মঙ্গলবার বিচারপতির পদ থেকে দিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত রবিবার আচমকাই ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আনেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন এই বিচারপতি। একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। এবার বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেনতিনি। আজ সকাল এগারোটা নাগাদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হাইকোর্টের ঢোকেন। তারপরই পদত্যাগ করেন পদ থেকে।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ মানুষকে বলব শিরদাঁড়া সোজা করুন। আপনার বিবেক যেখানে বলছে এটা আমি পারি না। সেটা করবেন না। না বলে জানিয়ে দিন এই কাজে সমর্থন নেই।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমার মনে হচ্ছে তৃণমূল যেভাবে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। যেভাবে ভাঙছে। ২০০৯ সালে সিপিএম-এর যেই হাল হয়েছিল সেইটাই হবে।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওনারা জানেন না কী করতে হয় আর কী করতে না হয়। ওনাদের পারিবারিক শিক্ষায় হয়ত কোনও ফাঁকি আছেন। কিছু দালাল কালো কোর্ট গায়ে দিয়ে নেমে পড়েছিল।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কাউকেই মনে করব না।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তের রাজনীতি তৃণমূল হল দুষ্কৃতীদের দল। যাত্রা দল। ওদের যাত্রা পালার নাম ‘মা মাটি মানুষ’। এখানে অনেক চরিত্র আছে। পুরো দুর্নীতি গ্রস্ত দল। অনেক ভাল লোক আছেন। আর বেরতে পারছেন না। কালকেই একজন অভিযোগ করেছেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে চায়নি তাই করেননি। উল্টে তালপাতার সিপাহি বলে দিলেন, আদালতের জন্য নাকি গ্রেফতার করা যায়নি। উনি বোঝেন আইন। পেটে বোমা মারলে আইন বেরবে?”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “উনি কি ভবিষ্যত বাণী করতে শুরু করেছেন? আগে উনি টিকিট পেয়ে দেখান।”
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি প্রকৃত রাজনীতিবিদ বলে মনে করি। কোনও তালপাতার সেপাইকে আমি দুষ্কৃতীর বেশি অন্য সম্মান দিতে পারব না। যাঁকে ওনারা সেনাপতি বলছেন। আমি নাম বলব না। ওনার নামটাকেই আমি কুকথা বলে মনে করি।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি কি ভয় পালিয়ে যাব? আমি দেখিয়ে দেব তাঁর দুর্বৃত্ত দলকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়। ডায়মন্ড হারবারে তাঁর দুর্বৃত্ত দল রয়েছে। তাঁকে আমি লক্ষ-লক্ষ ভোটে হারাব।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ মার্চ যোগ দেব বিজেপি-তে। তবে লড়ব কী লড়ব না বিজেপির উচ্চ-নেতৃত্ব জানাবেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নারদকাণ্ড চক্রান্ত। একটা লোক আছে যাঁকে তৃণমূলের নেতারা তালপাতার সিপাহি বলে ডাকেন। এটা কোনও স্টিং অপারেশন নয়। একজন ভদ্রলোককে ব্যবহার করে এই চক্রান্ত করা হয়। ইডি এই তদন্ত শুরু করেছে।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এখন যাঁরা বিচারপতিরা আছেন তাঁরা তাঁদের মতো তদন্ত করবেন। আমি ওনাদের মতো তদন্ত করিনি। আমি একটা পদ্ধতিতে চলছিলাম।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অন্যান্যদের মতো উনিও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “দুর্নীতির উপায় না হলেও স্বচ্ছতার অভাব ছিল। যেটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ঠিক করে দিয়েছেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গত পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে আমি বিজেপি-র সঙ্গে এবং বিজেপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই আমি সাত দিন আদালতে বসিনি। কেউ যাতে অভিযোগ করতে না পারে যে আপনি বিজেপি-র সঙ্গে যোগ রাখছেন। অথচ আদলতে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “উনি কর্মঠ। ভাল মানুষ। চেষ্টা করেন আমাদের দেশের জন্য কিছু করার”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নাহ এই রকম সন্দেশখালির মতো ঘটনা বহু জেলার বহু গ্রামে আছে। আমি শুনেছি বীরভূমে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা না হলে ভোট করতে দেবে না তৃণমূল।