কলকাতা : একাধিকবার তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে দেখা গিয়েছে। নারদ মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন। সেই মদন মিত্রকে আজ দেখা গেল এসএসকেএম-এর আউটডোরে। লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা করালেন তিনি। আর সেই ছবি ও প্রেসক্রিপশন সোশাল মিডিয়ায় দিলেন। সাধারণত এসএসকেএম-এর চিকিৎসা পরিষেবা পেতে মদন মিত্রকে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতেই দেখা যায়, আজ হঠাৎই কেন লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখালেন? তাহলে কি নীলবাতি নিয়ে এসে উডবার্নে ভর্তি হওয়া অনুব্রত মণ্ডলকে কোনও বার্তা দিতে চাইলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক? ইতিউতি প্রশ্ন উঁকি মারছে রাজনৈতিক মহলে।
বুধবার মদন মিত্র নিজের ফেসবুকে কয়েকটি ছবি দিয়েছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অনুগামীদের নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছেছেন তিনি। চিকিৎসকের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সেইসব ছবির সঙ্গে একটি প্রেসক্রিপশনও ফেসবুকে দিয়েছেন মদন। তিনি যে আউটডোরে চিকিৎসা করিয়েছেন, তার ‘প্রমাণ’। ছবিগুলি দিয়ে মদন মিত্র লিখেছেন, “পিজি হাসপাতালের আউটডোর কার্ড করে লাইন দিয়ে চিকিৎসা করালাম।”
আচমকা কেন এমন লিখলেন মদন?
কয়েকদিন আগে গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ডেকেছিল সিবিআই। নিজাম প্যালেসে হাজিরার জন্য বীরভূম থেকে কলকাতাও আসেন তিনি। ৬ এপ্রিল নিজাম প্যালেসের উদ্দেশে রওনাও হয়েছিলেন। কিন্তু, মাঝরাস্তা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আচমকা এসএসকেএম-এ চলে যান। তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। নিজাম প্যালেসে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বলে সিবিআই-কে জানান অনুব্রতর আইনজীবীরা।
অনুব্রত মণ্ডল উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। প্রভাবশালীরা কেন ইডি, সিবিআইয়ের ডাক পেলে হাসপাতালে ভর্তি হন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এসএসকেএম-এ চিকিৎসা করাতে আসা সাধারণ রোগীরা বলেন, তাঁরা লাইন দিয়ে চিকিৎসা করান। আর নেতারা সরাসরি উডবার্নে ভর্তি হন। অনুব্রত মণ্ডলকে প্রথমে এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়নি কেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। আউটডোরে চিকিৎসককে দেখিয়ে কেন উডবার্নে ভরতি হলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
এরইমধ্যে নাম না করে অনুব্রত মণ্ডলকে আক্রমণ করেন কুণাল ঘোষ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “উডবার্ন ওয়ার্ড কি হাসপাতাল না কয়েদিদের আশ্রয়খানা?” এর আগেও বগটুইকাণ্ডে অনুব্রতর টিভি ফেটে আগুনের তত্ত্ব নিয়ে কুণাল বলেছিলেন, “অনুব্রত বড় নেতা। বেশি বোঝেন।”
মদন মিত্র যদিও কারও নাম নেননি। তিনি যে আউটডোরে চিকিৎসা করিয়েছেন শুধু সেটুকুই জানিয়েছেন। তাতেও অবশ্য গুঞ্জন থামছে না। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।