ভাগীদারিই লক্ষ্য, তোষণ নয়। তাই কেউ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়, তবেই আইএসএফ পাল্টা হাত বাড়াবে। ব্রিগেডের মঞ্চে সকলকে এক প্রকার চমকে দিয়ে কংগ্রেসকে এমনই বার্তা দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। ‘একমাস পর দিদির বাংলা হাতছাড়া হবে’ বার্তা আব্বাসের।
দেশ বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা এক হয়েছি। আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। মঞ্চে বললেন দেবলীনা হেমব্রম। তিনি বলেন, “যারা সোনার বাংলা তৈরির কথা বলছে তারা বিজেপি থেকে তৃণমূল আর তৃণমূল থেকে বিজেপি করছে। ভোট আসছে বলে মানুষের কাছে যাচ্ছে। কারণ কাটমানি খাবে। ওরা ভুল বোঝাবে আর আমরা বুঝব না। ধর্মের নামে নয়, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে লড়াই করব। আমাদের যা দরকার, অন্যান্য মানুষেরও তাই দরকার। আমাদের ছাত্র যুবদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। আমাদেরকে টোপ খাওয়াচ্ছে। ভেক করছে বিজেপি তৃণমূল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের এলাকাতে পদ্মফুল ফুটতে দেওয়া যাবে না।”
সিবিআই অভিযান নিয়ে সেলিমের বক্তব্য, “এবার রাজীব কুমারকে ধরতে আসছে না। থুড়ি, নেতার ঘরে আসছে। চিটফাণ্ডে যে টাকা নিয়েছিল সে চলে গিয়েছে বিজেপিতে। সে শান্তিনিকেতন নামের বাড়ি হোক বা অন্য কোনও বাড়ি, সব বেআইনি সম্পত্তি নিলাম করে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেব।”
পুলিশ কে বলেছি, উর্দি যখন পরবে, উর্দির সম্মান রাখবে। অনেক ভূত পেত্নি আছে। ভূত তাড়াতে হবে। আমরা ভয় পাই না। সর্ষের মধ্যেই ভূত। বুথ থেকেই ভূত তাড়াব। ভোটের তাপ বাড়তেই আইসক্রিমের মতো গলে যাচ্ছে তৃণমূল। চৈত্রের গরমে তৃণমূল গলে জল হোক, আমরা বিজেপিকে বাষ্প করে দেব: সেলিম
একজন বলছেন খেলা হবে, অন্যজন গোটা স্টেডিয়ামটাই দখল করে নিল। দিদি-মোদী দু’জনকেই নকআউট করতে হবে। ব্রিগেডের ময়দানে এভাবেই মমতা-মোদীকে এক যোগে বিঁধলেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন,” বসন্ত এসে গেছে। অশোক, পলাশ কিংশুকের সময়। লাল ফুটবেই। মইদুলকে খুন করেছ। সুদীপ্তকে খুন করেছ। কিন্তু লাল ঝান্ডাকে খুন করা যাবে না। গত ১০ বছরে ২৫০ কমরেড খুন হয়েছে। যে বলেছিল লাল কাপড়ের টুকরো থাকবে না, সে এখন তৃণমূলের পতাকাকে ন্যাকরা করে অমিত শাহের জুতো পালিশ করতে গিয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষ নিজের হাতে ট্রাইসাইকেল চালিয়ে এসেছে। এখানে আসতে বিজেপির চার্টার্ড প্লেন লাগে না।”
বাংলার মাটি আন্দোলনের মাটি। বাংলা থেকেই সমাজ সংস্কারের আন্দোলন হবে। ব্রিগেডে বললেন ছত্তীশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। একদিকে দিদি, অন্যদিকে মোদী। একজনের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে হবে, অন্যজনের হাত থেকে দেশকে, আহ্বান বাঘেলের। তিনি বলেন, “বাংলায় আসা আমার কাছে একটা তীর্থে আসার মতো। এখান থেকেই বিপ্লবের শুরু। কিছুদিন আগে দাড়ি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নেতাজির জন্মদিন পরাক্রম দিবস নয়। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন। বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা দেশ আগামিকাল তাই করে। সংযুক্ত মোর্চাকে বিশ্বাস করুন। আগে গোরাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, এবার লড়তে হবে চোরেদের বিরুদ্ধে।”
বাংলা বাঁচাতে জোটকে জেতানোর ডাক ডি রাজার। তিনি বলেন, বিজেপি, তৃণমূল সবই এক। এদের সরিয়ে জোটকে ক্ষমতায় আনতে হবে। দেশ ও রাজ্যের সামনে এখন অনেক চ্য়ালেঞ্জ।
ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ দেখতে পাবেন। ব্রিগেডের মঞ্চেও আরও একবার সে কথা শোনা গেল সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা সীতারাম ইয়েচুরির গলায়। তিনি বলেন,”যদি মমতা ভাজপার সঙ্গে সমঝোতা করেন, তবে তাতে অবাক হবেন না। এটাই ওদের সংস্কার।” ইয়েচুরির কথায়, সেক্যুলার মোর্চার হাত ধরে এ রাজ্যে পরিবর্তন হবে। টাকার খেলা খেলে কোনও কিছুই আটকানো যাবে না। এই মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়ে ইয়েচুরি বলেন, “বিজেপি তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। নিজের নামে ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানিয়ে নিলেন। কৃষকদের জন্য আলাদা আর বড়লোকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। ওরা জানে না ‘হম’ শব্দে হ মানে হিন্দু ম মানে মুসলমান।”
ভাগীদারিই লক্ষ্য, তোষণ নয়। তাই কেউ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়, তবেই আইএসএফ পাল্টা হাত বাড়াবে। ব্রিগেডের মঞ্চে সকলকে এক প্রকার চমকে দিয়ে কংগ্রেসকে এমনই বার্তা দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। একইসঙ্গে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের প্রতি যে তিনি যথেষ্ট খুশি, তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করলেন সে বিষয়ও। ‘আমার প্রিয় দেশবাসী’, বক্তব্যের শুরুতেই আব্বাসের এই শব্দবন্ধ উচ্চারণে আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল দৃঢ়তা। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সকলেই এ দেশের মানুষ। এখানে কোনও বৈষম্য আইএসএফ মানবে না। আব্বাস বলেন, বামেরা যেখানে প্রার্থী দেবে রক্ত দিয়ে তাদের জেতাবে আইএসএফ। তাঁর কথায়, তৃণমূল হল বিজেপির বি টিম। মমতাকে ‘জিরো’ করে দেওয়ার ডাক দেন তিনি।
‘সংযুক্ত মোর্চা’য় সকলকে অভিনন্দনকে জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “এত বড় সভায় এই প্রথম বক্তব্য রাখছি। উত্তেজনা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস আছে। একদিকে তৃণমূল, একদিকে বিজেপি—ওদের যোগ্য জবাব দিতে হবে। দিদি-মোদীর রাজনৈতিক ডিএনএ এক। কোনও তফাৎ নেই।” টিএমসি থাকবে না , বিজেপি থাকবে না, থাকবে কেবল সংযুক্ত মোর্চা। বাংলায় রঙ বেরঙের পতাকা উড়ছে। বাংলায় পরিবর্তনের রামধনু, বললেন অধীর।
আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা খেলা হবে বলছি না। আমরা বলছি লড়াই করতে হবে। বাংলা কর্পোরেটতন্ত্র চায় না। বাংলা গণতন্ত্র চায়। সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদ। এই পুঁজিবাদ বাংলা চায় না। আমার মন কী বাত হল আমি প্রশ্ন করতে চাই। আজ প্রশ্ন করার সুষোগ নেই। প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে। মোদী ফ্যাসিবাদের প্রসার ঘটাচ্ছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছে আরএসএস। দেশের সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে।”
আসন ভাগাভাগি শেষ কথা নয়। ঐক্যই শেষ কথা বলবে। ব্রিগেডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এমনই বার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। একইসঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর কটাক্ষের সুর ‘ওদের গোটা দলটাই তো এখন বিজেপি হয়ে গিয়েছে।’ সূর্যকান্তের কথায়, “মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দিতে হবে। মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই। বন্ধ কারখানা খুলতে হবে। লেখাপড়া করে সব শেখায়নি। মানুষের থেকে শিখেছি। তাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে হবে। আমরা চাই কর্মসংস্থান বাড়ুক। এই বাংলায় দিন বদলাবে। আসন ভাগাভাগি নয়, মানুষের ঐক্যই শেষ কথা।”