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই সব পাগলের প্রলাপ।এদের কিছু টিকিওয়ালা মুখপাত্র আছে। তাদের আইনের প্রশ্ন করলে দেখা যাবে ধেরিয়ে বসে আছে।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,”বিচারকের আসনে নিশ্চয়ই করা যায়। যখন একটা বিরোধ পিটিশনের আকারে আসে। তার বাইরে অনেক বিরোধ-দুর্নীতি থাকে আদালতে আসে না। আজই তিনজন উকিল আমার সঙ্গে দেখা করতে আছেন। তাঁরা আমায় কথা দিয়েছেন একশো দিনের কাজের দুর্নীতির বহু নথি আমায় দেবেন। আমি জানতে পেরেছি, একজন তাঁর বাবার ছবি তুলে দিয়ে সেখানে মায়ের ছবির পাশে নিজের ছবি বসিয়েছেন। তারপর মায়ের সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে নিজেকে মায়ের স্বামী বলে দাবি করছেন। এই সব তথ্য আমি পাব।”
বিজেপি নেতা বললেন, “অবসর আমার সঙ্গে অন্য দলের মিলমিশ হল না। যেমন সিপিএম। আমি ঈশ্বর বিশ্বাস করি। আমি ধর্ম পালন করি। ওনারা করেন না। ভিতর ভিতর করি। আর কংগ্রেসে পরিবারের জমিদারি। অথচ জয়রাম রমেশ। যিনি আইআইটির ছাত্র। উনি ঘুরে-ঘুরে বেড়ান। পদ পাবেন না। কাজও করতে পারবে না। এই দলে পারিবারিক জমিদারি রয়েছে। আমি অতুল্য ঘোষের বই পড়েছি। যেখানে কংগ্রেস দলের চরিত্র সম্পর্কে তিনি লিখে গিয়েছেন।”
বিচারপতি প্রথমে কথা দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের স্ট্যাচুর সামনে সাংবাদিক বৈঠক করবেন। কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করেন। তাতে কী! হাইকোর্টে সূর্য সেনের মুর্তির নীচে অজস্র ভীড়। সুদুর আলিপুরদুয়ার থেকে অভিনন্দন জানাতে এসেছেন একজন। উপচে পড়া ভীড়ে নবীন আইনজীবীদেরও। আদর্শকে সামনে দেখব বলে এসেছি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পদত্যাগ করবেন, এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার পদত্যাগ করবেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে। এই খবর শুনে ‘বিস্মিত’ বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশবাবুকে বিভিন্ন সময় এজলাসে গুরু বলে স্বীকার করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই বিচারপতির এমন সিদ্ধান্ত অবাক করেছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকেও। বিকাশবাবু বলেন, “তিনি প্রবীণ, বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের বিবেচনার উপর দাঁড়িয়ে। আমিও বিস্মিত এই খবরটা শুনে।”
বিস্তারিত পড়ুন: ‘গুরু’ বিকাশরঞ্জন কী বলছেন বিচারপতি গাঙ্গুলির ইস্তফার কথা শুনে…
তৃণমূলের একাধিক নেতাকে বিভিন্ন সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। পাল্টা শাসকদলের পক্ষ থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে। বিচারপতির দাবি, কখনও বলা হয়েছে, মাঠে এসে লড়াই করতে। কখনও আবার বলা হয়েছে সামনে আসতে। রবিবার, সংবাদ মাধ্যমে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, এবার শাসকদলেরই ইচ্ছাপূরণ করতে চলেছেন তিনি।
বিস্তারিত পড়ুন: অভিষেককে ‘পলিটিশিয়ানই মনে করি না’, বললেন বিচারপতি গাঙ্গুলি
পদত্যাগ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির কাছে ইমেল মারফত পাঠিয়েছেন ইস্তফাপত্র। প্রধান বিচারপতির কাছেও গেলেন ইস্তফাপত্র নিয়ে