‘দেখা হবে আদালতে’, বদলি রুখতে এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ বিষপান করা শিক্ষিকারা
এসএসকে ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে কাজের রীতি ভাঙার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন জোৎস্না টুডু, শিখা দাস, পুতুল জানা-মণ্ডলরা।
কলকাতা: বিগত কয়েক বছরে শিক্ষক বা হবু শিক্ষকদের কম প্রতিবাদ-আন্দোলন দেখেনি রাজ্য। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাশ ভবনের সামনে যা ঘটেছে, তা ছিল একপ্রকার নজিরবিহীন। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই কার্যত বিষপান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন ৫ শিক্ষিকা। এঁদের মধ্যে দু’জন এখনও বিপদমুক্ত নন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই শিক্ষিকাদের মামলার জল এ বার গড়াল হাইকোর্টে। শিক্ষা দফতরের এসএসকে ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে কাজের রীতি ভাঙার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন জোৎস্না টুডু, শিখা দাস, পুতুল জানা-মণ্ডলরা।
এসএসকে শিক্ষিকাদের যেই আন্দোলন মূলত স্থায়ীকরণের দাবিতে শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনই এখন বদলি আটকানোর দাবিতে চলে এসেছে। অভিযোগ, আন্দোলনের সুর দমাতে বাড়ি থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে উত্তরবঙ্গে তাঁদের বদলি করা হচ্ছে। কোন আইনে এই বদলি করা হয়েছে এই মামলায় সেটা জানতে চেয়েছেন মামলাকারীরা। এর পাশাপাশি এসএসকে ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের কাজের রীতি ভাঙারও অভিযোগ তোলা হয়েছে। মেরেকেটে ১০ হাজার চাকরির বেতন। এই বেতনে যদি আবার কয়েকশো কিলোমিটার দূরে উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হয়, তবে সংসার চলবে নাকি পেট?
ঠিক সেই কারণেই বদলির সিদ্ধান্ত আটকাতে এ বার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই পাঁচ শিক্ষিকা-সহ বদলি হওয়া বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই মামলাটি শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। বারে বারে একাধিক দুয়ার ঘুরেও বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার না হওয়ার কারণেই বিকাশ ভবনের সামনে বিষপান করতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই শিক্ষিকারা। এ বার আদালতে গিয়ে যদি সুরাহা হয়, এই প্রত্যাশা থেকেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিষপান করা ৫ শিক্ষিকার মধ্যে দু’জন সঙ্কটজনক অবস্থায় রইলেও শারীরিক অবস্থার খুব একটা অবনতি হয়নি বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। একজন ভর্তি রয়েছেন এনআরএস, অপরজন আরজিকর হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, অর্গানোফসফরাস জাতীয় কীটনাশক খেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। যা সাধারণত চাষের কাজে ব্যবহার হয়। অন্যদিকে, পাঁচ শিক্ষিকার পাকস্থলী থেকে যা উদ্ধার হয়েছে, সেটা ফরেন্সিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে যে বিষের শিশি উদ্ধার হয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের রিপোর্ট মিলিয়ে নেওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ বলে খবর হাসপাতাল সূত্রে।
বিতর্কিত এই ঘটনায় বিতর্ক অবশ্য আরও বেড়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্যে। সেই পাঁচ শিক্ষিকাকে ‘বিজেপি ক্যাডার’ বলে তোপ দাগেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই ঘটনা অনভিপ্রেত বলে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টও করেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী আছেন, মহিলাদের আরও সন্মান বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে শিক্ষিকাদের। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে?” আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: কেন বিষ খেলেন পাঁচ শিক্ষিকা? দাবি কীভাবে বদলে গেল আন্দোলনে?