রক্ষণশীলতার বেড়ি নয়, পক্ককেশীদের গুরুগম্ভীর ভাষণ নয়, এবার ব্রিগেডকে ঘিরে নতুন ছক। জেন ওয়াইয়ের নজর কাড়তে আধুনিক নাচ-গান, অর্ক মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাশ মব-এর গান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ে সায় দিয়েছে নেতৃত্ব। টুম্পার সোনার প্যারোডি নিয়েই অভিনব কায়দায় প্রচারে নেমেছে বামেদের ‘নেক্সট জেন’। খোদ সেই টুম্পাকেই দেখা গেল বামেদের ব্রিগেডে। না, এক ঝকঝকে কেতাদুরস্ত চেহারা। বর্ণময় চরিত্র। ব্রিগেডের সভায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে দেখালেন ‘মিডল ফিঙ্গার’।
ভোটের লড়াইয়ে একদিকে থাকবে তৃণমূল, বিজেপি। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ সহ সকল শক্তি। ব্রিগেডের সমাবেশ মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন বিমান বসু। তিনি বলেন, “আজকের পর থেকে একদিকে বিজেপি তৃণমূল, অন্যদিকে আমরা সবাই।” বাম-কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড সমাবেশকে ঐতিহাসিক বলে দাবি করে বিমান বসু বলেন, এই সমাবেশ অভূতপূর্ব।
বাম, কংগ্রেসদের ব্রিগেডগামী সমর্থকদের আটকানোর অভিযোগ। বিভিন্ন জেলায় গাড়ি আটকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। ডানকুনিতে পুলিশ একটি বাস আটকে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভোটের আগে এই ব্রিগেড সমাবেশ হাত-হাতুড়ির শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ। কিন্তু অদ্ভূতভাবে এদিন এখানে গান্ধী পরিবারের কোনও মুখই থাকছে না। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিস্তারিত পড়ুন: জোটের অ্যাসিড টেস্ট, তবু ব্রিগেডে নেই কংগ্রেসের কোনও ‘মেগাস্টার’
স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ব্রিগেডমুখী নবান্ন অভিযানে হারিয়ে যাওয়া দীপক পাঁজার স্ত্রী সরস্বতী পাঁজা। পাঁশকুড়া থেকে ট্রেনেই ব্রিগেডের জন্য রওনা দিয়েছেন তিনি। আশা, এদিনের সমাবেশ থেকে যদি স্বামীকে ফিরে পান।
বদলে গিয়েছে ব্রিগেডের হাওয়া। লাল নিশানের ফাঁকেই এখন ফৎ ফৎ করে ওড়ে কংগ্রেসের পতাকা, সঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের ঝান্ডাও। সেই বদলের হাওয়া ব্রিগেডের মেনুতেও।
বিস্তারিত পড়ুন: পেল্লাই ডেচকিতে ঠাসা বিরিয়ানি নিয়ে বাম সমর্থকেরা ব্রিগেডমুখী
আজ বামেদের ব্রিগেড। কাস্তে হাতুড়ির যৌথ সমাবেশে (Left Congress Brigade 2021) আজ থাকছেন আব্বাস সিদ্দিকিও। শহর আজ ঢেকেছে লাল ঝান্ডার মেলায়। কিন্তু সেই পতাকাও খুলতে হল আজ। কেন?
বিস্তারিত পড়ুন: রাস্তাতেই লাল ঝাণ্ডা খুলে ফেললেন ‘কমরেড’রা!
গন্তব্য ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। একুশের ভোটের আগে দল কী সঞ্জীবনী মন্ত্র শোনায়, কান সেদিকেই। সকাল সকাল কাপড়ে মুড়ি, পেঁয়াজ, লঙ্কা বেঁধে বাসে বাসে উঠে পড়লেন বছর সত্তরের সুষমা মালিক। শুধু সুষমাই নন মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ রবিবার কলকাতার ব্রিগেডমুখী।
অন্য বছর বামেদের ব্রিগেডে উড়ত শুধুই লাল ঝান্ডা। কিন্তু এবার তাতে হাতের থাবা। সিপিএম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গী আবার আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফও। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে তিন দলের তরফে কী বার্তা উঠে আসে, সেটাই দেখার।
সকাল থেকেই ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে বর্ধমান শহর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাম কর্মী সমর্থক ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা রওনা দিয়েছেন। সকাল থেকেই বাস, লরি, ম্যাটাডর চেপে ব্রিগেডমুখী সমর্থকরা।
রবিবারের ব্রিগেডে সশরীরে আসতে পারছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে আগের দিনই দলীয় কর্ম-সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তিনি। বুদ্ধবাবুর ‘মানসিক যন্ত্রণা’র কথা ফুটে উঠেছে সেই বার্তায়।
বিস্তারিত পড়ুন: ব্রিগেডে থাকতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
