কলকাতা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে (Visva Bharati University) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘রাজনৈতিক দলগুলির প্রবেশ এবং বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ’ নিয়ে এ বার মারাত্মক ক্ষোভপ্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court)। তিন পড়ুয়াকে বহিষ্কারের মামলার শুনানিতে অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অত্যন্ত কড়া পর্যবেক্ষণ করে আদালত। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জানান, ‘রাজনৈতিক দল এবং বহিরাগতরা’ রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া সুযোগের অপব্যবহার করেছে।
এই মামলায় তিন পড়ুয়াকে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করার পাশাপাশি আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ওই পড়ুয়ারা ক্লাসেও যোগ দিতে পারবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের প্রজনন-ভূমির মতো করে অপব্যবহার করছে। ফলস্বরূপ ক্লাস বা অন্যান্য শিক্ষামূলক কর্মসূচি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সময়ে পরীক্ষা হচ্ছে না, সময় মতো রেজাল্ট বেরোচ্ছে না। পড়ুয়ারা বাধ্য হচ্ছেন রাজ্যের ভিতরে বা বাইরে অন্য কোনও বেসরকারি সংস্থায় ভর্তি হতে। সেই জায়গাগুলোয় তাঁদের (পড়ুয়াদের) কাস্টমার হিসেবে গণ্য করা হয়। কেউ কেউ আবার অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়েও দেন। যে বাবা-মায়েরা নিজেদের রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য পরিশ্রম করেন, তাঁরা নিজেদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। এবং একটা গোটা জাতি অন্ধকারাচ্ছন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকে।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের ক্ষেত্রে যাতে কোনও ভাবে রাজনৈতিক দলের কোনও যোগ না থাকে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলেছেন বিচারপতি। যে কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে যাতে সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি সঠিকভাবে করা হয়, সেই বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের বরখাস্ত করার বিষয়টি নিয়ে আদালত জানিয়েছে যেন, ১৫ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিন পড়ুয়া এবং অধ্যাপকের সাসপেন্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলন চরমে ওঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তীকে টানা ছয় দিন ঘেরাও করেন পড়ুয়ারা। অচলাবস্থা জারি হয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। বিক্ষোভের জেরে মামলা গড়ায় আদালতে। সংশ্লিষ্ট মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জানান, “উপাচার্য আইনের উর্ধ্বে নন।” বহিষ্কৃত তিন পড়ুয়াকে অবিলম্বে ক্লাসে ফেরানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: RG Kar-এ হচ্ছেটা কী? খোঁজ নিলেন মমতা! ‘স্যরের’ পাশে দাঁড়িয়ে হবু ডাক্তাররা বললেন…
সেই নির্দেশ অনুসারে, শুক্রবার রাতেই ৩ বহিষ্কৃত পড়ুয়াদের ক্লাসে যোগ দিতে দেওয়ার জন্য় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়ে অধ্য়ক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) প্রোক্টর শঙ্কর মজুমদার। কিন্তু, গোটা একদিন কেটে গেলেও ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিন বহিষ্কৃত পডুয়া।
আরও পড়ুন: Mystery Fever: শিশুদের উপর কি তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের হানা? অবশেষে জানাল স্বাস্থ্য ভবন