অযোধ্যা: ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তবে, নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। গর্ভগৃহ তৈরির কাজ শেষ। সেখানেই রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হবে। তার আগে, রাম মন্দিরের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করেছে রাম মন্দির ট্রাস্ট। তাতে ধরা পড়ছে এই মন্দিরের জাঁকজমক। তবে অনেকেরই জানা নেই, এই মন্দির তৈরিতে লোহা, ইস্পাত বা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতের বহু মন্দিরই পাথরে তৈরি। কিন্তু, সেগুলি তৈরি হয়েছিল শত শত বছর আগে। একুশ শতকে এসে, কেন অত্যাধুনিক নির্মাণ সামগ্রীগুলির বদলে, রাম মন্দির নির্মাণে শুধুমাত্র পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে? না এর পিছনে কোনও ধর্মীয় কারণ নেই। বরং, রয়েছে বিজ্ঞান।
রুরকির সিএসআইআর-সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর, অধ্যাপক রামঞ্চরালা প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন, মন্দিরটিকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী হিসেবে তৈরি করতেই মন্দির নির্মাণে লোহা এবং সিমেন্টের বদলে শুধুমাত্র পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া পাথরের আয়ু, অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর তুলনায় অনেক বেশি। লোহায় মরচে ধরে বলে, মন্দির নির্মাণে লোহা বা ইস্পাতও ব্যবহার করা হয়নি। একটি নমনীয় ধরনের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে রাম মন্দিরে। এগুলি আনা হচ্ছে রাজস্থানের ভরতপুরের বংশী পাহাড়পুর থেকে। এই গোলাপী পাথরগুলি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত টেকসই। প্রতিটি পাথরের ব্লকে খাঁজ কেটে, সেই খাঁজে অন্য পাথর বসানো হয়েছে। এই দুই পাথরের মধ্যে কোনও সিমেন্টও দেওয়া হয়নি। এটা নাগারা নির্মাণ রীতি। এই শৈলী খাজুরাহো মন্দির, সোমনাথ মন্দির এবং কোনার্কের সূর্য মন্দিরের মতো অনেক মন্দির তৈরি হয়েছে।
তবে, মন্দির নির্মাণের শুরুতেই চিন্তায় পড়েছিল রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই জানিয়েছেন, ভিত তৈরির আগে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, মন্দিরের নীচে মাটির পরিবর্তে আলগা বালি রয়েছে। তার উপর মন্দির তৈরি করলে, বেশিদিন টিকত না। এই সমস্যার সমাধানে আলোচনায় বসেছিলেন, সিবিআরআই, ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল সার্ভে, এবং দিল্লি, গুয়াহাটি, চেন্নাই, রুরকি ও বম্বে আইআইটিগুলির বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা লারসেন অ্যান্ড টুব্রো সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও। সকলের পরামর্শে ওই বালি পুরোটা তুলে, তার জায়গায় ৫৬টি স্তরে ছালা হয় ‘রোল্ড কমপ্যাক্ট কংক্রিট’। এই অনন্য কংক্রিটের মিশ্রণ কালক্রমে পাথরে পরিণত হয়।