কলকাতা: এ যেন বাবার চেয়ারেই ছেলের অভিষেক। মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আইপিএস সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নব্বইয়ের দশকে সঞ্জয়ের বাবা প্রয়াত অরুণ প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন রাজ্য পুলিশেরই ডিজি। প্রায় তিন দশক পর বাবার চেয়ারে অভিষেক সঞ্জয়ের। অরুণবাবু শুধু ডিজি নয়, সিবিআইয়ের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন। অবসরের পর হয়েছিলেন মিজোরামের রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শদাতার দায়িত্বেও ছিলেন। তাই সঞ্জয়ের কাঁধে এখন শুধুই রাজ্য পুলিশের ডিজির দায়িত্ব নয়, বাড়তি দায়িত্ব বাবার সুনাম বজায় রাখাও।
১৯৮৯ ব্যাচের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ক্যারিয়ারও প্রথম থেকে সাফল্যে মোড়া। এখনও তেমন কোনও বিতর্কে জড়াননি তিনি। রাজ্য পুলিশে এডিজি সিকিউরিটি, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার, এডিজি সিআইডি থেকে শুরু করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। ডিজি হওয়ার আগে রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের প্রশাসক বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে ছিলেন সঞ্জয়। সেখানে থেকেও রাজ্য ফরেনসিক বিভাগের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিবিআই-তেও চাকরি করেছেন সঞ্জয়। কলকাতায় সিবিআই-এর স্পেশাল ইউনিটের এসপি পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদে বহাল তিনি। তাও লোকসভা নির্বাচনের আগে।
ডিজি পদে সঞ্জয় দায়িত্ব নিতেই তাঁকে নিয়ে পুলিশমহলে শুরু হয়েছে জোরদার আলোচনা। বাবার সুনাম বজায় রাখতে পারবেন তো সঞ্জয়? রাজ্য পুলিশের সঠিক ব্যবহার করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবেন তো? অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করছে এ প্রশ্ন। এদিকে সঞ্জয়বাবুর গোটা পরিবারেই কেউ IAS, তো কেউ IRS। দাদা ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায় আমলা ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে বিশ্বব্যাঙ্কে যোগ দেন। বর্তমানে ওয়াশিংটনে কর্মরত। তাঁর বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি পদ থেকে ১৯৯১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর ১৯৯৭ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তর পরামর্শদাতা হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২৯ জানুয়ারি অল্প ক’দিনের জন্য মিজোরামের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন। দার্জিলিংয়ে নকশাল আন্দোলন মাথাচাড়া দেওয়ার সময় তিনি ছিলেন সেখানকার পুলিশ সুপার। সেই অভিজ্ঞতা উপর তাঁর একাধিক বইও রয়েছে যা পুলিশ প্রশিক্ষণের সময় পড়ানো হয়।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজীব কুমারকে অপসারণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিবেক সহায়কে ডিজি করা হয়েছিল। তাঁর ডিজি পদে দায়িত্ব নেওয়া অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও পুলিশে একটা নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছিল। গুজরাট পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে ডিজি হয়েছিলেন আপন দুই ভাই। কিন্তু, মে মাসে ভোট চলাকালীনই বিবেকের তার অবসরের সময় থাকায় তার জায়গায় সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রেও পুলিশমহলে আলোচনায় সেই ডিজির পরিবার।