Babul Supriyo Joined TMC: সেই তৃণমূলেই এ বার ‘এই তৃণমূল আর না’-র বাবুল
Babul Supriyo Joined TMC: উঠতে বসতে তৃণমূলকে 'টিএমছিঃ' বলে কটাক্ষ করতেন যিনি, অবশেষে সেই তিনিই শনিবার ঘাসফুল উত্তরীয় গলায় জড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দিলেন তৃণমূলে।
কলকাতা: ছিলেন গায়ক। ২০১৪ সালে হলেন রাজনীতিক। তারপর হলেন সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। উঠতে বসতে তৃণমূলকে ‘টিএমছিঃ’ বলে কটাক্ষ করতেন যিনি, অবশেষে সেই তিনিই শনিবার ঘাসফুল উত্তরীয় গলায় জড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দিলেন তৃণমূলে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ‘দিদির চটি’-কে বিঁধে বিজেপির থিম সং গেয়েছিলেন ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’ খ্যাত গায়ক। অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তাঁর ‘এই তৃণমূল আর না’ গানও। এরপর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন দ্বিতীয়বারের জন্য। কিন্তু এ বারও পূর্ণ মন্ত্রিত্ব জুটল না। দ্বিতীয়বারও পূর্ণ-মন্ত্রিত্ব না পাওয়া নিয়ে বিরোধীরাও খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তাও বিজেপির সঙ্গে নরমে-গরমে চলছিল তাঁর সফর। কিন্তু একুশে বাংলার বিধানসভা ভোট শেষ হতে না হতেই সেই সফর ইংরাজির ‘সাফার’-এ (ভোগান্তি) পরিণত হল। মন্ত্রিত্ব খুইয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ফেসবুকেই। এরপর মমতা-অভিষেকের কাছ থেকে ‘কাজের সুযোগে’র আশ্বাস পেয়ে অবশেষে শনিবার বাবুল সুপ্রিয়র রাজনৈতিক আঙিনায় ফুটল নতুন ফুল। পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে এলেন সুপ্রিয় বড়াল।
কিন্তু মুম্বইয়ের রুপোলি দুনিয়া থেকে কী ভাবে তাঁর রাজনীতিতে আসা? কোন পথেই বা দু-দু’বার কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব-লাভ? তারপর কোন অঘটনের জেরে পথ বেঁকে গেল বিজেপি ও বাবুলের? রইল সেই সফরনামা…
মাঝ আকাশে রামদেব সাক্ষাৎ
সালটা ২০১৪। মুম্বই থেকে বিমানে অন্য একটি শহরে যাওয়ার সময় আচমকাই যোগগুরু বাবা রামদেবের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা। কথোপকথন চলাকালীন রামদেব জানান, বিজেপি এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু সংগঠন মজবুত না থাকায় একটি আসনও জেতার আশা নেই। অথচ সেই সময় গোটা দেশে মোদী-হাওয়া তুঙ্গে। পরিবর্তনের গন্ধ যখন গোটা দেশেই ম-ম করছে, তখন বাংলায় পৃথক ফল হবে কেন? এই ভাবনা থেকেই সেই সময় তৎকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার হাত থেকে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন ডাকাবুকো বাবুল।
‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে’
বাংলা থেকে যদি বিজেপি সাংসদ পায়, তবে তাঁকে যে নিজের মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে, সেই ইঙ্গিত মোটামুটি ভোটের আগেই দিয়ে রেখেছিলেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সালে আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডে ভোট প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “মুঝে বাবুল চাহিয়ে”। অর্থাৎ তিনি আকারে ইঙ্গিতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, জিতলে কেন্দ্রে মন্ত্রী হবেন বাবুল। এরপর আসানসোল ও দার্জিলিং আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। তবে মোর্চার সাহায্য নিয়ে পাহাড় জেতার তুলনায় বাবুলের জয়লাভ ছিল অনেক কঠিন। কঠিন লড়াই জেতার পুরস্কার স্বরূপ প্রত্যাশা মতোই মোদী সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন বাবুল।
মন্ত্রিসভায় মিলল স্থান, শুরু বাবুলের উত্তরণ
