ওয়েনাড়: যত সময় যাচ্ছে, ততই বাড়ছে মৃতর সংখ্যা। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই), বিকেল ৪টে বেজে ১০ মিনিট পর্যন্ত মৃতর সংখ্যা বেড়ে ৯৫ হয়েছে। এর মধ্যে সনাক্ত করা গিয়েছে ৩৭ জনকে। আরও বহু মানুষ এখনও কাদা-মাটি-ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগেই উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে কেরলের ওয়েনাড় জেলায় ভারী বর্ষার জেরে একাধিক ধস নামে। যত সময় যাচ্ছে এই বিপর্যয়ের ভয়াবহতা স্পষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থায়, হতাহতদের উদ্ধারের জন্য এবং আহদের চিকিৎসা পরিষেবা ও মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সহায়তার আর্জি জানিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা, রাহুল গান্ধী।
লোকসভাতে এদিন তিনি বলেন, “আজ সকালে, ওয়েনাড়ে বেশ কয়েকটি বিধ্বংসী ধস নেমেছে। ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আমি মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্ধার ও চিকিৎসার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করছি। মৃতদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়াতেও পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসনের একটি রোডম্যাপ তৈরি করুন।”
তবে তিনি শুধু ওয়েনাড় নয়, সারা দেশেই যে যে অঞ্চলে ধস নামছে এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে, সেই সকল জায়গার জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওয়েনাড় এবং পশ্চিমঘাটের অনেক এলাকায় ধস নেমেছে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে ধসের সংখ্যা বেড়েছে। ধস-প্রবণ অঞ্চলগুলির মানচিত্র তৈরি করতে হবে। পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলগুলিতে ক্রমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। তা মোকাবেলার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এবং একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশের রায়বরেলীর পাশাপাশি, কেরলের ওয়েনাড় কেন্দ্র থেকেও লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে, তিনি ওই কেন্দ্রটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বদলে ওই কেন্দ্রে তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে প্রার্থী করছে কংগ্রেস। রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা দুজনেই খুব শিগগিরই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ওয়েনাড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেনুগোপাল।
ধস নেমে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে ওয়ানাড়ে। মৃতর সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। আহতের সংখ্যাও শতাধীক। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ২৫০ জনকে কাদা-মাটি-ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেরল সরকার। মঙ্গল এবং বুধবার রাজ্যে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এদিকে, উদ্ধারে সহায়তা করতে চুরমালায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ভারতীয় সেনার একটি কলাম। দড়ি ব্যবহার করে, নদী পেরিয়ে সৈন্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্যসভায় এদিন তিনি বলেন, ‘এটি শুধু কেরলের বিপর্যয় নয়, পুরো দেশ এই ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে, কেরলের ত্রাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে ভারত সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে, আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ত্রাণের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি সেখানে পৌঁছেছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে, আমাদের অগ্রাধিকার হল মৃতদেহ উদ্ধার করা এবং যাদের বাঁচানো যায় তাদের বাঁচানো।”