ভাগীদারিই লক্ষ্য, তোষণ নয়। তাই কেউ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়, তবেই আইএসএফ পাল্টা হাত বাড়াবে। ব্রিগেডের মঞ্চে সকলকে এক প্রকার চমকে দিয়ে কংগ্রেসকে এমনই বার্তা দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। ‘একমাস পর দিদির বাংলা হাতছাড়া হবে’ বার্তা আব্বাসের।
দেশ বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা এক হয়েছি। আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। মঞ্চে বললেন দেবলীনা হেমব্রম। তিনি বলেন, “যারা সোনার বাংলা তৈরির কথা বলছে তারা বিজেপি থেকে তৃণমূল আর তৃণমূল থেকে বিজেপি করছে। ভোট আসছে বলে মানুষের কাছে যাচ্ছে। কারণ কাটমানি খাবে। ওরা ভুল বোঝাবে আর আমরা বুঝব না। ধর্মের নামে নয়, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে লড়াই করব। আমাদের যা দরকার, অন্যান্য মানুষেরও তাই দরকার। আমাদের ছাত্র যুবদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। আমাদেরকে টোপ খাওয়াচ্ছে। ভেক করছে বিজেপি তৃণমূল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের এলাকাতে পদ্মফুল ফুটতে দেওয়া যাবে না।”
সিবিআই অভিযান নিয়ে সেলিমের বক্তব্য, “এবার রাজীব কুমারকে ধরতে আসছে না। থুড়ি, নেতার ঘরে আসছে। চিটফাণ্ডে যে টাকা নিয়েছিল সে চলে গিয়েছে বিজেপিতে। সে শান্তিনিকেতন নামের বাড়ি হোক বা অন্য কোনও বাড়ি, সব বেআইনি সম্পত্তি নিলাম করে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেব।”
পুলিশ কে বলেছি, উর্দি যখন পরবে, উর্দির সম্মান রাখবে। অনেক ভূত পেত্নি আছে। ভূত তাড়াতে হবে। আমরা ভয় পাই না। সর্ষের মধ্যেই ভূত। বুথ থেকেই ভূত তাড়াব। ভোটের তাপ বাড়তেই আইসক্রিমের মতো গলে যাচ্ছে তৃণমূল। চৈত্রের গরমে তৃণমূল গলে জল হোক, আমরা বিজেপিকে বাষ্প করে দেব: সেলিম
একজন বলছেন খেলা হবে, অন্যজন গোটা স্টেডিয়ামটাই দখল করে নিল। দিদি-মোদী দু’জনকেই নকআউট করতে হবে। ব্রিগেডের ময়দানে এভাবেই মমতা-মোদীকে এক যোগে বিঁধলেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন,” বসন্ত এসে গেছে। অশোক, পলাশ কিংশুকের সময়। লাল ফুটবেই। মইদুলকে খুন করেছ। সুদীপ্তকে খুন করেছ। কিন্তু লাল ঝান্ডাকে খুন করা যাবে না। গত ১০ বছরে ২৫০ কমরেড খুন হয়েছে। যে বলেছিল লাল কাপড়ের টুকরো থাকবে না, সে এখন তৃণমূলের পতাকাকে ন্যাকরা করে অমিত শাহের জুতো পালিশ করতে গিয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষ নিজের হাতে ট্রাইসাইকেল চালিয়ে এসেছে। এখানে আসতে বিজেপির চার্টার্ড প্লেন লাগে না।”
বাংলার মাটি আন্দোলনের মাটি। বাংলা থেকেই সমাজ সংস্কারের আন্দোলন হবে। ব্রিগেডে বললেন ছত্তীশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। একদিকে দিদি, অন্যদিকে মোদী। একজনের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে হবে, অন্যজনের হাত থেকে দেশকে, আহ্বান বাঘেলের। তিনি বলেন, “বাংলায় আসা আমার কাছে একটা তীর্থে আসার মতো। এখান থেকেই বিপ্লবের শুরু। কিছুদিন আগে দাড়ি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নেতাজির জন্মদিন পরাক্রম দিবস নয়। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন। বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা দেশ আগামিকাল তাই করে। সংযুক্ত মোর্চাকে বিশ্বাস করুন। আগে গোরাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, এবার লড়তে হবে চোরেদের বিরুদ্ধে।”
বাংলা বাঁচাতে জোটকে জেতানোর ডাক ডি রাজার। তিনি বলেন, বিজেপি, তৃণমূল সবই এক। এদের সরিয়ে জোটকে ক্ষমতায় আনতে হবে। দেশ ও রাজ্যের সামনে এখন অনেক চ্য়ালেঞ্জ।
ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ দেখতে পাবেন। ব্রিগেডের মঞ্চেও আরও একবার সে কথা শোনা গেল সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা সীতারাম ইয়েচুরির গলায়। তিনি বলেন,”যদি মমতা ভাজপার সঙ্গে সমঝোতা করেন, তবে তাতে অবাক হবেন না। এটাই ওদের সংস্কার।” ইয়েচুরির কথায়, সেক্যুলার মোর্চার হাত ধরে এ রাজ্যে পরিবর্তন হবে। টাকার খেলা খেলে কোনও কিছুই আটকানো যাবে না। এই মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়ে ইয়েচুরি বলেন, “বিজেপি তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। নিজের নামে ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানিয়ে নিলেন। কৃষকদের জন্য আলাদা আর বড়লোকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। ওরা জানে না ‘হম’ শব্দে হ মানে হিন্দু ম মানে মুসলমান।”
ভাগীদারিই লক্ষ্য, তোষণ নয়। তাই কেউ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়, তবেই আইএসএফ পাল্টা হাত বাড়াবে। ব্রিগেডের মঞ্চে সকলকে এক প্রকার চমকে দিয়ে কংগ্রেসকে এমনই বার্তা দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। একইসঙ্গে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের প্রতি যে তিনি যথেষ্ট খুশি, তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করলেন সে বিষয়ও। ‘আমার প্রিয় দেশবাসী’, বক্তব্যের শুরুতেই আব্বাসের এই শব্দবন্ধ উচ্চারণে আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল দৃঢ়তা। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সকলেই এ দেশের মানুষ। এখানে কোনও বৈষম্য আইএসএফ মানবে না। আব্বাস বলেন, বামেরা যেখানে প্রার্থী দেবে রক্ত দিয়ে তাদের জেতাবে আইএসএফ। তাঁর কথায়, তৃণমূল হল বিজেপির বি টিম। মমতাকে ‘জিরো’ করে দেওয়ার ডাক দেন তিনি।
‘সংযুক্ত মোর্চা’য় সকলকে অভিনন্দনকে জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “এত বড় সভায় এই প্রথম বক্তব্য রাখছি। উত্তেজনা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস আছে। একদিকে তৃণমূল, একদিকে বিজেপি—ওদের যোগ্য জবাব দিতে হবে। দিদি-মোদীর রাজনৈতিক ডিএনএ এক। কোনও তফাৎ নেই।” টিএমসি থাকবে না , বিজেপি থাকবে না, থাকবে কেবল সংযুক্ত মোর্চা। বাংলায় রঙ বেরঙের পতাকা উড়ছে। বাংলায় পরিবর্তনের রামধনু, বললেন অধীর।
আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা খেলা হবে বলছি না। আমরা বলছি লড়াই করতে হবে। বাংলা কর্পোরেটতন্ত্র চায় না। বাংলা গণতন্ত্র চায়। সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদ। এই পুঁজিবাদ বাংলা চায় না। আমার মন কী বাত হল আমি প্রশ্ন করতে চাই। আজ প্রশ্ন করার সুষোগ নেই। প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে। মোদী ফ্যাসিবাদের প্রসার ঘটাচ্ছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছে আরএসএস। দেশের সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে।”
আসন ভাগাভাগি শেষ কথা নয়। ঐক্যই শেষ কথা বলবে। ব্রিগেডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এমনই বার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। একইসঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর কটাক্ষের সুর ‘ওদের গোটা দলটাই তো এখন বিজেপি হয়ে গিয়েছে।’ সূর্যকান্তের কথায়, “মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দিতে হবে। মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই। বন্ধ কারখানা খুলতে হবে। লেখাপড়া করে সব শেখায়নি। মানুষের থেকে শিখেছি। তাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে হবে। আমরা চাই কর্মসংস্থান বাড়ুক। এই বাংলায় দিন বদলাবে। আসন ভাগাভাগি নয়, মানুষের ঐক্যই শেষ কথা।”
