TMC on Governor Jagdeep Dhankhar: ‘রাজ্যপালের কথা শুনলে মনে হয়, টুলের উপর দাঁড়িয়ে কোনও বিজেপি নেতা স্ট্রিট কর্ণারে বক্তৃতা দিচ্ছেন’
Municipal Elections 2021: শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টে পুরভোট সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া ও বালি পুরসভা সংক্রান্ত যে বিল তাতে সই করেছেন রাজ্যপাল।
কলকাতা: রাজ্য-রাজভবন সংঘাত নতুন নয়। সম্প্রতি হাওড়া পুরনিগমের বিল নিয়ে এই সংঘাত তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সাফ জানিয়েছেন, তিনি কোনওভাবেই হাওড়া পুরনিগম সংক্রান্ত কোনও বিলে সই করেননি। অথচ, হাইকোর্টে এজি যখন দাবি করেছেন, এই বিলে সই করেছেন খোদ রাজ্যপালই। রবিবার, দার্জিলিঙ যাওয়ার পথে এ নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল (Jagdeep Dhankhar)। তাঁকে নিশানা করেই এ বার পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল (TMC)।
তৃণমূলের কটাক্ষ
তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, রাজ্যপালের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বিজেপির পক্ষেই কথা বলেন। কিন্তু রাজ্যপালের থেকে এরকম আচরণ কাম্য নয়। কুণালের কথায়, “রাজ্যপালের কথা শুনলে মনে হয়, টুলের উপর দাঁড়িয়ে কোনও বিজেপি নেতা স্ট্রিট কর্ণারে বক্তৃতা দিচ্ছেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “রাজ্যপালকে এত অসহিষ্ণু হলে চলে না। তাঁর আচরণ কোনওভাবেই রাজ্যপাল-সুলভ নয়।”
অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের মন্তব্য, “ওঁ (রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়) তো নিজেকে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। তাহলে নিজে দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখেন কেন! একটা বিল নিয়ে এত জলঘোলা কেন হবে! কেন বিল আটকে রাখবেন তিনি? ওঁর আচরণ বিজেপি নেতাদের মতো। আমরা আগেই বলেছি, রাজ্যপাল তাঁর পদের গরিমা নষ্ট করছেন।”
রাজ্যপালকে সমর্থনে পদ্মশিবির
যদিও, এই অভিযোগ মানতে নারাজ পদ্ম শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমরা যতদূর জানি, এই বিলের বিষয়ে রাজ্যপাল তাঁর মতামত বা পরামর্শ দিতে পারেন। এমনকী, তিনি প্রশ্নও তুলতে পারেন। বিল আইনে পরিণত করতে রাজ্যপালের কনসেন্ট দরকার।”
রাজ্যপালের দাবি
হাওড়া পুরনিগমের বিল নিয়ে রাজ্যপালের দাবি, তাঁর কাছে যে বিলের তথ্য এসে পৌঁছেছে তাতে তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। সেইমতো নবান্নে তিনি পাল্টা ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান। অথচ সেই জবাব এসে পৌঁছয়নি। পাশাপাশি ধনখড়ের আরও দাবি, হাওড়া ও বালি পুরনিগমের বিভাজন সংক্রান্ত কোনও বিলেই সই করেননি তিনি।
ঘটনায় রাজ্যপালের মন্তব্য, “বাংলায় গণতন্ত্র বিপন্ন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আমাকে কোনও সহযোগিতা করছেন না। বারবার বলার পরেও রাজ্যের তরফে কোনওরকম সহযোগিতা করা হয়নি। আমি এমন আচরণ দেখে অবাক!”
হাওড়া পুরবিল বিতর্ক
প্রসঙ্গত, শনিবার টুইট করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জানান, ‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফৎ আমি জানতে পারছি হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২১-এ নাকি আমি সই করেছি। এ খবর একেবারেই ঠিক নয়।’ একই সঙ্গে রাজ্যপাল আরও ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২১ নিয়ে।
কিন্তু শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টে পুরভোট সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া ও বালি পুরসভা সংক্রান্ত যে বিল তাতে সই করেছেন রাজ্যপাল। তাই সেখানে ভোট হতে আর কোনও সমস্যা নেই। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চেই এ কথা জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল।
প্রশ্ন এখানেই, রাজ্যপাল বলছেন তিনি কোনও বিলে সই করেননি। অথচ রাজ্যের এজি তা হলে কোন তথ্যের ভিত্তিতে আদালতে এই দাবি করলেন। শুক্রবারও টুইট করেছিলেন রাজ্যপাল। সেখানে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এমন কোনও বিলে তিনি সই করেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘হাওড়া পুরনিগম সংক্রান্ত বিলের বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন।’ শনিবার তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন কোনও বিলে তিনি সই করেননি।
হাওড়ার ভোট নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল প্রথম থেকে। কারণ, এতদিন হাওড়া পুরসভার অধীনেই ছিল বালি পুরসভা। বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়ার মোট ওয়ার্ড ছিল ৬৬টি। গত ১২ নভেম্বর বালিকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা অধিবেশনে বিল আনা হয়। ‘মাইক্রো লেভেলে নাগরিক পরিষেবা’ পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়। কিন্তু বিল পাশ করানো হলেও রাজ্যপালের সই ছাড়া তা আইন হচ্ছেল না।
এদিকে সংশোধনী বিল পাশ হলে তার পরে আইন করে বালি পুরসভা আলাদা হবে। বালিকে ধরে হাওড়ায় মোট ৬৬টি ওয়ার্ড। বালি আলাদা হলে সেখান থেকে ১৬টি ওয়ার্ড বাদ যাবে। বাকি ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়া পুরসভা হবে। কিন্তু যখন ভোটের কথা বলা হয়েছিল তখন হাওড়া ৬৬টি ওয়ার্ডের কথা বলা ছিল। এ নিয়েও একটা জটিলতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দিদিকেই বরং রাজ্যপাল করে দেওয়া হোক!’