কলকাতা: মধ্যরাতে ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট প্রার্থীদের ওপর হঠাৎ করেই অভিযান চালায় পুলিশ। করুক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয় করুণাময়ীতে। রীতিমতো বলপ্রয়োগ করে সরিয়ে দেওয়া হয় চাকরিপ্রার্থীদের। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষ টেনে হিঁচড়ে, চ্যাঙদোলা করে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া ৮৪ ঘণ্টার লড়াই শেষমেশ আচমকাই শেষ হয়। ভোর রাতে শিয়ালদা স্টেশনে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীকে পৌঁছে দেওয়া হয়। ফের সকাল হতেই করুণাময়ীতে মোতায়েন করা হয় বিশাল বাহিনী। এলাকা থেকে আন্দোলনের চিহ্ন মুছে রাস্তা সাফ করা হয়। বেলা বারোটা নাগাদ নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে করুণাময়ী। সেখানে বাম কর্মীরা জমায়েত করেন। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় পুলিশ বাধা দেয়। সেখানেই জড়ো হয়ে যান চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। সেখানকার পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়। পুলিশ চ্যাঙদোলা করে তাঁদের গাড়িতে তোলেন। এরপর সিটি সেন্টারের সামনে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। মীনাক্ষী অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। সেখান থেকে তাঁকে রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে সরানো হয়।
সিটি সেন্টার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে বিধাননগর নর্থ থানা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডিওয়াইএফআই-এসএফআই নেতা-কর্মীদের। সেখানেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সন্ধেয় বিধাননগর নর্থ থানা থেকে বেরোলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসক শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, “কলকাতার বুকে চাকরির দাবি নিয়ে আমাদের ঘরের ভাই বোনেরা, বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন করছি। কলকাতার বুকে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সাক্ষী থাকলাম। যেখানে পুলিশকে মনে হল জল্লাদ বাহিনী। কংগ্রেস এটিকে নিন্দা করছে এবং ঘৃণা করছে। প্রশাসনকে সচেতন ও অনুভূতিশীল হওয়া উচিত ছিল। আধুনিক যুগের প্রশাসনের মধ্যযুগীয় আচরণ।”
গতরাতের ঘটনার প্রতিবাদে এবার মিছিলে নামল বিজেপি শিবিরও। রাজ্য বিজেপির দফতরের সামনে থেকে শুরু হয়েছে মিছিল। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগোতে শুরু করেছে মিছিল। মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল, সজল ঘোষরা। রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মিছিল। অগ্নিমিত্রা পাল মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তোলেন। বললেন, উনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তা রাখছেন না। অনতিবিলম্বে তাই যেন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।”
মীনাক্ষী, কলতান, ময়ূখদের পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান এবিভিপির সমর্থকরা। তাঁরাও রাস্তায় বসে পড়েন। পুলিশ তোলার চেষ্টা করলে, রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন তাঁরা। পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁদেরও তুলে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।
সল্টলেক সিটি সেন্টার চত্বরে পুলিশ-বিক্ষোভকারী ধস্তাধ্বস্তির পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে বাম ছাত্র-যুবদের তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে যায়। পুলিশ টেনে হিঁচড়ে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাসে তোলা হয় বিক্ষোভকারীদের।
করুণাময়ী চত্বর থেকে রাতের অন্ধকারে যেভাবে টেট আন্দোলনকারীদের হঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিবাদে সরব হয়েছে সব রাজনৈতিক দলগুলি। এবার বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আনল বিজেপি শিবির। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি পাঠালেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আন্দোলনকারীরা গত ১০০ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রাত দুটোর সময় পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের হঠিয়ে দেওয়া হয়। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
