৫ টাকায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর ফর্ম বিক্রি! অভিযোগ পেতেই কঠোর সিদ্ধান্ত নবান্নর
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই একাধিক জেলায় বেনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যা অস্বস্তি বাড়িয়েছে নবান্নের।
কলকাতা: দুয়ারে সরকার আসছে ১৬ অগস্ট থেকে। এ বারের কর্মসূচিতে লক্ষ্মীর ভান্ডার ও স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো প্রকল্পগুলোকে পাখির চোখ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। কিন্তু দুয়ারে সরকার আসা ও লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই একাধিক জেলায় বেনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যা অস্বস্তি বাড়িয়েছে নবান্নের। পুরো বিষয়টি নিয়ে এ বার আরও শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে চাইছে সরকার। সূত্রের খবর এমনটাই।
বৃহস্পতিবারই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, একমাত্র দুয়ারে সরকারে লক্ষ্মীর ভান্ডার কাউন্টারে এই প্রকল্পে আবেদন করার ফর্ম পাওয়া যাবে। এ ব্যতীত কোথাও লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম বিলি করা যাবে না। কেউ যদি তেমনটা করেন তবে সেটা বেআইনি বলে গণ্য হবে এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু হওয়ার দিন কয়েক বাকি থাকতেই বিভিন্ন অসাধু চক্র মুনাফা কামানোর উদ্দেশ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ জানানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে টোল-ফ্রি নম্বর চালু করেছিলেন, তাতে ঝাঁকে-ঝাঁকে ফোন আসছে। অভিযোগ, বিভিন্ন জেলার পুরসভার কাউন্সিলররা নাকি ৫ টাকার বিনিময়ে ফর্ম বিক্রি করছেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের। একাধিক পার্টি অফিস থেকেও একই কাজ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে । এই অভিযোগ আসার পরই কঠোর অবস্থান নিয়েছে নবান্ন।
জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে। অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। কোনও ভাবে যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তবে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করার নির্দেশও দিয়েছে নবান্ন। কোনও ভাবেই সরকার যাতে নতুন করে অস্বস্তিতে না পড়ে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
একনজরে দেখে নিন লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে লক্ষ্মীবারে কী কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী…
মমতা জানান, “পুরোপুরি বিনামূল্যে এই প্রকল্পে আবেদন জানানোর ফর্ম পাওয়া যাবে।” কী ভাবে আবেদন জানাতে হবে? মমতা বলেন, “দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কাউন্টার থাকবে, সবার প্রথম সেখানে যেতে হবে। সেখানে গেলেই একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেই ফর্মে একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে। সেই নম্বরের রেকর্ড সরকারের কাছেও থাকবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই ফর্ম কোনও ভাবে জেরক্স বা ডুপ্লিকেট করা যাবে না। এই ফর্ম ছাড়া অন্য কোনও ফর্ম নেওয়াও হবে না। কেউ যাতে এই ফর্মের অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ফর্মটা পাওয়ার পর আপনারা ওখানেই ফর্মটা ফিলআপ করে জমা দেবেন। মনে রাখবেন, ফর্মের সঙ্গেই কম্পিউটার জেনারেটেড ইউনিক নম্বরটা থাকবে। এটার সঙ্গে আধার কার্ডও লিঙ্ক করে দেওয়া হবে। এই নম্বরটাই ফর্ম ফিলাপের জন্য স্বীকার্য হবে। ঘুরপথে যদি কেউ অন্যভাবে ফর্ম জোগাড় করে তা জমা দেওয়ার চেষ্টা করে, সেটা কিন্তু মেনে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র দুয়ারে সরকার শিবির থেকেই ফর্ম নিতে হবে।”
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কর জমা দেওয়ার কোনও ধরনের বাধ্যবাধকতাও নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে গোটা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনও বেনিয়মের অভিযোগ থাকে, তার জন্য পৃথক হেল্পলাইন নম্বরও চালু করেছে রাজ্য। এই নম্বরটি সোজা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ১০৭০ অথবা ২২১৪ ৩৫২৬- এই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানালেই সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। আরও পড়ুন: মুচিপাড়া কাণ্ড: জামিন অধরা, ধৃত বিজেপি নেতা সজলের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ আদালতের