কলকাতা: রাজ্যে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী কি ডেল্টা নাকি ওমিক্রন? গত কয়েকদিন ধরে বার বার এই প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মনে। এবার সেই প্রশ্নেরই নিরসন হতে চলেছে। সূত্রের খবর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জিনোমিক্সে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের যে রিপোর্ট হয়েছে, তাতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাই ৭১.২ শতাংশ।
অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে ৭০ শতাংশের বেশি কোভিডের মূলে রয়েছে ওমিক্রন স্ট্রেন। ডেল্টা ৩.৭ শতাংশ। ৬.৭ শতাংশের মধ্যে কোনওরকম ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। শিশুদের মধ্যে ওমিক্রন দেখা গিয়েছে ৬৯.২ শতাংশ। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও ওমিক্রন আক্রান্ত ৮১ শতাংশ। যদিও এ নিয়ে এখনও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে চূড়ান্তভাবে কিছু জানানো হয়নি। অর্থাৎ রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের গ্রাফ যে ঊর্ধ্বমুখী তার পিছনে কলকাঠি নাড়ছে ওমিক্রন স্ট্রেন।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “ওমিক্রন অত্যন্ত মারাত্মকভাবে সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু মারণ ক্ষমতা কম। তাই ৭০ শতাংশ মানুষ ওমিক্রন আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি, জটিলতা তৈরি, মৃত্যু, ভেন্টিলেশনের সংখ্যা অনেক কম।”
শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। শুধুমাত্র কলকাতাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার পেরিয়েছে। তবে রাজ্যে করোনা পরীক্ষার হার অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ হাজারের বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। যদিও নতুন সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। রাজ্যের ক্ষেত্রেও সুস্থতার হার ৯৫ শতাংশের বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃতের সংখ্যা বাড়েনি। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ২১৩।
শুক্রবারই ১৫০ কোটির টিকাকরণের মাইলফলক পার করেছে ভারত। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব আর স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হত না। তিনি উল্লেখ করেছেন, সবাই মিলে একযোগে কাজ করলে, তবেই কোনও লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। গত বছরের ২১ অক্টোবরে ১০০ কোটির মাইলফলক পার করে ভারত। এবার আরও একধাপ এগোল সেই সাফল্য।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের অন্তত একটি ডোজ় পেয়েছেন। আর ৬৬ শতাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে অর্থাৎ তাঁরা টিকার দুটি ডোজ়ই পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে গত ৩ জানুয়ারি থেকে। এখনও পর্যন্ত ২২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী টিকার একটি ডোজ় পেয়েছে। এরপর শুরু হবে প্রিকশন ডোজ় দেওয়ার কর্মসূচি। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি যাদের কোনও বাড়তি অসুস্থতা বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের দেওয়া হবে প্রিকশন ডোজ় বা বুস্টার।