NRS Hospital: রক্তের জোগানে টান, কখনও বেডের আকাল, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের সঠিক পরিষেবা না মেলায় ফের কাঠগড়ায় NRS

Kolkata: মারণ কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েও একরত্তিদের জুটছে না চিকিৎসা অন্তত তেমনটাই অভিযোগ পরিবারের। চলছে দোষারোপ। রয়েছে বাবা-মায়ের আর্তি। অমিল শুধু একান্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটাই।

NRS Hospital: রক্তের জোগানে টান, কখনও বেডের আকাল, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের সঠিক পরিষেবা না মেলায় ফের কাঠগড়ায় NRS
এনআরএস হাসপাতাল (ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 20, 2022 | 11:02 AM

কলকাতা: রক্তশূন্য শিশু। বিপন্ন শৈশব। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে সারি-সারি কচি প্রাণ। বাক্যগুলো ভাবলেই কেমন হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো? শিরদাঁড়া দিয়ে বইছে তো হিমশীতল স্রোত? নাহ! এটা কল্পনা নয়। এটাই কঠিন বাস্তব। কঠিন বাস্তব NRS-এ ভর্তি ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের। কখনও রক্তের জোগানে টান তো কখনও বেডের আকাল। মারণ কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েও একরত্তিদের জুটছে না চিকিৎসা অন্তত তেমনই অভিযোগ পরিবারের। চলছে দোষারোপ। রয়েছে বাবা-মায়ের আর্তি। অমিল শুধু একান্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটাই।

মায়েরা সব জানেন। শিশুর কষ্ট। মা জানেন। মানসিক হোক বা শারীরিক। সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখতে মায়েরা সর্বস্ব বাজি রেখে লড়ে যান। কেননা মায়েরা সব জানেন। লড়তেও জানেন। দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত শিশুর যন্ত্রণা মা বোঝেন। দূর গ্রাম থেকে ছুটে আসেন হাসপাতালে। বাঁচাতেই হবে বাচ্চাকে। শহরের বড় হাসপাতাল। ওজনদার তকমা। নামি-নামি ডাক্তার। আর সেই হাসপাতালে এসেও যদি চিকিৎসা না মেলে? তবে?

NRS-এর শিশু বিভাগ। সারি সারি বেড । শয়ে-শয়ে বাচ্চা। ডাক্তার আছেন, নার্স আছেন। নেই শুধু চিকিৎসা। যে সে রোগ নয়। কর্কট-ক্যানসার। সেই ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদেরই চিকিৎসা জুটছে না  খাস মহানগরের নামজাদা সরকারি NRS মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই স্বাস্থ্যে এই চমকে ওঠা অস্বাস্থ্যের ছবি। মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে দিন গুনছে রক্তশূন্য শৈশব।

শিশু বিভাগের কর্তারা যদিও বলছেন, ‘আমরা আপ্রাণ লড়ছি। মারণ রোগে আক্রান্ত শিশুদের বাঁচিয়ে রাখতে। তবে বেডের আকাল। সেই কারণে বারংবার একরত্তি রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে হেমাটোলজি বিভাগই।’

দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ। বহু পুরনো পন্থা চলতেই থাকে NRS এর মত ‘তকমাধারি’ হাসপাতালের। ওই হাসপাতালের শিশুবিভাগের পিকু ওয়ার্ড অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। তবুও কেন বেড খালি? কেন আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না শিশুদের? এই প্রশ্নটাই তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা।

প্রশ্ন কিন্তু এখানেই শেষ নয়। প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জের হতদরিদ্র পরিবারগুলি কেন কলকাতায় এসে হতাশ হচ্ছেন বারবার? শিশুর চিকিৎসার অধিকার এবং সেই অধিকারটুকু সন্তানকে পাইয়ে দেওয়া-এই দায় তো শুধু অভিভাবকের নয়। এই দায় তো সমাজের, প্রশাসনেরও বটে। তবে কেন NSR-এর মত হাসপাতাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অসহায় বাবা-মায়েদের। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সন্তান। জুটছে না রক্ত। যে কোনও সময়ে ঘটে যেতে পারে বড় অঘটন। বেঘোরে চলে যেতে পারে কচি একটা প্রাণ। তাই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের নাকি পরামর্শ বাইরে বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা হোক।

নন্দকুমারের বাসিন্দা শক্তিপদ দাস। তিনি পেশায় দিনমজুর। দেড় বছরের সন্তান শুভদ্বীপকে ২০ মে ভর্তি করেছেন এনআরএস-এ। এখনো অধরা চিকিৎসা। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার কোথা থেকে জোটাবে বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিংহোমের টাকা? শক্তিপদবাবু বলেন, ‘জানি না আদৌ এখানে চিকিৎসা জুটবে কি না। আর অন্য কোনও প্রাইভেট হাসপাতালে যে ভর্তি করাবো সেই সামর্থ্য নেই আমাদের।’

আর এক বাসিন্দা আমডাঙার গুরুপদ দাস। তাঁরও ওই একই হাল। সাড়ে তিন বছরের নাতি অরিত্র আপাতত ভর্তি শিশু বিভাগে। রক্তের ক্যান্সারে ভুগছে দুধের শিশু, তাও ভর্তি নেয়নি হেমাটোলজি বিভাগ। অগত্যা বিনা চিকিৎসায় দিন গোনা।