Manik Bhattacharya Son: লন্ডনে বাড়ি মানিক-পুত্রর? ‘চাকরি চুরির’ টাকা গিয়েছে মালদ্বীপ, ভিয়েতনামে! আদালতে বিস্ফোরক ED

Manik Bhattacharya Son: লন্ডনে সৌভিক বা মানিকের কোনও সম্পত্তি আছে কি না, তা জানতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি।

Manik Bhattacharya Son: লন্ডনে বাড়ি মানিক-পুত্রর? ‘চাকরি চুরির’ টাকা গিয়েছে মালদ্বীপ, ভিয়েতনামে! আদালতে বিস্ফোরক ED
আদালতে প্রশ্ন মানিক ভট্টাচার্যের পুত্রকে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 22, 2023 | 4:10 PM

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) গোটা পরিবারের। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য ও ছেলে সৌভিক ভট্টাচার্যের ভূমিকা এই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই মনে করছেন ইডির (ED) গোয়েন্দারা। শাসক দলের বিধায়ক মানিক পর্ষদের কর্তা ছিলেন ঠিকই, তবে স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে কী এমন অভিযোগ? বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিশেষ ইডি আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থা দাবি করলেন, ‘এই মামলায় ড্রামাটিক ডেভেলপমেন্ট (নাটকীয় মোড়) সামনে এসেছে।’ মানিক বাবুর স্ত্রীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ছেলের বিদেশ-যাত্রা, সবকিছুই আতস কাচের নীচে রাখছে ইডি। দুজনেই এদিন জামিনের আবেদন জানান আদালতে।

শতরূপার অ্যাকাউন্ট রহস্য

জামিনের বিরোধিতা করে এদিন ইডির আইনজীবী বলেন, ‘সৌভিক ও মানিকের স্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানিকবাবুর স্ত্রীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে একজনের নাম রয়েছে, যিনি বহু আগে মারা গিয়েছেন। সেই অ্যাকাউন্ট এখনও চলছে। ওঁর স্ত্রী সক্রিয়ভাবে যুক্ত। মানিকবাবু যা করেছেন, তার সবটাই জানতেন শতরূপা।’

শতরূপাকে বিচারকের প্রশ্ন ছিল, অ্যাকাউন্ট কার সঙ্গে খুলেছিলেন? শতরূপা বলেন, মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। উনি আমার মেসোমশাই। ২০০৫ সালে খোলা হয় অ্যাকাউন্ট।

লন্ডনে সত্যিই বাড়ি আছে মানিকের?

ইডি-র তরফে আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র ও ফিরোজ এডুলজি জানান, ২০১৭-তে সৌভিক ইউকে গিয়েছিলেন। ইডি সব নথি খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছে ওই বছরে দুবার বিদেশে গিয়েছিলেন মানিক-পুত্র। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য গিয়েছিলেন বলেই দাবি করে ইডি। এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মানিকের লন্ডনে সম্পত্তি থাকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেছিলেন, লন্ডনে বাড়ি রয়েছে মানিকের। মানিক সে কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে অস্বীকার করলেও ইডি-র দাবি, সৌভিকের বারবার বিদেশযাত্রা সেই বক্তব্যকেই মান্যতা দেয়।

‘মলদ্বীপ থেকে ভিয়েতনাম পর্যন্ত টাকা গিয়েছে’

জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ৯ জুলাই ও ২ মে ইউকে গিয়েছিলেন সৌভিক। সৌভিক তাঁর বয়ানে এই দুটি বিষয় গোপন করেছিলেন বলেও আদালতে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।

বিচারক ইডি-র আইনজীবিকে বলেন, ‘আপনি কি বলতে চাইছেন ওঁর ওখানে বাড়ি আছে?’ ইডি-র আইনজীবী বলেন, ‘নিশ্চয়। নাহলে কেন গোপন করবেন?’ ইডি-র তরফে দাবি করা হয়, এই দুর্নীতির টাকা বিদেশেও গিয়েছে। মলদ্বীপ থেকে ভিয়েতনাম পর্যন্ত টাকা গিয়েছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সংস্থার স্পষ্ট বক্তব্য, এটি একটি দুর্নীতির ত্রিভূজ। মানিকের স্ত্রী ও পুত্র সক্রিয়ভাবে যুক্ত, তাই তাঁদের জামিন খারিজ করা হোক।

কেন বিদেশ যাত্রার কথা গোপন করলেন সৌভিক?

সৌভিকের আইনজীবী এদিন বলেন, ‘লন্ডনে যদি কারও সম্পত্তি থাকে সে সম্পর্কে ডিটেইলস (বিস্তারিত তথ্য) খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব। ইডি কি সেটা দিতে পেরেছে? পারেনি।’ বিচারক বলেন, ‘আমি যে নথি পেয়েছি তাতে দেখছি বিদেশ যাত্রার কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু দুবারই কোনও কারণ বলা হয়নি।’ ওই দুবারের ক্ষেত্রে ‘রেসিডেন্স রি-এন্ট্রি’ কেন লেখা আছে, সেটাও জানতে চান বিচারক।

মানিকের ছেলে সৌভিক বিচারককে বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের অগস্টে লন্ডন যাই স্টুডেন্ট ভিসায়। সেবার এক বছরের জন্য পেয়েছিলাম। ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি তিনমাসের বেশি থাকে তাহলে, বায়োমেট্রিক রেসিডেন্ট পারমিট দেওয়া হয়। তাই এ ক্ষেত্রে রি-এন্ট্রি কথাটা লেখা থাকে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ওখানে কোনও বাড়ি বা সম্পত্তি তাঁর নেই, চিরকাল বোর্ডিংয়েই ছিলেন তিনি।

এত তথ্য থাকার পরেও কেন তদন্তকারী অফিসাররা মানিকের স্ত্রী বা পুত্রকে গ্রেফতার করলেন না? ইডি-কে সেই প্রশ্ন করেন বিচারক। ইডি-র আইনজীবী বলেন, ‘আমরা গ্রেফতার করিনি, কারণ সেই পর্যায়ে প্রয়োজন ছিল না। আমরা কাস্টডিয়াল ট্রায়াল করতে চাই।’

বিদেশ সফরে খরচ ৫ কোটি!

ইডি আদালতে জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে মানিক ভট্টাচার্য সপরিবারে অন্তত ২০ বার বিদেশযাত্রা করেছেন। চিন, মলদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউরোপ, মালয়েশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন তিনি। এইসব সফরে ৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে বলেও জানান মানিক। এই ৫ কোটি টাকা কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়নি, ফলে ইডি- র সন্দেহ এই টাকা দুর্নীতির।

উল্লেখ্য, লন্ডনে সৌভিক বা মানিকের কোনও সম্পত্তি আছে কি না, তা জানতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় এই সংস্থা।