সিটি সেন্টারের সামনে নতুন করে জমায়েত করেন বাম কর্মী সমর্থকরা। নেতৃত্বে ছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পুলিশ সেই জমায়েত তুলে দিতে চায়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বাম কর্মী সমর্থকদের। মীনাক্ষীকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে। রাস্তায় শুয়ে পড়েন মীনাক্ষী। নতুন করে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি।
করুণাময়ীতে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীদের পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ। বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের পাশাপাশি এবার সরব বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে সরকার- অভিযোগ তুলে সরব বুদ্ধিজীবীরা। বিস্তারিত পড়ুন…
‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আঘাত করেছে সরকার’, এবার সোচ্চার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ
টেটের ধর্না মঞ্চে পুলিশের প্রতিবাদ। করণাময়ীতে বামেদের জমায়েত কর্মসূচি। জমায়েতে বাধা দেয় পুলিশ। ১৪৪ ধারা জারি থাকায়, জমায়েতে বাধা দেয় পুলিশ। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। বাম কর্মীদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। দেখা যায়, ডিসি ও অন্যান্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা তাঁদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যায়। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ে ‘নিয়োগ চাই’ দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে প্রদেশ কংগ্রেসের ‘ধিক্কার মিছিল’। বিধান ভবন থেকে গান্ধী মূর্তি মেয়ো রোড পর্যন্ত মিছিল হবে। পদযাত্রার নেতৃত্বে থাকবেন শ্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও অন্যান্য প্রদেশ ও জেলা নেতৃত্ব।
বাড়ানো হল শিয়ালদা স্টেশনের নিরাপত্তা। শিয়ালদা স্টেশন চত্বর এখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। প্রিজন ভ্যান রয়েছে প্রচুর। উদ্দেশ্য ফের যদি আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা আসেন, তাহলে এখানে আটকে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের ভ্যানে তুলে নেওয়া হবে। গতকাল রাতের ঘটনার পর বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।
টুইট করে চাকরিপ্রার্থীদের ওপর পুলিশি অভিযানের তীব্র নিন্দা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
করুণাময়ীতে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের ওপর পুলিশি অভিযানের তীব্র নিন্দা করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। বিজেপির তরফে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
In a hitleresque midnight crackdown, Mamata Banerjee used brute force to evict the agitating candidates of the Teacher Eligibility Test 2014, who were on a legitimate sit-in demonstration, near the State Primary Education Board Office.
BJP Bengal will launch a massive protest…
— Amit Malviya (@amitmalviya) October 21, 2022
পুলিশি হানার জেরে করুণাময়ী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন তিন আন্দোলনকারী। তেমনই অভিযোগ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের। তিন জন নিখোঁজ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত রাতে আচমকাই পুলিশ এই অভিযান চালায়। দিশেহারা হয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। অচিন্ত্য ধারা, অচিন্ত্য সামন্ত, অর্ণব ঘোষ নামে তিন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। এক মহিলা টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী বলেন, “অচিন্ত্য ধারা, অচিন্ত্য সামন্ত, অর্ণব ঘোষ, এই তিন জনের কোনও ট্রেস আমরা পাচ্ছি না। এই তিন জনের গায়ে যদি একটাও আঁচড় লাগে, কলকাতার রাজপথে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এখানে চাকরিপ্রার্থীদের লাশ দেখবেন।”
পৌনে পাচঁটা। চাকরি প্রার্থীদের একটি গাড়ি করে শিয়ালদহ স্টেশনে পাঠানো হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ২০১৪ টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা।
ভোর সাড়ে চারটে। নিউটাউন থানা থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত একটি গাড়ি ১৮ জন চাকরি প্রার্থীকে নিয়ে যায়।
ভোর৩ টে ৩০ মিনিট। চারদিক অন্ধকার। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা হয় অসুস্থ ২০১৪ টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীর। চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় রাতেই। কিন্তু এত রাতে কোথায় যাবেন তাঁরা! ক্যামেরা দেখে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন অনেকেই।
