কলকাতা: সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর প্রশ্নের মুখে এসএসকেএম (SSKM Hospital) হাসপাতাল। তাঁর আইনজীবী মনিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক অভিযোগ, “জুনিয়র ডাক্তাররা এসে পাম্প করছিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা ছিলেন না। যখন ব্যথা হচ্ছিল, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কেউ ছিলেন না।”
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলছেন, কোনও চিকিত্সক ছিলেন না। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে কোথায় ছিলেন চিকিত্সকেরা? শহরের অন্যতম সরকারি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের পরিকাঠামো কেমন? অন্যদিন সন্ধ্যায় সিনিয়র চিকিত্সকরা থাকেন? নাকি কালীপুজোর সন্ধ্যা বলেই কেউ ছিলেন না? একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যদি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ ঘটনার কথা অস্বীকার করছে না। তাঁরা বলছেন, ঘটনার সময়ে মেডিক্যাল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা ওয়ার্ডে ছিলেন না। সন্ধ্যেবেলার রাউন্ড শেষে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখে যান তাঁরা। সন্ধ্যার পর যে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটতে পারে, এমন কোনও ইঙ্গিতই পাননি বিশেষজ্ঞরা। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, যখন সুব্রত মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁর হৃদপিণ্ড ঠিকমতো কাজ করছিল না। তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট ছিল।
তাঁকে স্টেইন বসানোর পর ৪৮ ঘণ্টা চিকিত্সকরা পর্যবেক্ষণে রাখেন। স্টেইন বসানোর আগে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকবার হৃদপিণ্ডের গতির ছন্দপতন অর্থাত্ হার্ট অ্যারিথমিয়া হয়ে যায়। কিন্তু সোমবার স্টেইন বসানোর পর মঙ্গল ও বুধবার তাঁর হৃদপিণ্ডের ছন্দপতন ঘটেনি। সন্ধ্যায় চিকিত্সকরা দেখে বলেছিলেন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন। আজ, শুক্রবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আচমকাই তাঁর হার্ট অ্যারিথমিয়া হয়। তার কারণ হিসাবে চিকিত্সকরা বলছেন, আর্টারি, হৃদপিণ্ডের মাংসপেশি আগের থেকেই অনেক বেশি দুর্বল ছিল। সেই কারণেই এটা ঘটেছে। এসএসকেএমের বক্তব্য, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা হয়তো ছিলেন না, কিন্তু বাকি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল আজ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হার্ট অ্যারিথমিয়া। মুহূর্তে সব শেষ। ২৪ অক্টোবর প্রবল শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগের উপসর্গ নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। চিকিত্সা চলছিল আইসিসিইউতে। হৃৎপিণ্ড ঠিকমতো পাম্প না করায় বাইপ্যাপে চিকিত্সা চলছিল। ভর্তির সময় থেকেই একাধিক হার্ট অ্যারিথমিয়া হয় তাঁর। একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি অর্টারিয়াল ডিজিজে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীও দুর্বল ছিল। সোমবার বুকে দুটি স্টেন্ট বসানো হয়। তারপরের দুদিন হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন ঘটেনি। গতকাল সন্ধ্যায় মেডিক্যাল বোর্ডের দুই সদস্য চিকিত্সকের ভিজিটের সময়ও সুস্থ ছিলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা সন্ধ্যা ৬.৪৫ নাগাদ হাসপাতাল ছাড়তেই বিপত্তি। সেই লড়াই থেকে আর ফিরতে পারলেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১১ দিনের লড়াই শেষে না ফেরার দেশে পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘সিনিয়র ডাক্তাররা ছিলেন না’, কালীপুজোর সন্ধ্যা বলেই কি এমন? সুব্রতর আইনজীবীর বিস্ফোরক অভিযোগ
আরও পড়ুন: বাংলা কংগ্রেসের ত্রিমূর্তি প্রিয়-সুব্রত-সৌমেন আর রইলনা না, চলে গেল !