‘শিক্ষকরা রাস্তায় থাকলে যা হওয়ার তাই হয়েছে’, উত্তরপত্রে ‘পুসপারাজ’ দেখে স্তম্ভিত বাংলার শিক্ষামহল
Students: 'কোনও দিন পড়ুয়ারা মাস্টারদাকে 'কেষ্টদা' না ডেকে বসে।' এমনটাই বললেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, এর থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। মানুষের ভরসা যে হারাচ্ছে, সেটাই মনে করছেন তিনি।
কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির কচকচানি তো অনেক হয়েছে। রাঘব-বোয়ালদের জেল-জামিনও হল। কিন্তু পড়াশোনার কী হাল! কেমন চলছে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি। মাঝে মধ্যেই শোনা যায়, ক্লাসরুমের বেহাল দশা, শিক্ষকের অভাবের অভিযোগ। এইসবের মাঝে পড়ুয়াদের অবস্থা ঠিক কেমন? আদৌ কতটা পড়াশোনা হচ্ছে তাদের? তৈরি হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড? একটি পরীক্ষার খাতাই তুলে ধরছে সেই ছবিটা।
কলকাতা সংলগ্ন একটি এলাকার স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পরীক্ষার খাতা প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে একটি প্রশ্ন রয়েছে, ‘মাস্টারদার পুরো নাম কী?’ উত্তরটা সবারই জানা। মাস্টারদা সূর্য সেন। কিন্তু এই খাতায় উত্তরে লেখা হয়েছে ‘পুসপারাজ’। সম্প্রতি ‘পুষ্পা’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এই উত্তরের সঙ্গে তারই মিল খুঁজে পাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা। সূর্য সেন তো দূরের কথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে দূর পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই এই উত্তরের।
এখানেই শেষ নয়। এভাবেই একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে এক পড়ুয়া যা লিখেছেন, তা দেখে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চক্ষু চড়কগাছ। বাবা-মায়ের মধ্যে কবে ঝগড়া হিয়েছিল, সেই গল্প লিখে দিয়েছে সে। খাতায় কি এসব হিজিবিজিই লিখছে পড়ুয়ারা! শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এটাই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ছবি।
শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, “এটা সামগ্রিক অবক্ষয়ের একটা চেহারা। গত এক দশকে শিক্ষক নিয়োগ সহ সব ক্ষেত্রেই খামতি রয়েছে। আর সেটা ধরা পড়ছে পড়াশোনার উপর।” তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, দিনের পর দিন যোগ্য শিক্ষকরা রাস্তায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই কারণেই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। পড়াশোনার উপর প্রভাব পড়ছে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এই ছবি দেখে হতাশ। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “শিক্ষকরা যদি রাস্তায় থাকেন, আন্দোলন করতে বাধ্য হন, তাহলে এরকমই হবে। কোনও দিন পড়ুয়ারা মাস্টারদাকে ‘কেষ্টদা’ না ডেকে বসে।” তাঁর কথায়, এর থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। মানুষের ভরসা যে হারাচ্ছে, সেটাই মনে করছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলালের দাবি, ট্যাব দিয়ে শিক্ষার মান উন্নত করা যায় না। তিনি বলেন, “একজন শিক্ষিকা হিসেবে এগুলো দেখতে কষ্ট হয়। পরিকাঠামো উন্নয়ন দরকার। মিড ডে মিলেরও টাকা বাড়াতে হবে। তবেই সব ঠিক হবে।”