কলকাতা: এবারের লোকসভা ভোটে বাংলায় হোঁচট খেল বিজেপি। টার্গেট নেওয়া হয়েছিল অন্তত ৩০ আসন। কিন্তু অর্ধেক পথও পার করতে পারল না। বরং, জেতা আসনও হারাতে হল। পাঁচ বছর আগে, উনিশের লোকসভা ভোট রাজ্যে বিজেপির আসন ছিল ১৮। এবার সেটা থেকেও কমেছে আসন। কমিশনের ওয়েবসাইটে রাত ১০টা পর্যন্ত দেওয়া আপডেট অনুযায়ী, ১২টি আসনে রয়েছে বিজেপির দখলে (জয় ও এগিয়ে থাকা মিলিয়ে)।
গত লোকসভা নির্বাচনে যখন বিজেপি ১৮ আসন জিতেছিল, সেই উল্কাগতির উত্থানের সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপি যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তার বীজ বপন হয়েছিল দিলীপ জমানাতেই। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। দিলীপের হাত ধরেই বঙ্গ রাজনীতিতে সাবালক হয়েছে বিজেপি। হাতে ধরে তৈরি করেছেন সংগঠন। বাম-তৃণমূল দ্বিমুখী লড়াই বদলে দিয়েছেন তৃণমূল-বিজেপি দ্বিমুখী লড়াইয়ে।
উনিশের লোকসভা ভোটে ১৮ আসন। তারপর একুশের বিধানসভা ভোটে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসা। দুই বড় নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির যে ফলাফল হয়েছিল, তাতে অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন দিলীপ ঘোষই। রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের মতে, দিলীপ ঘোষের গ্রাম্য-মেঠো জনসংযোগের কায়দা বিজেপির প্রতি আমজনতাকে দুর্দান্তভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
তারপর একুশের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দিলীপের উত্তরসূরি হিসেবে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সুকান্ত মজুমদার। এবারের ভোটে রাজ্য বিজেপিতে প্রধান দুই মুখ হিসেবে বার বার দেখা গিয়েছে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। গোটা বাংলা ঘুরে প্রচার করেছেন দলীয় প্রার্থীদের হয়ে। সেই তুলনায় দিলীপ ঘোষের কর্মকাণ্ড অনেক বেশি সীমিত ছিল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই।
গত দুই বড় নির্বাচনে বিজেপির আসন যে মাত্রায় বেড়েছিল, তাতে এবার আরও বড় সাফল্যের আশায় ছিল বঙ্গ বিজেপি শিবির। অন্তত ৩০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উল্টে গতবারের থেকে আসন আরও কমেছে বিজেপির। জেতা আসনও হাতছাড়া হয়েছে। রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের ব্যাখ্যা, এর জন্য অন্যতম একটি কারণ হতে পারে প্রার্থী বাছাই এবং বেশ কিছু জায়গায় দলের অন্দরে কোন্দলের তত্ত্ব। যেমন, বাঁকুড়ায় জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে। পরাজিত হয়েছেন সুভাষ সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের একাংশের নীচুতলার কর্মীরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বিজেপির পার্টি অফিসে তালাবন্ধ করা হয়েছিল সুভাষ সরকারকে। ডায়মন্ড হারবারেও অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেছে নেওয়া হয়েছিল অভিজিৎ দাসকে (ববি)। জেলা সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হলেও সেই অর্থে কোনও হেভিওয়েট মুখ ছিলেন না অভিজিৎ। এমন বেশ কিছু ফ্যাক্টর বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।