সৌরভ দত্ত: বছর শেষে যেখান থেকে করোনা (Coronavirus) নজরদারি শুরু হয়েছিল, সেখানেই ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হল। ব্রিটেন থেকে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতি (স্ট্রেইন) যাতে ফাঁক গলে এদেশে আমদানি হতে না পারে, সে জন্য দেশের সবক’টি বিমানবন্দরে নজরদারি ব্যবস্থা আঁটোসাটো করতে রাজ্যগুলির উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্র। সোমবার সকালে এ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা। আর বিকালে ব্রিটেন থেকে আসা এবং যাওয়ার উড়ানের উপরে সাময়িক স্থগিতাদেশের সঙ্গে জারি হয় নজরদারি-নির্দেশিকা।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পরে ভারত থেকে আর কোনও বিমান ব্রিটেনের উদ্দেশে রওনা হবে না বা ব্রিটেন থেকে ভারতে আসবে না। অন্য দেশ থেকে আগত বিমানে ব্রিটেন-যোগ রয়েছে এমন কোনও যাত্রী ভারতের কোনও বিমানবন্দরে যাতে প্রবেশ করতে না পারেন তা বিমান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে ব্রিটেন-যোগ রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তি ভারতে এলে তাঁদের ক্ষেত্রে নজরদারি ব্যবস্থা কী হবে? জবাব রয়েছে এদিনের নির্দেশিকায়।
ব্রিটেন থেকে আগত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আরটি-পিসিআরে কোভিডের পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ হলে তাঁদের নিভৃতবাসে পাঠানো হবে। নেগেটিভ হলেও যাত্রীদের সাতদিন হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে। ওই সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও উপসর্গ দেখা দিয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি চালাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। একেবারে গোড়ায় যে পদ্ধতি ছিল আর কী। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, এদিনের নির্দেশিকার আগে লন্ডন থেকে কোনও যাত্রী এলে তাঁদের করোনা-মুক্তের রিপোর্ট নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হতো। কোভিড-রিপোর্ট না থাকলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করতেন। স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, “যতদূর জানি নির্দেশিকা লাগু হওয়ার অন্তর্বর্তী সময়ে লন্ডন থেকে আর কোনও বিমান কলকাতায় আসছে না। কোনও বিমান যদি আসেও তাহলে যাত্রীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিমানের পাইলট, বিমানসেবিকাদেরও কোভিড টেস্ট করানো হবে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সকলকে বিমানবন্দরেই থাকতে হবে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “গত ১৫ দিনে যাঁরা ব্রিটেন থেকে আসছেন সকলকে নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।”
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের একাংশ জানাচ্ছেন, ব্রিটেনের পাশাপাশি বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডে কোভিডের এই নতুন প্রজাতির মিউটেশনের সন্ধান মিলেছে। সেই সকল দেশ থেকে এ ধরনের মিউটেশনের শিকার এমন কোনও কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে কোনও ভাবে এ দেশে প্রবেশ করতে না পারে তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। বস্তুত, বছর শেষে গত বছরের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে না কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের মতে, গত বছর বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের পরও কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির প্রবেশ আটকানো যায়নি। সে কথা মাথায় রেখে এবার ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর। আজ, মঙ্গলবার সেই লক্ষ্যে আরও একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়লা পাচারকাণ্ডে হন্যে হয়ে ‘ছোটু’র খোঁজ করছে সিবিআই
অ্যাকশন প্ল্যানে কী ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে? এদিনের বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের একাংশ জানান, ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন সংক্রমণ ছড়ানোর প্রশ্নে অনেক বেশি সক্ষম বলে জানা গিয়েছে। তাই ব্রিটেনের পাশাপাশি যে সকল দেশে নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে তাঁদেরও খুঁজে বার করার লক্ষ্যে রূপরেখা তৈরি করা হবে। কী ভাবে? কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার এক শীর্ষ প্রতিনিধি জানান, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক থেকে সরাসরি হয়তো কেউ আসেননি। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে কেউ সেই সকল দেশে গিয়েছিলেন, এমন হতেই পারে। তাই এ ধরনের ব্যক্তিদের শারীরিক পরিস্থিতি যাচাই করা জরুরি। কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার এক কর্তার কথায়, “সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহের পরে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ওই মিউটেশন রয়েছে কি না। নইলে সংক্রমণের ছড়িয়ে পড়া আটকানো মুশকিল।” আরও এক কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার কর্তার কথায়, “সপ্তাহ খানেক আগে যাঁরা ব্রিটেন বা অন্য দেশগুলি থেকে এ দেশে এসেছেন তাঁদের সঙ্গে মোবাইল নম্বরের সাহায্যে যোগাযোগ করা জরুরি।”
আরও পড়ুন: এসেছে ৪৬ লক্ষ সিরিঞ্জ, রাজ্যে টিকাকরণের প্রস্তুতি তুঙ্গে