কলকাতা: রাজ্য বিজেপিকে কখনও ৩০, কখনও ৩৫ আবার কখনও ৪২ আসনের টার্গেট দিয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল, ৩০-৩৫ তো দূর, গত লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ১৮টি আসনও ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এমনকী উত্তরের শক্ত জমিও এবার নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। পরাজিত হয়েছেন নিশীথ প্রামাণিকের মতো প্রার্থী, যাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের পরপর সভা, রোড শো- সবই কি বিফলে গেল? কোন অঙ্কে ভুল হয়ে গেল বিজেপির। যে দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্য তোলপাড়, সেটাও কোনও প্রভাব ফেলতে পারল না কেন, উঠছে প্রশ্ন-
‘ইডি-সিবিআই’-এর কোপ
গত ৫ বছরে একাধিক নেতার কাছে গিয়েছে ইডি বা সিবিআই-এর নোটিস। দফায় দফায় তলব করা হয়েছে তাঁদের। দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের একাধিক হেভিওয়েট নেতার। কিন্তু শাসক দল বারবার প্রশ্ন তুলেছে, এটা আসলে ষড়যন্ত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একথা বলেছেন একাধিকবার। তৃণমূলের সেই ব্যাখ্যার সঙ্গে কি মানুষ একমত হল?
প্রার্থী বাছাই, প্রার্থী বদল
কয়েকটি আসনে সাংসদদের এবার ফের টিকিট দিয়েছে বিজেপি। তবে কয়েকটি আসনে আনা হয়েছে নতুন প্রার্থী। পুরনো সাংসদের কেন্দ্র বদল করার ঘটনাও ঘটেছে। সেই সব অঙ্কেই ভুল হয়ে গেল নাকি, তাও বিশ্লেষণ করবেন রাজনীতির কারবারিরা।
যেমন মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরে। ফলাফলে দেখা গেল, মেদিনীপুর আর বর্ধমান-দুর্গাপুর- দুটি কেন্দ্রই হাতছাড়া হল বিজেপির। এস এস আলুওয়ালিয়াকে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে আসানসোলে নিয়ে গিয়ে কোনও লাভ হল না। আবার দেবশ্রী চৌধুরীকে রায়গঞ্জ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় আনায় রায়গঞ্জের জমি রক্ষা হল ঠিকই, কিন্তু দেবশ্রী আর জিতলেন না।
মাত্রা-ছাড়া আক্রমণ?
রাজনীতিতে কু-কথা কোনও নতুন বিষয় নয়। শাসক-বিরোধী একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে কু-কথার আশ্রয় নেয়। তবে সেটা কি কোথাও মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল? ভোটের ঠিক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের শোকজের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। আবার সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও আক্রমণ করতে গিয়ে মাত্রা রাখেননি। তাঁর বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করেছিল কমিশন।
গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব
প্রকাশ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কেন্দ্রীয় নেতারাও বারবার একযোগে লড়াই করার কথা বলেছেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে শোনা যায়, শিবিরের অন্দরেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। কার গুরুত্ব বেশি, কে মঞ্চে জায়গা পাবেন- এ সব নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি যে একেবারেই নেই, তা নয়। জেলায় জেলায় নয়, রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেও রয়েছে দ্বন্দ্ব। এমনকী বিজেপিই বিজেপির বিরুদ্ধে পোস্টার দিয়েছে, এই দৃশ্যও দেখা গিয়েছে ভোট-আবহে।
তবে কারণ যাই হোক, বিজেপি বাংলায় যে জমি দখল করেছিল, তার মধ্যেও কিছুটা সরে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ধাক্কা খেয়েছে বঙ্গ বিজেপি শিবির। সংগঠনের দুর্বলতা, নাকি কাজে খামতি- সেই বিশ্লেষণ করবে রাজ্য নেতৃত্ব। তবে শুভেন্দু অধিকারীর মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়েই অনেকে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে।