দমদম: দক্ষিণ দমদমের দাগা কলোনি। এলাকায় ঢুকলেই চোখ আটকে যাবে ঝাঁ চকচকে একটি সাদা বাড়িতে। বাড়ি বলা ভুল এক কথায় অট্টালিকা। বলা ভাল দমদমের ‘হোয়াইট হাউজ’। শ্বেত শুভ্র বাড়িটির শোভা আরও বাড়িয়েছে সামনে থাকা একটি নারী মূর্তি। তিন তলা বাড়িটির মাঝখানে স্থান পেয়েছে এটি। অট্টালিকাটির নাম ‘দেবান্তরা’। বিরোধীদের মতে, বিলাসবহুল আবাসনটি তৈরি করতে প্রায় ১০ কোটির মতো খরচ হয়েছে। এই অট্টলিকার মালিক হচ্ছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই বছর শাসক দলের হয়ে টিকিট মেলেনি। তাই দাঁড়িয়েছিলেন নির্দলে। তারপরও বিপুল ভোট পেয়ে ফের কাউন্সিলর দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেবাশীষের সম্পত্তির ফিরিস্তি
সাম্প্রতিক, তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-নেত্রীদের বিলাস বহুল বাড়ি সামাজিক মাধ্যমে বেশ চর্চিত হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অসৎ উপায়ে নাকি এই সকল নেতারা অট্টালিকা সম বাড়িগুলি তৈরি করেছেন। আর এই অভিযোগের বাক্যবাণে বিদ্ধ কাউন্সিলর দেবাশীষ বাবুও। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, এই অট্টলিকা না কি সৎ উপায়ে তৈরি করেননি। শুধু দাগা কলোনির এই বাড়ি নয়, পুরপিতার নামে পাঁচতলা বিলাস বহুল একটি বিয়ে বাড়িও রয়েছে। নাম ‘নোলক’। বিরোধীদের দাবি, ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে বেআইনি জমি দখল করে বিনা প্ল্যান ছাড়াই ‘নোলক’ তৈরি হয়েছে।
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, শুধু কলকাতায় নয়, বীরভূমের শান্তিনিকেতনে বেনামে আরও কয়েক কোটির অত্যাধুনিক বাগান বাড়ি রয়েছে। মল রোডে অত্যাধুনিক ঝাঁ চকচকে আরও একটি বাড়ি রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ
পুরসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় সম্পত্তির খতিয়ান দিয়েছেন দেবাশীষবাবু। গত অর্থবর্ষে তাঁর আয় ১৫ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কে রয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি। স্থাবর সম্পত্তিও এক কোটি টাকার বেশি।
প্রাসাদোপম বাড়ি নিয়ে দেবাশীষ প্রতিক্রিয়া:
দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘দুই কাঠারও কম জমির মধ্যে আমার বাড়িটি তৈরি হয়েছে। এই জমিটি আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া। দক্ষিণ দমদম পৌরসভায় এর সমস্থ কিছু রেকর্ড রয়েছে। যাদের একর জমিতে বাড়ি গড়ে উঠেছে তাদের বেলায় কী বলব? আমার নিজের বাড়ি তাও ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে করা। এখনও শোধ করে উঠতে পারিনি। পরে হয়ত আমার মেয়েকে শোধ করতে হবে। আর সৎ উপায়ে বাড়িটি তৈরি হয়েছে বলেই ৯৪ শতাংশ ভোটে জিতে আমি আবারও কাউন্সিলর হয়েছি। এই সমস্থটাই অপপ্রচার বিরোধীদের।’
কে এই দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রাত্য বসু ঘনিষ্ঠ এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূলের নেতা দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ওয়ার্ড থেকে টিকিট পাননি পুরভোটে লড়ার। দুটি তালিকার কোনওটিতেই নাম ছিল না দেবাশীষবাবুর। তাঁর বদলে টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁরই এক সহযোগী অজয় মুখোপাধ্যায়কে। তখনই নির্দলে নাম লেখান তিনি। এরপর প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন তিনি।
সূত্রের খবর, মাধ্যমিক পাশ এই রাজনীতিবীদ প্রথম জীবনে ট্যাক্সি চালক ছিলেন। সেই সময় কংগ্রেস করতেন। পরে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছেন সৈনিক হয়ে।
২০১৫ সালে প্রথম দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর হয়ে পৌরপ্রধান পারিষদ হন তিনি। অভিযোগ, ছয় বছরে কয়েকশো কোটি টাকা তছরূপের জেরে এইবার পুরভোটের টিকিট পাননি তিনি। এরপরই নির্দলে যোগ দেন।
বিজেপি প্রার্থী বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন, “বাড়িটি দেখে আমি চমৎকৃত হয়েছি। একজন পুরসভার কাউন্সিলর ঠিক কত টাকা ভাতা পান যে এমন বাড়ি তৈরি হতে পারে? (জেলার ক্ষেত্রে কাউন্সিলর ভাতা ৫ হাজার টাকা) আমি তো কিছুই করতে পারলাম না জীবনে। তবে গত দশ-এগারো বছরে শাসকদলের নেতাদের যা হিসেব পাওয়া যাচ্ছে তাতে চমৎকৃত হতেই হয়।”
আরও পড়ুন: Bachchu Hansda: মন্ত্রী হয়েছিলেন একবার, বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি দেখলে চমকে যাবেন আপনিও
আরও পড়ুন: Modasser Hossain: ‘কাটা তেলের’ ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার ‘লাভ হাউসের’ খরচ জানেন?