‘বার্ন আউট’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সৌরভ, এরপরই …
ম্যাচের চাপ নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল বলেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক। ৪৮ বছর বয়সে এসে সেই সৌরভের 'চাপ নেওয়া' নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
কলকাতা: ১৯৯৮, ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ ফাইনাল। ভারত বনাম পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দুরন্ত ১২৪ রান করে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Saurav Ganguly)। ৩১৬ রান করে সেই ম্যাচ ১ বল বাকি থাকতেই জিতেছিল ভারত। তখন অবশ্য আজহারউদ্দিন অধিনায়ক। আর তাঁর বয়স ছিল ২৬। তবে, পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যাবে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্যাপ্টেন থাকাকালীন এরকম একাধিক ম্যাচ একাই শত্রুর গ্রাস থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন। তার থেকে বড় কথা, ম্যাচের চাপ নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল বলেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক। ৪৮ বছর বয়সে এসে সেই সৌরভের ‘চাপ নেওয়া’ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেক দিন আগেই। কিন্তু ব্যস্ততা কমেনি। টেলিভিশনের অ্যাঙ্কর থেকে বিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট। সৌরভ সর্বত্রই। এমন একজন ‘মাল্টি টাস্কার’ ব্যক্তির হঠাৎই হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। রবিবার সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য জানান, সৌরভকে যেন মানসিক চাপ না নেওয়া দেওয়া হয়। তাঁর এই মন্তব্যে জল্পনা আরও প্রশস্ত হয়। সম্প্রতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, অশোকবাবু কি সেই দিকে ইঙ্গিত করছেন? কিন্তু প্রশ্ন, এই মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে, সৌরভের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে না তো?
ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির সহ-সম্পাদক, মনোরোগ চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস একটি অন্যতম ঝুঁকি হিসাবে কাজ করে। স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণে সেরোটোনিনের কার্যকরিতা কমে যায়। স্ট্রেস বাড়লেই বার্ন আউট হয়। বার্ন আউটের পরে হয় ডিপ্রেসন।” কী এই বার্ন আউট? চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য জানালেন, ‘চাপের মুখে ঝলসে যাওয়া’ হল বার্ন আউট। একজন মানুষ অগোচরে কখন এই পর্যায়ে পৌঁছে যান, তা নিজেই জানতে পারেন না।
কিন্তু কেন এই ‘বার্ন আউট’ পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়?
সৌরভ ‘মাল্টি টাস্কার’ বলেই এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন, অভিমত বিশেষজ্ঞদের। রঞ্জনবাবু বলছেন, “যাঁরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেন তাঁদের সবসময় একটা অ্যানজ়াইটি চলতে থাকে। তাঁদের হৃদস্পন্দনও বেশি হয়। স্ট্রেসের ফলেই সেরেটোনিনের কার্যকরিতা কমে নর অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এই ধরনের ব্যস্ত মানুষদের ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থাতেই চুঁইয়ে চুঁইয়ে অ্যাড্রিনালিন বাড়তে থাকে।”
তাহলে উপায়?
বিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে রঞ্জনবাবুর দাওয়াই, এখন কয়েকটা দিন মেডিটেশন করতে হবে তাঁকে। যোগা করতে হবে। তিন চার প্রকারের মেডিটেশন প্রয়োজন। রিলেক্সেসন এক্সসারসাইজ, ডিপ ব্রিদিং এক্সসারসাইজ, নিজের শরীরে প্রত্যেকটা মাংসপেশিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত জীবনে যেতে হবে তাঁকে। ‘দাদা’ বাউন্স ব্যাক করতে পারবেন চিকিৎসকরাও নিশ্চিত। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে জানা গিয়েছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেন। শারীরিক পরিশ্রমও করে থাকেন। তারপরও কেন এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হল মহারাজকে। সেই ঘুরে ফিরে মানসিক চাপের কথাই উঠে আসছে বিশেষজ্ঞদের মুখে।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর রোড শো-তে ‘না’ লালবাজারের
সৌরভ অসুস্থ হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের অনেক ব্যক্তিই তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। সৌরভের আরোগ্য কামনা করেছেন ডান-বাম নির্বিশেষে। সম্প্রতি সৌরভের সঙ্গে বিজেপি যোগের জল্পনা চলে আসায়, মানসিক চাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই রাজনীতিতে পোড় খাওয়া বাম বিধায়কের ‘রাজনৈতিক দাওয়াই’, তিনি যেন ভুল করে এমন সিদ্ধান্ত না নেন!