Operation Mahadev: কেন নাম দেওয়া হল ‘অপারেশন মহাদেব’? নেপথ্য নায়কই বা কারা?
Operation Mahadev: ভূস্বর্গে আরেকটা অপারেশন নয়! অপারেশন মহাদেব অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। যেভাবে মুসাকে খুঁজে মারা হয়েছে, সেটা আর পাঁচটা অপারেশনের চেয়ে আলাদা। জঙ্গিদের মাথায় এভাবে গুলি করতে পারে কারা?

সোমবার, শিবের বারে কার্যত ‘তাণ্ডব’ করে দেখাল ভারতীয় সেনা, চিনার কর্পস ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী! তাদের গুলিতে খতম পহলগাঁও হামলার মাস্টারমাইন্ড লস্কর-এ-তৈবা জঙ্গি সুলেমান শাহ ওরফে হাসিম মুসা-সহ তিন ‘এইচভিটি’ বা হাই ভ্যালু টেরোরিস্ট।
সূত্রের খবর, মুসা–সহ অন্য জঙ্গিরা গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে সিদ্ধহস্ত। মুসা পাক সেনার স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্ৰুপে (এসএসজি) ট্রেনিংপ্রাপ্ত। শ্রীনগরের ডাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের কাছে হারওয়ান এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে লুকিয়ে ছিল জঙ্গিরা। লিদবাসে লুকিয়ে থাকাকালীন জঙ্গিদের কাছে কোনও জিপিএস সেট ছিল না জঙ্গলে দিক নির্ণয়ের জন্য। ভারতীয় সেনার হাতে ধরা পড়ার ভয়ে কোনওমতে প্রাণ বাঁচিয়ে লুকিয়ে ছিল মুসারা। মুসা পাকিস্তানের প্রাক্তন প্যারা-কমান্ডো হওয়ায় ‘কোভার্ট অপারেশন’ ও আত্মগোপনে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু ওই যে কথায় বলে না, ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
গত ১১ জুলাই সেনা ইন্টেলিজেন্স একটি চিনা ডিভাইসকে ইন্টারসেপ্ট করে জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ওই তথ্যের উপরে নির্ভর করেই সোমবার ‘অপারেশন মহাদেব’ শুরু করে সেনা, চিনার কর্পস ও জম্মু কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী। সোমবার, শিবের বারে সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় ‘অপারেশন মহাদেব’। নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আবারও ভারতীয় আবেগকে মর্যাদা দিল দেশের বীর সেনা। যেখানে এই অপারেশন চলছে, সেটা শ্রীনগরের জাবারওয়ান পর্বতমালার মহাদেব শৃঙ্গর আশপাশের ঘন জঙ্গলে ঢাকা এলাকা। বছরের অর্ধেক সময় এই এলাকা পুরু বরফে ঢাকা থাকে। মহাদেব শৃঙ্গ এলাকায় জঙ্গিদমন অভিযান, তাই নাম ‘অপারেশন মহাদেব’। এর আগে বৈসরণ ভ্যালিতে ভারতীয় সধবাদের মাথার সিঁদুর মুছে ফেলেছিল যারা, সেই জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সেবারও অপারেশনের নাম রাখা হয় ভারতীয় আবেগকে মাথায় রেখে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চিনার কর্পস সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও অপারেশন চলছে। বিস্তারিত তথ্য মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে সেনার তরফে। সেনার বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, জম্মু-কিস্তওয়ার ও কোকেরনাগের জঙ্গলে সবমিলিয়ে ৭০-৮০ জন টিআরএফ ও জৈশ জঙ্গি লুকিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা। সেনা মনে করলে, সোমবার রাতে নতুন করে অভিযান শুরু করতে পারে বা চলতি অভিযানকে আরও তীব্রতর করতে পারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে অপারেশন সিঁদুর থামেনি বলে মন্তব্য করার পর প্রতিরক্ষা মহলেও জল্পনা, অপারেশন সিঁদুর কি আবার শুরু হতে পারে? ‘অপারেশন মহাদেব’-কে আর পাঁচটা জঙ্গিদমন অভিযান বলে ধরতে নারাজ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, যেভাবে এই অপারেশন চালানো হয়েছে, জঙ্গিদের মৃতদেহের ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবকটিই – ‘হেডশট’। একেবারে নিখুঁতভাবে জঙ্গিদের উপস্থিতি জানতে পেরেই ‘স্নাইপার’ ব্যবহার করে জঙ্গিদের মাথার মাঝখানে গুলি চালানো হয়েছে।

নিকেশ করা হয়েছে তিন জঙ্গিকে
সেনার অন্দরের একটি সূত্রের দাবি, এদিনের অপারেশন মহাদেবকে সাফল্য এনে দিয়েছেন সেনাবাহিনীর স্পেশ্যাল ফোর্সের ফোর্থ প্যারা-র কমান্ডিং অফিসার ও জুনিয়ার কমিশনড অফিসারেরা। ফোর্থ স্পেশ্যাল ফোর্সের কাছে এক ধরনের বিশেষ ‘ড্যাগার’ বা ছোরা থাকে। হিন্দিতে একে খঞ্জর বলে। এই খঞ্জরের এমনই ধার যে শত্রুর পেটে ঢোকালে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসবে। তাই এই বাহিনীকে ‘নর্থ ড্যাগার’ বলেও ডাকেন অনেকে। এই প্যারা ফোর্স-ই খতম করে জঙ্গিদের। তাঁদের যোগ্য সঙ্গত দেয় রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ব্যাটেলিয়ন। গভীর জঙ্গলে তীব্র গুলির লড়াই চলে। পাঁচজন জঙ্গিকে ঘিরে ফেলে যৌথবাহিনী। এই জঙ্গিরা অমরনাথ যাত্রার পুণ্যার্থীদের উপরে হামলার ছক কষছিল সন্দেহ। তাদের নিকেশ করা গেছে। পুণ্যার্থীরা নিরাপদে অমরনাথে গিয়ে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে পারবেন এবার। সেই ধর্মীয় আবেগকে মাথায় রেখেও এই অভিযানের নাম অপারেশন মহাদেব রাখা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, অপারেশন মহাদেব শুধু একটা এনকাউন্টার নয়, ভারতীয় নাগরিকদের হত্যা করেছে যে জঙ্গিরা, তাদের উপযুক্ত বিচার। ইংরেজিতে বললে, ‘justice delivered by India’…

