Omicron New Strain: ওমিক্রনের নতুন দাপুটে প্রজাতি বাংলাতেও, কাজে লাগবে না ওমিক্রন ধরার কিট!
Omicron New Strain: এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন পরিবারে চার প্রজাতির অস্তিত্ব মিলেছে: B.1.1.529, BA.1, BA.2, BA.3। শেষ প্রজাতির উপস্থিতি ভারতে এখনও পাওয়া যায়নি।
কমলেশ চৌধুরী: মিউটেশনের (Mutation)) শেষ নেই! ডেল্টার পর ডেল্টা প্লাস (Delta Plus)। এ বার ওমিক্রন(Omicron)-র পর ওমিক্রন ২.০। শুধু তাই নয়, ‘আদি’র চেয়ে সংখ্যায় বাড়ছে ‘নব্য’ ওমিক্রন। ভারত তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও নতুন প্রজাতির উপস্থিতি বেশি। অন্যদের পিছনে ফেলে একা মাঠ দখল করার ঝোঁক।
প্রায় দু’মাস ধরে ওমিক্রনে নজর রেখে এমনই পর্যবেক্ষণ জিনোম সিকোয়েন্স কনসর্টিয়াম ইনসাকগের কো-অর্ডিনেটর, কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সের অধিকর্তা সৌমিত্র দাসের। এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন পরিবারে চার প্রজাতির অস্তিত্ব মিলেছে: B.1.1.529, BA.1, BA.2, BA.3। শেষ প্রজাতির উপস্থিতি ভারতে এখনও পাওয়া যায়নি। TV9 বাংলাকে সৌমিত্রবাবু বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের শুরুতেও BA.1 বেশি ছিল, BA.2 কম ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে BA.2-এর উপস্থিতি বেড়ে গিয়েছে।’ এক প্রবণতা বাংলাতেও। সৌমিত্রবাবুর কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গেও BA.1-এর চেয়ে BA.2-র খোঁজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে কম রয়েছে B.1.1.529।’ অর্থাত্, নতুন অবতারেরই রমরমা।
এই ঝোঁক শুধু ভারতে বা বাংলায় নয়। বিশ্বের একাধিক দেশেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুরেও ওমিক্রন ২.০-এর দাপট বেশি। এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন পরিবারের চার সদস্যকে ওমিক্রন নামেই ডাকা হচ্ছে। তবে BA.2-র বাড়াবাড়ি দেখে আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে হু, ব্রিটেন। ‘ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’ তকমা দিয়ে নজরদারি শুরু করেছে বরিস জনসনের দেশ।
নব্য ওমিক্রন মারাত্মক নয় তো? নাকি আদির মতোই তুলনায় কম ক্ষতিকারক?
তদন্ত-রিপোর্ট আসতে দেরি। আপাতত স্পষ্ট উত্তর মিলছে কোভিড পরীক্ষা নিয়ে। কাজে লাগবে না ‘ওমিশিওর’-এর মতো কিট! কেন? আদি ওমিক্রনে স্পাইক প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিড পজিশনের ৬৯-৭০ পজিশনে ডিলিশন মিউটেশন পরীক্ষার ক্ষেত্রে হাতিয়ার তুলে দিয়েছিল। ‘স্পাইক জিন টার্গেট ফেলিওর’-এর হাত ধরে তৈরি হয় ওমিক্রন ধরার বিশেষ কিট। যেমন, টাটার ওমিশিওর। যাতে জিনোম সিকোয়েন্স ছাড়াই ওমিক্রনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কিন্তু নব্য ওমিক্রনে স্পাইক প্রোটিনে সংশ্লিষ্ট ডিলিশন মিউটেশনই নেই। তাই ওমিক্রন ধরার সেই কিট এক্ষেত্রে কাজে আসবে না, মত হু-র। একই কথা বলছে ইনসাকগ-ও। যদিও আশ্বাস, আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় নব্য ওমিক্রনও কোভিড হিসেবে ধরা পড়বে। ভ্যারিয়েন্ট বুঝতে গেলে জিনোম সিকোয়েন্সই ভরসা।
ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের পর্যবেক্ষণ, ‘ওমিক্রনের নতুন প্রজাতি যদি বেশি ছড়িয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হয়, এক্ষেত্রেও মৃদু উপসর্গই বেশি। কারণ, হঠাত্ করে হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি হয়নি।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির মতো ওমিক্রন ACE2 বা TMPRSS2 রিসেপ্টর ব্যবহার করে কোষে তেমন ঢুকছে না। ঢুকছে কোষের পর্দার মাধ্যমে। তাই শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশে, অর্থাত্ গলাতেই কাজকর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফুসফুসে গিয়ে বিপদ বাড়াচ্ছে না।’
স্বস্তির খবর নিঃসন্দেহে। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণও দেখছেন না সিদ্ধার্থবাবু। তাঁর কথায়, ‘বেশিরভাগই যেহেতু উপসর্গহীন বা উপসর্গ মৃদু, তাই অ্যান্টিবডি, টি সেলের সুরক্ষা বেশি হবে বলে মনে হয় না। ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট এলে রিইনফেকশনের আশঙ্কাও থেকে যাবে।’
সেই সঙ্গে ডেল্টার বিপদের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘ডেল্টা এখনও যায়নি। বাংলায় BA.1 আর BA.2 মাঝামাঝি উপস্থিতি ডেল্টার। ফলে বয়স্ক এবং কোমর্বিডরা ডেল্টায় আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থতা হতেই পারে। অনেকেই ওমিক্রন ধরে নিয়ে হাসপাতালে যেতে দেরি করে ফেলছেন। সম্ভবত মৃত্যু বাড়ার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ।’
শেষ ৯ দিনে ৩২৫ জনের মৃত্যু বাংলায়। মৃত্যুমিছিল চলছে। থেমে নেই কোভিডও। পরের পর মিউটেশন। আরও যে “ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন” আসবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়!