Partha Chatterjee: ‘নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন পার্থই’, বললেন খোদ বান্ধবী অর্পিতা

Arpita Mukherje: বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটে অনন্ত টেক্সফ্যাবের অফিস ছিল। সেই কোম্পানির শেয়ার ট্রান্সফারের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং ওই সংস্থার সব ক্ষমতা পার্থর হাতেই ছিল বলে জানান অর্পিতা।

Partha Chatterjee: 'নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন পার্থই', বললেন খোদ বান্ধবী অর্পিতা
পার্থ-অর্পিতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 29, 2023 | 7:02 PM

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। সোমবার আদালতে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবী। একইসঙ্গে অর্পিতা (Arpita Mukherjee) জানান, সংস্থার সব কাজ হত পার্থর বাড়িতে। বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটে অনন্ত টেক্সফ্যাবের অফিস ছিল। সেই কোম্পানির শেয়ার ট্রান্সফারের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং ওই সংস্থার সব ক্ষমতা পার্থর হাতেই ছিল বলে জানান অর্পিতা। দীর্ঘ ৯ মাস পর আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে এমনটাই জানালেন অর্পিতা।

আদালত সূত্রে খবর, এদিন ইডি আদালতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। তখনই নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার ও সোহম বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট অনন্ত টেক্সফ্যাবের রেজিস্টার্ড অফিস প্রসঙ্গে অর্পিতা বলেন, “বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে অনন্ত টেক্সফ্যাবের রেজিস্টার্ড অফিস ছিল। আমার সঙ্গে অনন্ত টেক্সফ্যাবের সম্পর্ক কি! আমাকে ব্যবহার করা হয়েছিল অনন্ত টেক্সফ্যাবের শেয়ার ট্রান্সফার করার জন্য। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর পর মেয়ে বিদেশে থাকায় এটা করা হয়। পার্থ-ঘনিষ্ঠ একজন জোর করে এটা করেছিল। ওই সংস্থার সব ক্ষমতা পার্থর হাতেই ছিল।” তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অর্পিতা এদিন বলেন, “বিভিন্ন সংস্থায় থাকা টাকা পার্থর, আমার নয়। ED-র তদন্তই এটা বলছে। নগদ আর গয়না যেগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলিও অনন্ত টেক্সফ্যাবের। এটা ED-র তদন্তে প্রকাশ হয়েছে। ওই সংস্থার ১০০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার পার্থর পরিবারের হাতেই ছিল, সেটা মনোজ জৈন বলেছেন। এই সব সংস্থার সব কাজও হত পার্থর বাড়িতে।” এরপরই অর্পিতার দাবি, “এটা যদি দাবা খেলা হয় তাহলে তার রাজা কে সেটা পরিস্কার। আমার বয়স্ক মা রয়েছেন, আমার পালানোর সম্ভাবনা নেই।”

অর্পিতার বক্তব্যের ভিত্তিতেই অন্যান্য মামলার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর আইনজীবীরা বলেন, “আমার মক্কেল বেনিফিসারি ছিল না। কামাল সিং ভূতোরিয়া, মৃন্ময় মালাকার, মনোজ জৈন। এরা বিশ্বাস করে বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর হয়েছিল। কিন্তু এদের ছাড় দেওয়া হল। তাহলে আমার মক্কেলের ক্ষেত্রে সেটা হল না কেন?” এই প্রসঙ্গেই তিনি অর্পিতার জামিনের জোর আবেদন জানান।

যদিও ED-র আইনজীবী ফিরোজ এদুলজি, অভিজিৎ ভদ্র ও ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অর্পিতার জামিনের বিরোধিতা করেন এবং গ্রেফতারের আগে বয়স্ক মায়ের সঙ্গে যে অর্পিতার যোগাযোগ ছিল না, তাও পরোক্ষে উল্লেখ করেন তাঁরা। ED-র আইনজীবীরা আরও বলেন, “ওনারা বলছে পার্থই কিং। কিন্তু ওনাকেই ঠিক করতে হবে উনি ডিফেক্ট রানি নাকি পার্থকে কাকু বলবেন।” LIC-র প্রসঙ্গ তুলে ED-র আইনজীবী কটাক্ষের সুরে আরও বলেন, “বলা হচ্ছে পার্থ ও অর্পিতার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু LIC ফর্মে সই করেছে। লিখেছে কাকু পার্থ। এখন কাকু-দুজন একজন পার্থ। অন্যজন কালীঘাটের।”

গ্রেফতারের আগেই অর্পিতার ফ্ল্যাট খেকে বিপুল টাকা ও গয়না মিলেছিল। তখন অর্পিতা তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেন ইডি-র আইনজীবী। অর্পিতা দুর্নীতিতে যুক্ত না হলে ওই টাকা তাঁর ফ্ল্যাটে কিভালে গেল, ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে কেউ ফ্ল্যাটের চাবি কেন দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পার্থর উদ্ধৃতি তুলে ধরে ইডি-র আইনজীবী আরও বলেন, “২০১২ থেকে বোলপুরে পার্থ-অর্পিতার সম্পত্তি রয়েছে। সে ব্যাপারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেছেন তিনি কিছু জানেন না, অর্পিতা জানেন।” অর্পিতাকে ফাঁসানোর দাবি খারিজ করে ইডি-র পাল্টা যুক্তি, “উনি বলছেন, জোর করে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য কোনও অভিযোগ কোথাও করেছিলেন কি? উনি আসলে ওই জীবনযাত্রা ভোগ করেছেন।” অর্পিতা ‘একই দোষে দুষ্ট’ বলেও দাবি জানান তিনি।

এদিন বিচারক দু-পক্ষের সওয়াল জবাব শোনেন এবং অর্পিতার জামিনের রায়দান আপাতত স্থগিত রাখেন। বুধবার, ৩১ মে এব্যাপারে রায় জানাবেন বলে বিচারক জানিয়েছেন।