কলকাতা: কংগ্রেসের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান রয়েছে তৃণমূলের (TMC)। সর্বভারতীয় স্তরে তাদের ছাড়া জোটও চায় না ঘাসফুল শিবির। কিন্তু এ কংগ্রেস (Congress) আর আগের কংগ্রেসের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই যদি জোট হয়-ও, সেক্ষেত্রে রাশ তারা নিজেদের হাতেই রাখবে। শনিবাসরীয় জাগো বাংলার (Jaago Bangla) সম্পাদকীয়তে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে রাখল তৃণমূল। যেখানে কংগ্রেসকে আত্মসমালোচনা করার কথা বলা হয়েছে, সেই সঙ্গে মমতা-রাজীব সুসম্পর্কের কথাও সেখানে জায়গা পেয়েছে। ‘আসল কংগ্রেস’ শীর্ষক এই সম্পাদকীয়র ছত্রে ছত্রে তৃণমূল বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, জাতীয় স্তরে যে ভূমিকা এই মুহূর্তে কংগ্রেসের নেওয়ার কথা, তা আসলে তৃণমূলই নিয়েছে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে গত দশকের শেষ সময়ের তুলনা টানা হয়েছে এ দিনের সম্পাদকীয়তে। যে সময় কংগ্রেস ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন, সেই সময়ের কথা মনে করানোর চেষ্টা হয়েছে। সেই সময় যেভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে লড়ে উঠতে পারেনি, আজ একই ভাবে জাতীয় কংগ্রেসও দিল্লিতে বিজেপির সঙ্গে মোকাবিলা করে উঠতে পারছে না। তাই বিরোধিতার যে শূন্যস্থান কংগ্রেস তৈরি করেছে, সেটা ভরাট করে তৃণমূলই কংগ্রেস সমর্থকদের জন্য ‘আসল কংগ্রেস’ হয়ে উঠেছে। লেখা হয় এমনটাও। একই সঙ্গে বারংবার উল্লেখ করা হয়, ‘কংগ্রেস নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে’। এখানেই থেমে না থেকে তৃণমূলকে ‘সমুদ্র’, এবং কংগ্রেসকে ‘পচাডোবা’ বলেও লেখা হয়।
কংগ্রেস যদি ‘আত্মবিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সমস্যা’ উপলব্ধি না করতে পারে, তবে ২০২৪ সালেও ১৯ এবং ১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা যে পুরোদস্তুর, সেটা বুঝতে বাকি নেই তৃণমূলের। তাই কংগ্রেস না বুঝলে তৃণমূলই সেই ভূমিকা নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে শাসকদলের মুখপাত্র। সম্পাদকীয়র একেবারে শেষ লাইনে লেখা হয়েছে, “কংগ্রেসকে সম্মান দিয়েও আমাদের রণকৌশল আমাদেরই ঠিক করতে হবে।” অর্থাৎ তৃণমূলের বার্তা সাফ, চব্বিশের প্রস্তাবিত বিরোধী জোট কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে হবে না ঠিকই, কিন্তু সিদ্ধান্তের ব্যাটন সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই থাকবে।
যদিও কংগ্রেস তৃণমূলের এই ইচ্ছাকে কতটা গুরুত্ব দেবে সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে মমতার কট্টর সমালোচক অধীর চৌধুরীই রয়েছেন। যিনি আজ এই সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলেন, “আপনি ইতিহাস অস্বীকার করতে পারেন না। যে রাজনৈতিক দল আপনাকে মাতৃত্বের কাজ করেছে, আপনি সেই দলকে অস্বীকার করছেন। যে দলটাকে যখন আপনি যা খুশি তাই বলতে পারেন, তখন মানুষের সমর্থন নিয়েও যে আপনি ছিনিমিনি খেলবেন, এটা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।”
আরও পড়ুন: Sukanta Majumdar: ঘিরে থাকবেন ৩৫ জন রক্ষী! জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা সুকান্তর, খোঁজা হচ্ছে নতুন বাড়িও
বিজেপিও গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে। পদ্মশিবিরের সহ-সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা যায়, “২০১১ সাল পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে কোনও শক্তি বলেই মনে করেন না। কংগ্রেসের প্রতি তাঁর কোনও শ্রদ্ধাই নেই। কিন্তু দিল্লিতে আবার কখনও চা-চক্র, কখনও ডিনারে চলে যাচ্ছেন। এটা চলছে। এখানে যারা কংগ্রেসে রয়েছেন, তাঁদের ঠিক করতে হবে তাঁরা ঠিক কী চান।”
আরও পড়ুন: ‘উন্নয়ন বয়ে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে,’ ভবানীপুরের জলযন্ত্রণার ছবি দিয়ে কটাক্ষ শুভেন্দুর