কলকাতা: বিনামূল্যে রাজ্যের প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে করোনার টিকা পৌঁছে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি লেটার হেডে তাঁর এই ‘ইচ্ছাপ্রকাশ’ প্রকাশ্য়ে আসতেই বাণ ধেয়ে এসেছে বিজেপির তরফে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সূক্ষ্ম ‘খুঁত’ বার করেছেন বাংলার বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। তাঁর প্রশ্ন, বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার কথা তো আগেই কেন্দ্র ঘোষণা করেছে, তবে রাজ্যের ভূমিকা কী? তবে, রাজনৈতিক কুশীলবদের একাংশের ব্যাখ্যা, একুশের ভোট যত কাছে এগোচ্ছে, টিকার (Corona Vaccine) রাজনীতিকরণের তরজাও আরও প্রকট হচ্ছে।
রবিবার অমিত মালব্য টুইটে লেখেন, “করোনার মোকাবিলা করতে পিসি এক্কেবারেই বিপর্যস্ত। চিকিৎসক মহল থেকে শুরু করে পুলিস প্রশাসন সকলেই তাঁর উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এখন কেন্দ্র যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩ কোটি প্রথম সারির যোদ্ধাদের বিনামূল্য ভ্যাক্সিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রেডিট নেওয়ার জন্য দৌঁড়াচ্ছেন।”
Pishi was a disaster when it came to managing Covid. From doctors to policemen, everyone protested against Chief Minister’s apathy.
But now that the center has announced free priority vaccination for 3 crore frontline workers across the country, Pishi is rushing to take credit. pic.twitter.com/TMRBXan2XN
— Amit Malviya (@amitmalviya) January 10, 2021
রাজ্যের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এই বার্তা আগেই পৌঁছেছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই ফোনে মেসেজ ঢুকছে রাজ্য ও কলকাতা পুলিসের কর্মীদেরও। বিনামূল্যে করোনার টিকা দেওয়া হবে তাঁদের। প্রথম সারির যোদ্ধাদের কুর্নিশ জানিয়ে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রী যে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন, এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
এক্ষেত্রে নবান্নের একাংশের ব্যাখ্যা, এখানে তো কোথাও বলা হচ্ছে না বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রের বিষয় এটি। তবে দিল্লি থেকে টিকা কলকাতা এবং কলকাতা থেকে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে টিকা বিনামূল্য় পৌঁছে দেওয়ার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনের যুক্তি, আয়ুষ্মান ভারতের ক্ষেত্রে কেন্দ্র বলেছিল ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০ কোটিকে এর সুবিধা দেওয়া হবে। সেখানে বাংলার ১০ কোটি মানুষ অর্থাৎ সবাইকে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই টিকাকরণের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার কোথাও লিখিতভাবে বলেনি যে সবাইকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কেন্দ্র বলছে, প্রথম সারির যোদ্ধা, পঞ্চাশোর্ধ্বদের দেবে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সবাইকে বিনামূল্যে দেওয়ার কথা বলছেন, পক্ষপাতিত্ব করছে কেন্দ্রই।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য ব্যাপারটি সরাসরি ‘ভোটের রাজনীতি’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “দিদি অনেক আগেই একথা জানিয়েছিলেন। তখন বাজারে কেউ ছিল না। কেন্দ্র আমাদের কপি করে। আমরা নই।” তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর কথায় স্পষ্ট, প্রথম দফায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারির যোদ্ধাদের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দিতে হবে। কিন্তু তা পরের দফাগুলিতেও বিনামূল্যে দেওয়া হবে কিনা, স্পষ্ট নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান প্রত্যেকেই যাতে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন পান।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়াটা রাষ্ট্র ও রাজ্যের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে কৃতিত্ব নেওয়ার কোনও বিষয় নেই।” উল্লেখ্য, কেন্দ্র টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেভাবে অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করেছে তা হল, প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, সাফাইকর্মী, পুরকর্মী, জেলকর্মী, হোমগার্ড, সিভিক ভলেন্টিয়ার, রেভিনিউ-কর্মীরা। এরপর কোমর্ডিবিটি রোগীরা অর্থাৎ যাঁরা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: গরুপাচার কাণ্ডে জেলে যাবেন অভিষেক, ভবিষ্যদ্বাণী সৌমিত্রর
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠিতে সরাসরি বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা কোথাও বলা হয়নি। বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, তৃণমূলের একাংশ দাবি করছে, প্রত্যেক রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার পক্ষপাতী মমতা। প্রত্যেককে নিখরচায় টিকা দিতে গেলে খরচ হতে পারে আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, তার দিশা দেখাতে পাচ্ছেন না তাঁরা। অন্য দিকে ভ্য়াকসিন বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া নিয়েও থাকছে একাধিক প্রশ্ন।