Lakshmir Bhandar: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে মুসলিম মহিলাদের ১০০০ টাকার দাবি, শাসকের ‘কুক্ষিগত’ ৩০ শতাংশ কি দোলাচলে?
Lakshmir Bhandar: এবার তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের মতো, রাজ্যের মুসলিম মহিলাদেরও ৫০০ টাকার বদলে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব উঠল বিধানসভায়। প্রস্তাব তুললেন খোদ তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর। আর এই প্রস্তাব বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের শাসক শিবিরকে।
কলকাতা: রাজ্যে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের একটি বড় শক্তি। মহিলাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্পও এনেছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের মাসে ১০০০ টাকা ও অন্য মহিলাদের মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। কিন্তু এবার তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের মতো, রাজ্যের মুসলিম মহিলাদেরও ৫০০ টাকার বদলে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব উঠল বিধানসভায়। প্রস্তাব তুললেন খোদ তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর। আর এই প্রস্তাব বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের শাসক শিবিরকে।
সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে শাসকের অস্বস্তি?
বিরোধীরা বার বার অভিযোগ করে থাকেন, রাজ্যের শাসক দল বছরের পর বছর ধরে সংখ্যালঘুদের তোষণ করে আসছেন। সংখ্যালঘুদের ‘ভুল বুঝিয়ে’ ৩০ শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূল নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল বিধায়কের এই প্রস্তাবের পর কি কোনও পদক্ষেপ করবে তৃণমূল? কারণ সামনেই লোকসভার ভোট। আর এই প্রস্তাব কার্যকর না হলে কি লোকসভার আগে ফ্যাসাদে পড়বে তৃণমূল শিবির? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ, যে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের উপর এতদিন তৃণমূলের একচ্ছত্র ‘অধিকার’ ছিল, এখন সেখানে একটু একটু করে ভাগ বসাতে শুরু করেছে নওশাদ সিদ্দিকীদের আইএসএফ।
ধর্মের ভিত্তিতে ভাতা কি একেবারে নতুন?
হুমায়ুন কবীর এদিন বিধানসভায় বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু মহিলাদের আর্থিকভাবে অবস্থা ভাল নয়।’ প্রস্তাবের পরই বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ধর্মের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা করা যায় না। তবে ধর্মের ভিত্তিতে ভাতা দেওয়ার নির্দশন যে অতীতে রয়েছে, সেই কথাও আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বিরোধীদের কেউ কেউ। এই রাজ্য সরকারই যে পুরোহিত ভাতা, মোয়াজ্জেম ভাতা চালু করেছে, সেই কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিরোধীদের একাংশ।
সংখ্যালঘু মহিলারা আজও পিছিয়ে, হুমায়ুনের পাশেই নওশাদ
ডেবরার তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও। নওশাদ বলছেন, ‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে মুসলিমদের অনেক কিছু দেবে বলেছিল। বলেছিল, সংখ্যালঘুদের আমূল পরিবর্তন হবে। অনেক কথা বলা হয়েছিল। আজ ১২ বছর হয়ে গেল, কোথায় পরিবর্তন? হুমায়ুন কবীর যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়। সংখ্যালঘুর বাড়ির মহিলারাও তো পিছিয়ে আছেন। তাঁরা কি ১০০০ টাকা করে পেতে পারেন না? প্রশ্নটার যথার্থতা আছে।’
নওশাদের বক্তব্য, তৃণমূল সংখ্যালঘু তোষণের নামে সংখ্যালঘুদের শোষণ করেছে। গত ১২ বছরে সংখ্যালঘুদের কী উন্নয়ন হয়েছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছেন আইএসএফ নেতা। হুমায়ুনের পাশে দাঁড়িয়ে নওশাদ বলছেন, ‘উনি শিক্ষিত মানুষ। প্রাক্তন আইপিএস। তিনি সঠিক বিষয়টিকে সঠিক ভাবেই হয়ত দেখতে পছন্দ করেন। তাই মুখ খুলেছেন।’
তৃণমূল জমানায় ‘প্রতারিত’ সংখ্যালঘুরা, সুর চড়াচ্ছে বিজেপি
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘সংখ্যালঘুরা গত ১১ বছরে আরও বেশি করে প্রতারিত হয়েছেন। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছেন।’ সেই কারণেই আজকের দিনে সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ১০০০ টাকার দাবি উঠছে বলে মনে করছেন তিনি। যদিও ধর্মের উপর যে এমন পদক্ষেপ করা যায় না, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি মুখপাত্রের অভিযোগ, বামফ্রন্টের দেখানো পথেই তৃণমূল সরকার ধর্মের ভিত্তিতে তোষণ শুরু করেছে।
হুমায়ুনের প্রস্তাবে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, বলছে বামেরাও
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলছেন, ‘ছিটেফোঁটা’ কিছু দিয়ে শাসক দল ভোটব্যাঙ্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করছে। সুজনের বক্তব্য, কোভিডের সময়ে ২০০০ টাকা করে দেওয়ার জন্য সওয়াল তুলেছিল বামেরা। কিন্তু রাজ্য সরকার তা করেনি বলেই দাবি সুজনের। হুমায়ুন কবীর আজ যে প্রস্তাব তুলেছেন, তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বলেই মনে করছেন সুজন।
না পোষালে দল ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ কুণালের
ডেবরার শাসক বিধায়কের এমন মন্তব্য যে বেশ অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসকের। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তো যেমন ঠারেঠোরে বুঝিয়েই দিলেন, না পোষালে দল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। বলছেন, ‘যেখানে গেলে সুবিধা হয়, সেখানে গিয়ে এইসব কথা বললেই ভাল হয়। এত দুঃখ নিয়ে, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে এত কষ্ট করতে তো কেউ বলেননি।’
তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি মোশারফ হোসেনও বিধায়কের উল্টো পথেই হেঁটেছেন। ডেবরার বিধায়কের বক্তব্যের সঙ্গে একেবারেই সহমত নন তিনি। বলছেন, ‘মহিলাদের আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য একাধিক নারী উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়ন প্রকল্প সৃষ্টি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
যে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের উপর এতদিন তৃণমূলের একক রাজত্ব ছিল, এখন সেখানে ভাগ বসাতে শুরু করেছে আইএসএফ। এরই মধ্যে মুসলিম মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়ানোর দাবি তৃণমূল বিধায়কের। এই প্রস্তাব যদি শেষ পর্যন্ত কার্যকর না হয়, তাহলে কি শাসকের ৩০ শতাংশ ভোটব্যাঙ্কের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে? বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। সেখানে কি এর প্রভাব পড়বে? এমন প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্য়েই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।