Dilip Ghosh: ‘ঠিক হয়েছে… ওদের এটা সইতেই হবে’, বিধানসভায় তুমুল অশান্তির কারণ ব্যাখ্যা দিলীপের
Dilip Ghosh: "পার্লামেন্টে গিয়ে যাঁরা বিশৃঙ্খলা করেন, মার্শালের সঙ্গে মারামারি করা, কাগজ ছু়ড়তেন, তাঁরা আজকে আমাদের গণতন্ত্র শেখাচ্ছেন।"
কলকাতা: “যে রাজ্যে বিরোধীদের বলার জায়গা নেই, সেখানে বিধানসভাতেই বলতে হয়।” সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের আগে বিজেপির বিক্ষোভের ঘটনায় বললেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার নিউটাউনে প্রাতঃভ্রমণের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। যেখানে হিংসা অত্যাচার অভিযোগ শোনার কেউ নেই, যেখানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে. গণতন্ত্রে বিরোধীদের কোনও স্থান নেই, বলার জায়গা নেই, সেখানে বিধানসভায় বলতে হবে। যাঁরা বলছেন বিশৃঙ্খলা, আমি বলব বিশৃঙ্খলার কী আছে! দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়েছেন। তাতে কী আছে?”
দিলীপের আরও সংযোজন, “স্লোগান দিয়েছেন, দাবি করেছেন, এটাই তো পদ্ধতি। যাঁরা এতদিন বিধানসভা, লোকসভা বন্ধ করতেন, তাঁরা বলছেন এটা অগণতান্ত্রিক। পার্লামেন্টে গিয়ে যাঁরা বিশৃঙ্খলা করেন, মার্শালের সঙ্গে মারামারি করা, কাগজ ছু়ড়তেন, তাঁরা আজকে আমাদের গণতন্ত্র শেখাচ্ছেন। এটা তাঁদেরকে সইতে হবে।”
সোমবার সকালে বিধানসভার চিত্রটা ঠিক কী রকম ছিল?
রাজ্যপালের ভাষণ শুরুর আগে থেকেই সকালে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। রাজ্যপাল সেসময় বাজেট ভাষণ পাঠ করার অপেক্ষা করছিলেন। তখনই বিজেপি বিধায়করা স্লোগান তোলেন, ‘‘ভারত মাতা কী জয়, ছাপ্পা ভোটের সরকার আর নেই দরকার।” এরইমধ্যে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যপালের বক্তব্য সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সেটাই টেবিল করা হবে বলে জানান স্পিকার। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি না বলা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর ভাষণ টেবিল হতে পারে?
বিজেপি বিধায়করা তাঁদের বিক্ষোভ তখনও অব্যাহত রেখেছিলেন। সেসময় ভাষণ পাঠ না করেই নেমে যেতে উদ্যত হয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁকে বাধা দেন তৃণমূলের মহিলা বিধায়করা। তাঁরা প্রত্যেকেই রাজ্যপালকে ঘিরে রাখেন। তৃণমূলের মহিলা বিধায়করাও পাল্টা স্নোগান দিতে থাকেন। সে সময় বক্তৃতা না পড়েই বসে পড়েন রাজ্যপাল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে তাঁর আসন ছেড়ে দিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে গিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেন। এদিকে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর বিরোধীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যপালকে অন্তত দু লাইন ভাষণ পাঠের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও দমেননি বিজেপি বিধায়করা।
বিজেপির বিক্ষোভের মাঝেই উঠে ভাষণ পাঠ শুরু করেন রাজ্যপাল। ভাষণ শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যায়। প্রথম ও শেষ লাইন পাঠ করেন রাজ্যপাল। বেলা ৩.০৭ মিনিটে রাজ্যপাল বিধানসভা ছাড়েন। তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে হাত জোড় করে প্রণাম করতেও দেখা যায়। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা বিজেপির পরিকল্পিত বিক্ষোভ।’
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য সোমবারই বিধানসভায় যুক্তি দেন, রাজ্যপালের বক্তৃতার কপিতে নেই পুরভোটের ভোটলুটের কথা, নেই কর্মসংস্থানের কথা, নেই জমি নীতির উল্লেখ। আসলে রাজ্য় সরকার যা চায়, সেটাই রাজ্যপালকে দিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উল্টে রাজ্যপালকে তৃণমূলের বিধায়করাই শারীরিক নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।