রক্ষণশীলতার বেড়ি নয়, পক্ককেশীদের গুরুগম্ভীর ভাষণ নয়, এবার ব্রিগেডকে ঘিরে নতুন ছক। জেন ওয়াইয়ের নজর কাড়তে আধুনিক নাচ-গান, অর্ক মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাশ মব-এর গান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ে সায় দিয়েছে নেতৃত্ব। টুম্পার সোনার প্যারোডি নিয়েই অভিনব কায়দায় প্রচারে নেমেছে বামেদের ‘নেক্সট জেন’। খোদ সেই টুম্পাকেই দেখা গেল বামেদের ব্রিগেডে। না, এক ঝকঝকে কেতাদুরস্ত চেহারা। বর্ণময় চরিত্র। ব্রিগেডের সভায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে দেখালেন ‘মিডল ফিঙ্গার’।
ভোটের লড়াইয়ে একদিকে থাকবে তৃণমূল, বিজেপি। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ সহ সকল শক্তি। ব্রিগেডের সমাবেশ মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন বিমান বসু। তিনি বলেন, “আজকের পর থেকে একদিকে বিজেপি তৃণমূল, অন্যদিকে আমরা সবাই।” বাম-কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড সমাবেশকে ঐতিহাসিক বলে দাবি করে বিমান বসু বলেন, এই সমাবেশ অভূতপূর্ব।
বাম, কংগ্রেসদের ব্রিগেডগামী সমর্থকদের আটকানোর অভিযোগ। বিভিন্ন জেলায় গাড়ি আটকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। ডানকুনিতে পুলিশ একটি বাস আটকে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভোটের আগে এই ব্রিগেড সমাবেশ হাত-হাতুড়ির শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ। কিন্তু অদ্ভূতভাবে এদিন এখানে গান্ধী পরিবারের কোনও মুখই থাকছে না। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিস্তারিত পড়ুন: জোটের অ্যাসিড টেস্ট, তবু ব্রিগেডে নেই কংগ্রেসের কোনও ‘মেগাস্টার’
স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ব্রিগেডমুখী নবান্ন অভিযানে হারিয়ে যাওয়া দীপক পাঁজার স্ত্রী সরস্বতী পাঁজা। পাঁশকুড়া থেকে ট্রেনেই ব্রিগেডের জন্য রওনা দিয়েছেন তিনি। আশা, এদিনের সমাবেশ থেকে যদি স্বামীকে ফিরে পান।
বদলে গিয়েছে ব্রিগেডের হাওয়া। লাল নিশানের ফাঁকেই এখন ফৎ ফৎ করে ওড়ে কংগ্রেসের পতাকা, সঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের ঝান্ডাও। সেই বদলের হাওয়া ব্রিগেডের মেনুতেও।
বিস্তারিত পড়ুন: পেল্লাই ডেচকিতে ঠাসা বিরিয়ানি নিয়ে বাম সমর্থকেরা ব্রিগেডমুখী
আজ বামেদের ব্রিগেড। কাস্তে হাতুড়ির যৌথ সমাবেশে (Left Congress Brigade 2021) আজ থাকছেন আব্বাস সিদ্দিকিও। শহর আজ ঢেকেছে লাল ঝান্ডার মেলায়। কিন্তু সেই পতাকাও খুলতে হল আজ। কেন?
বিস্তারিত পড়ুন: রাস্তাতেই লাল ঝাণ্ডা খুলে ফেললেন ‘কমরেড’রা!
গন্তব্য ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। একুশের ভোটের আগে দল কী সঞ্জীবনী মন্ত্র শোনায়, কান সেদিকেই। সকাল সকাল কাপড়ে মুড়ি, পেঁয়াজ, লঙ্কা বেঁধে বাসে বাসে উঠে পড়লেন বছর সত্তরের সুষমা মালিক। শুধু সুষমাই নন মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ রবিবার কলকাতার ব্রিগেডমুখী।
অন্য বছর বামেদের ব্রিগেডে উড়ত শুধুই লাল ঝান্ডা। কিন্তু এবার তাতে হাতের থাবা। সিপিএম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গী আবার আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফও। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে তিন দলের তরফে কী বার্তা উঠে আসে, সেটাই দেখার।
সকাল থেকেই ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে বর্ধমান শহর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাম কর্মী সমর্থক ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা রওনা দিয়েছেন। সকাল থেকেই বাস, লরি, ম্যাটাডর চেপে ব্রিগেডমুখী সমর্থকরা।
রবিবারের ব্রিগেডে সশরীরে আসতে পারছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে আগের দিনই দলীয় কর্ম-সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তিনি। বুদ্ধবাবুর ‘মানসিক যন্ত্রণা’র কথা ফুটে উঠেছে সেই বার্তায়।
বিস্তারিত পড়ুন: ব্রিগেডে থাকতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য