২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ অনশনকারীদের তুলে দিলেও অবস্থানে অনড় ছিলেন ২০১৭ সালের প্রতিবাদীরা। একাংশ শুরুতে চলে গেলেও একাংশ অবস্থানেই ছিলেন। শেষে রাত ৩টে নাগাদ করুণাময়ী থেকে ২০১৭ সালের প্রতিবাদীদের সরিয়ে দিল পুলিশ। অ্যাকশনের আগে বারবার পুলিশের তরফে করা হয় মাইকিং। শেষে টেনেহিঁচড়ে প্রতিবাদীদের তোলা হল বাসে।
২০১৪-র চাকরিপ্রার্থীদের গাড়িতে তোলার পর গোটা এলাকা মূহূর্তেই পরিস্কার করে ফেলে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ফ্লেক্স, পোস্টার সহ যাবতীয় যা জিনিস রাস্তায় ছিল তাও তুলে ফেলা হয়। একইসঙ্গে রাস্তায় আটকানো কাগজের পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায় পুলিশকে।
আন্দোলন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষে অবস্থানে অনড় ২০১৭ সালের টেটের চাকরিপ্রার্থীদের একটা বড় অংশ। বৃহস্পতিবার সল্টলেক-এর ১০ নম্বর ট্যাঙ্কির কাছে আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। যদিও এদিন তাঁদেরও উঠে যেতে বলে পুলিশ। কিন্তু, তাঁদের দাবি যে এলাকায় তাঁরা আন্দোলন করেছেন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি নেই। তাই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানাচ্ছেন। তবে ইতিমধ্যেই আন্দোলন ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন অনেক চাকরিপ্রার্থীই। তবে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন একটা বড় অংশ।
২০১৭-র আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আবার পর্ষদের উপর ভরসা রাখছেন। অন্য অংশের দাবি তাঁদের ব্যবহার করতে চাইছে পর্ষদ। এ নিয়ে মত পার্থক্য বিদ্যমান। রাতভর তা নিয়ে চলে বিতর্ক।
দুটো বাসে অর্ধেক আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হাওড়া, শিয়ালদহ, ধর্মতলায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
যাদবপুর থানা ঘেরাও করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের ছাত্রছাত্রীরা। আমরণ অনশনরত চাকরিপ্রার্থীদের শান্তিপূর্ন আন্দোলনের উপর সরকার-পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদে থানা ঘেরাও বলে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের তরফে জানানো হয়েছে।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে রাত বাড়তেই বিভাজন শুরু হয় ২০১৭ সালের আন্দোলনেরকারীদের মধ্যে। একাংশ ফিরে যেতে চাইলেও একাংশ আন্দোলনে অনড় থাকেন। এমনকী রাতে মহিলা আন্দোলনকারীরা কোথায় যাবেন তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে।
শুক্রবার বেলা ১২টায় সল্টলেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের উপর পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদেই করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পোস্ট করে এ কথা জানিয়েছেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য।
টুইটে তোপ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও। তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি।
Didi’s Khela Hobe had new meaning today when Police started applying brute force & detaining TET 2014 qualified students who were protesting against the state govt for their legitimate demands.
Youths have no future in this TMC govt. This govt must go.
pic.twitter.com/pIjODU5Gkd— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) October 20, 2022
মধ্যরাতে করুণাময়ীতে মহানাটক নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর চাপানউতর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিকে হিটলারের জার্মানির সঙ্গে তুলান করে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ঘড়ির কাঁটা ১২টা পেরোতেই অ্যাকশন শুরু পুলিশের। চ্যাংদোলা করে আন্দোলনকারীদের তুলে দেওয়া হল অনশন মঞ্চ থেকে। আটকও করা হল বহু চাকরি প্রার্থীকে। মাত্র ২০ মিনিটেই এলাকা ফাঁকা করে দিল পুলিশ।
সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এবার মামলা দায়েরের অনুমতি পেলেন টেট প্রার্থীরা। শুক্রবার শুনানি।
করুণাময়ীতে টেট-আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। আসেন উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষও।
রাতে সল্টলেকের ধর্নামঞ্চে পৌঁছলেন বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। আন্দোলনকারীদের পাশে বসে পড়েন তিনি, তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন। উত্তর কলকাতার বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষও এদিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান।
