পোস্তা উড়ালপুল ভাঙার কাজ শুরু চলতি মাসেই, দায়িত্ব পেল রেল অধীনস্থ সংস্থা

প্রথম ধাপে ৪৫ দিনে উড়ালপুলের একাংশ ভাঙা হবে। মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ভাঙার কাজের চলাকালীন যাতে যান চলাচল ব্যাহত না হয় তার জন্য ট্রাফিক অন্য পথে ঘোরানো হবে।

পোস্তা উড়ালপুল ভাঙার কাজ শুরু চলতি মাসেই, দায়িত্ব পেল রেল অধীনস্থ সংস্থা
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jun 02, 2021 | 7:06 PM

কলকাতা: পাঁচ বছর পর অবশেষে পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ বিধানসভা ভোটের মুখে ভেঙে পড়েছিল নির্মীয়মাণ এই উড়ালপুলটি। ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে উড়ালপুলের ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো। বুধবার কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম পোস্তাবাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তারপরই উড়ালপুলটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আগামী ১৫ জুন থেকে মোট চারটি ধাপে এই উড়ালপুলটি ভাঙার কাজ শুরু হবে। প্রথম ধাপে ৪৫ দিনে উড়ালপুলের একাংশ ভাঙা হবে। মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ভাঙার কাজের চলাকালীন যাতে যান চলাচল ব্যাহত না হয় তার জন্য ট্রাফিক অন্য পথে ঘোরানো হবে। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পুরসভা বৈঠক করবে। বাকি তিন ধাপে কীভাবে উড়ালপুলটি ভাঙা যায় তা প্রথম ধাপের পর বৈঠকে মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উড়ালপুল ভাঙার পর তার ভবিষ্যৎ কী হবে, বিষয়টি ঠিক করতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে খড়্গপুর আইআইটি’র বিশেষজ্ঞরা উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। কিন্তু তাঁদের রিপোর্ট অস্পষ্ট থাকায় প্রখ্যাত ব্রিজ বিশেষজ্ঞ ভিকে রায়নাকে দায়িত্ব দেয় সরকার। তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণের পর নির্মীয়মাণ উড়ালপুলটি ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন। সেই মতামতকেই গুরুত্ব দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলের অধীনস্থ সংস্থা রাইটসকে।

পোস্তা উড়ালপুল তৈরির সময় থেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। ২০১৬ সালের সেই দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা দরবার করলেও কোনও লাভ হয়নি। এই উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতদিন অন্ধকারে ছিলেন তাঁরা। গত পাঁচ বছরে অনেকেই নিজেদের পুরনো বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। ভেঙে পড়া উড়ালপুলের ধারে থাকার ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁরা। এই সমস্যার সমাধান হলে পোস্তা কি ফিরবে আগের অবস্থায়? উত্তরের অপেক্ষায় বাসিন্দারা। মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, উড়ালপুল ভাঙার সময় সব ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করা হবে। আশপাশের বাড়ির কোন বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

আরও পড়ুন: ক্যাডার রুল ভেঙে আইএএস, আইপিএস বদলি করছে কেন্দ্র! জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে

বাম আমলে উড়ালপুলটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেএমডিএ। উড়ালপুলের নকশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পোস্তা এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে উড়ালপুল করা যায় কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন ইঞ্জিনিয়াররা। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপে কেএমডিএ তা তৈরি করতে বাধ্য হয়। দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থা এটি তৈরির দায়িত্বে ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার পর এর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে দোটানায় ছিল তৃণমূলের সরকার। প্রশ্ন উঠেছিল, উড়ালপুল ভাঙতে গেলে নতুন করে কোনও বিপদ হবে না তো? তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় দফায় দফায় বৈঠক করে উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে পন্থা বের করার চেষ্টা করেন।

টালা ব্রিজের ভবিষ্যৎ যিনি ঠিক করেছিলেন, সেই ব্রিজ বিশেষজ্ঞ ভিকে রায়নাকেই এই দায়িত্ব দেয় সরকার। তাঁর পরামর্শেই পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল সরকার। ভেঙে ফেলার পরে ওখানেই নতুন করে কোনো উড়ালপুল তৈরি হবে কি না, তা পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হবে। মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞের মতামতকে যাচাই করেই ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাইটসকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই ঠিক করবে, কারা ভাঙবে। একাধিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট উড়ালপুল বিষয়ে। তাদের যাবতীয় রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট উড়ালপুলটিকে ভেঙে ফেলারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘যারা করেছে তাদের দোষ, তদন্ত হওয়া উচিৎ’, দিঘা নিয়ে আধিকারী পরিবারের দিকেই আঙুল তুললেন মমতা?