনার বিষয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কংগ্রেসই কেন প্রকৃত ভারতীয় জাতীয়তাবাদী দল, তা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে প্রচার করা হবে বিজেপির জাতীয়তাবাদ, নকল জাতীয়তাবাদ। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি, বিজেপি বা সঙ্ঘের কোনও নেতাদের স্বাধীনতা লড়াইয়ে কোথাও দেখা যায়নি – সেই ইতিহাস প্রচার করা হবে।

জাতীয় সুরক্ষাও

জাতীয়তাবাদী দল হিসাবে নিজেদেরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রচার নয়, জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নেও কংগ্রেস দলকেই প্রধান বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে হবে – ‘চিন্তন শিবিরে’ কংগ্রেস নেতারা এমনই মত দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে  ১৯৭১-এর যুদ্ধের সাফল্যকে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে দলীয় নেতাদের ‘আত্মত্যাগের’ কাহিনিও তুলে ধরতে হবে। মল্লিকার্জুন খড়গে ইঙ্গিত দিয়েছেন, শুধু ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর হত্যা নয়, এই আত্মত্যাগের তালিকায় থাকবে পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিন্ত সিং, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্লার মতো কংগ্রেস নেতাদের হত্যাও। প্রচার করা হবে জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে বিজেপি কতটা অনির্ভরযোগ্য, তা-ও। এই ক্ষেত্রে হাতিয়ার করা হবে বাজপেয়ী সরকারের সময়ে কান্দাহারে বিমান অপহরণের ঘটনা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরাসরি চিনের নাম মুখে না আনার বিষয়কেও।

শুধু গান্ধী নয়

গত কয়েক বছরে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-জেপি নাড্ডাদের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে সফলভাবে শুধুমাত্র গান্ধীদের দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বিজেপি। জনমানসে এই প্রভাব এখন স্পষ্ট। এই অবস্থায় উদয়পুর ‘চিন্তন শিবিরে’ কংগ্রেস মানে যে শুধু গান্ধী নয়, তা প্রমাণের একটা মরিয়া চেষ্টা দেখা গিয়েছে। ২০১৩ সালের জয়পুর ‘চিন্তন শিবিরে’ শুধুমাত্র সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং মনমোহন সিং-এর ছবি ছিল। এইবার, ফ্লেক্সে জায়গা হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহের আর্টওয়ার্ক। সেই সঙ্গে ‘চিন্তন শিবিরের’ পথে রয়েছে শহিদ ভগত সিং, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সর্দার প্যাটেল, গোখলে, লালা লাজপত রাইদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি ও স্মরণীয় বিবৃতি। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীদের পাশাপাশি রয়েছে পিভি নরসিমা রাও, মনমোহন সিংদের ছবিও।

পরের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী?

তবে, কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারতন্ত্র যে এখনই ঘোচার নয়, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ‘চিন্তন শিবিরে’। কংগ্রেসের উত্তর প্রদেশের বিশিষ্ট নেতা আচার্য প্রমোদ খোলাখুলি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে কংগ্রেসের জাতীয় সভানেত্রী করার দাবি করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, কোটি কোটি কংগ্রেস কর্মী ফের রাহুল গান্ধীকেই জাতীয় সভাপতি পদে দেখতে চান। কিন্তু রাহুল নিজেই আর দায়িত্ব নিতে রাজি নন। তাই, তাঁর পরের জনপ্রিয়তম নেতা হিসাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেই জাতীয় সভানেত্রী করা হোক।