বৃহস্পতিবারই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ১৪৪ ধারা মানতে হবে আন্দোলনকারীদের। এদিন সন্ধ্যায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের কোর্টের সেই অর্ডারে সই করানোর পরই নতুন কৌশল চাকরি প্রার্থীদের। পাঁচজন পাঁচজন করে আন্দোলনকারীরা বসেছেন ধরনাস্থলে।
বিস্তারিত পড়ুন: কোর্ট অর্ডারের কপিতে সই করেই কৌশল বদল টেট-প্রার্থীদের, পাঁচজন করে ভাগ হয়ে চলছে প্রতিবাদ
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চের দ্বারস্থ হতে চান তাঁরা। ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রধান বিচারপতির সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন: রাতেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করতে চান টেট আন্দোলনকারীরা
তাপসী নামে আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েেছেন। তাঁকে নিতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরিয়ে দিলেন তাপসী। তাঁর দাবি, বাড়িতে তাঁর আড়াই বছরের সন্তান রয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলে সবাই চিন্তায় পড়ে যাবেন। ফাঁকা জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে ঘোষণা শুরু করে পুলিশ। অবিলম্বে করুণাময়ীতে অবস্থানরত ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের উঠে যাওয়ার আবেদন করে তারা। না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও পুলিশ মাইকিং করতে থাকে। এদিকে পুলিশের এই ঘোষণার পরই আরও তীব্র হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের ঝাঁঝ। চাকরি প্রার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাণ থাকতে তাঁরা উঠবেন না।
বিস্তারিত পড়ুন : ‘১৪৪ ধারা আছে, আন্দোলনকারীরা উঠে যান’, মাইকিং শুরু পুলিশের; উর্দিধারীতে ছয়লাপ করুণাময়ী
হাইকোর্টের নির্দেশকে সামনে রেখে ঘোষণা করছে পুলিশ। অবিলম্বে এই স্থান পরিত্যাগ করতে হবে ২০১৪ টেট পরীক্ষার্থীদের, নাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ঘোষণার পর আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে গেল। কোনওভাবেই উঠতে রাজি না অনশন মঞ্চের চাকরিপ্রার্থীরা।
দিনভর আন্দোলনে উত্তপ্ত সল্টলেক চত্বর। বিকেলে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালের সাংবাদিক বৈঠকের পর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন ২০১৭ সালের টেট আন্দোলনকারী ঐক্য মঞ্চের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পর্ষদ সভাপতি আরও একবার জানিয়ে দিলেন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় সকলকেই অংশ নিতে হবে। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই নিয়োগ করা হবে বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল।
বিস্তারিত পড়ুন: ইন্টারভিউয়ে বসতেই হবে; অনড় পর্ষদ সভাপতি বললেন, ‘আমিও তো অনশনে বসতে পারি’
১৪৪ ধারা মেনে চলার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পর্ষদের আর্জি মেনে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জানিয়েছে, ১৪৪ ধারা মানতে হবে। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনীয় পুলিশ দিয়ে পর্ষদ অফিসে কর্মীদের ঢোকা বেরনোর ব্যাবস্থা করতে হবে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
২০১৮-র প্রার্থীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁদের নিয়োগের কথা বলেছিলেন। ২০১৭-র প্রার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তাঁরা বলছেন, দুটো বিজ্ঞপ্তি আলাদা, তাই দাবি, এক করা যায় না। তাঁদের দাবি, ২০১৭-র আন্দোলন নিয়ে তাঁদের কোনও বক্তব্য নেই, তাঁরা শুধু চান, মমতার ঘোষণা অনুযায়ী নিয়োগ হোক।
২০১৭-র প্রার্থীদের দাবি, সরকার বিভাজন করেছে। ২০১৪-র প্রার্থীদের নিয়োগ করা হলে তাহলে তাঁরা বঞ্চিত হবেন বলে দাবি ২০১৭-র প্রার্থীদের। তাঁদের দাবি, শূন্যপদ আরও বাড়িয়ে অবিলম্বে তাঁদের নিয়োগ করা হোক।
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে দেখা করেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর দাবি, কথা বলে তিনি বুঝতে পেরেছেন, নায্য দাবিতেই এই আন্দোলন চলছে। প্রত্যেকেরই চাকরি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
২০১৪ বনাম ২০১৭-র চাকরি প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে সুকান্ত জানিয়েছেন, সরকার যে তথ্য দিয়েছে, তাতে লক্ষাধিক শূন্যপদ রয়েছে। তাই ২০১৪ ও ২০১৭-র চাকরি প্রার্থীদের চাকরি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ১৪-র প্রার্থীদের ওই বছরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ও ১৭-র প্রার্থীদের ওই বছরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরি হওয়া উচিত।