ভোটে জেতার পর কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী, সেই থেকে শুরু বাবুলের রাজনীতির ইনিংস। হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার পাট চুকিয়ে তখন বিজেপির মঞ্চে ‘কহো না প্যার হ্যায়’ গাইছেন তিনি। সাংসদ হিসেবে আসানসোলের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন, এমনটাই বরাবর দাবি করেন তিনি। দিল্লির রাজনীতিতে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু রাজ্য সংগঠনে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারেননি। যার দরুণ, বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে অচিরেই তাঁর মনোমালিন্য গড়ে উঠেছিল। তবে বাবুল যে প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য ছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলে।
ভিক্টোরিয়ায় ঝালমুড়ি রাজনীতি
তাঁরা দুজনে যুযুধান। একজন সুপ্রিমো, অন্যজন সাংসদ। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সৌজন্যের কোনও খামতি দু’জনের মধ্যে হয়নি। ২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়ার সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাবুল সুপ্রিয়র সেই বিখ্যাত ঝালমুড়ি খাওয়ার ঘটনা এখনও বঙ্গ রাজনীতিতে চর্চিত হয়। একই ভাবে ২০১৮ সালেও দমদম বিমানবন্দরে একবার মুখোমুখি হয়ে রাজনীতি বর্হিভূত গল্পে মেতেছিলেন মমতা-বাবুল। ফলে তিনি তৃণমূল বিরোধী হলেও নেত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রক্ষা করে চলতেন।
একুশে টালিগঞ্জে হার, হাতছাড়া মন্ত্রিত্ব, বিদায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অম্ল-মধুর চলছিল মোটের উপর। কিন্তু, একুশের নির্বাচনের মহারণে সম্পর্ক থেকে মধু উবে যায়। বাবুলের মুখে তীব্র ও তীক্ষ্ণ আক্রমণের ভাষা শোনা যায় মমতা-অভিষেক এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাবুল এতটাই এককাট্টা ছিলেন যে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল রেকর্ড মার্জিনে জিতে আসার পরও বাবুল ফেসবুকে লেখেন, “আমি ওঁকে (মমতাকে) অভিনন্দনও জানাব না, রাজ্যবাসীর এই রায়কে সম্মান জানাচ্ছি-এই কথাও বলব না। আপনারা চিন্তা করে দেখবেন, বিজেপিকে একবার সুযোগ না দিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছেন। একটা দুর্নীতিপরায়ণ, অসৎ সরকারকে জিতিয়ে ফের ওই নিষ্ঠুর মহিলাকে ক্ষমতায় এনেছেন আপনারা।” তবে বাবুল-বিজেপির মধুচন্দ্রিমায় ইতি পড়ে চলতি বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর। টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে লড়েও জয়ের মুখ দেখতে পাননি তিনি। এরপরই কোপ পড়ে মন্ত্রিত্বে। বাবুলকে সরিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রিসভা থেকে। তারপরই একের পর এক বিস্ফোরক ফেসবুক পোষ্টে নিজের ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশ্যেই জানান দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জানান, রাজনীতিও ছাড়ছেন। কংগ্রেস, সিপিএম বা তৃণমূল, কোথাও যোগ দিচ্ছেন না। তবে সেই বাবুলই এ বার যোগ দিলেন তৃণমূলে। যে দলকে তিনি নিজেই ‘টিএমছিঃ’ বলে সম্বোধন করতেন। সত্যি, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী হ্যাঁ অথবা না বলে কিছুই হয় না তা ফের প্রমাণ হল।
‘টিএমছিঃ’-তে এখন ‘আপ্লুত’ বাবুল
কী এমন হল, যাতে যে তৃণমূল মাসদুয়েক আগেও তাঁর জন্য টিএমছিঃ ছিল, আজ সেখানেই যোগদান করলেন তিনি? বাবুল অবশ্য বলছেন, যা হয়েছে গত ৩-৪ দিনের মধ্যেই হয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য অন্য কথা বলছে। অনেক রাজনীতির কারবারিরাই মনে করছেন, বাবুল মন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকেই হয়তো তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর একটা যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। যা আজ ঘাসফুল রূপে পরিস্ফুটিত হয়েছে।
সত্য বচন, রাজনীতি আসলেই সম্ভাবনার ‘খেলা’, যেখানে ‘শেষ’ বলে কিছুই হয় না।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo On Joining TMC: ‘যা ঘটার গত ৪ দিনে ঘটেছে’, তৃণমূলে যোগ দিয়ে অকপট বাবুল