কলকাতা: TV9 বাংলার খবরের জের। উত্তর ২৪ পরগনার ছোট জাগুলিয়ার স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন ‘দুর্নীতির’ খবর TV9 বাংলায় সম্প্রচার হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসল নবান্ন। শুক্রবার রাতেই সবার প্রথম TV9 বাংলায় এই খবর সম্প্রচারিত হয়। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অভিযুক্ত বিএমওএইচ সব্যসাচী রায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, অভিযুক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নবান্নর তরফে স্বাস্থ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযুক্তকে যেন অবিলম্বে সাসপেন্ড করা হয়।
অভিযুক্ত বিএমওএইচ অবশ্য এখনও নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন, টিকা দেওয়ার জন্য কোনও টাকা তিনি নেননি। যদিও শুক্রবার যে অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল, সেখানে ওই চিকিৎসককেই অপর এক সমাজকর্মীকে বলতে শোনা যায়, তিনি যেন সেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ৬০০ টাকা ফিরিয়ে দেন যা টিকা দেওয়ার বিনিময়ে নেওয়া হয়েছিল। সব্যসাচী রায় শনিবার TV9 বাংলার ক্যামেরার সামনে দাবি করেন, তিনি ভয় পেয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে প্রৌঢ় যুগলের দুয়ারে গিয়েছিলেন।
সব্যসাচীর দাবি, “আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু হাসপাতাল থেকে টিকা দেওয়ার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গিয়েছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমি ভ্যাকসিন দিতে যাই। আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল যে ভ্যাকসিন দিতে হবে নাহলে দেখে নেব। কিন্তু আমি কোনও আধিকারিককে জানাইনি, এটাই আমার ভুল হয়েছিল। কিন্তু এর পিছনে কোনও টাকা বা কোনও সুবিধা নেওয়া হয়নি।”
গোটা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল শুক্রবারই। ছোট জাগুলিয়ার এক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ‘টিকা চুরি’ হয়ে পৌঁছে যায় কলকাতা এয়ারপোর্টের কাছে। এমনকী, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে দুয়ারে গিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সংক্রান্ত একটি অডিয়ো ভাইরাল হয়ে তা রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের মুঠোফোনেও পৌঁছে যায়। এরপরই ঘটনার শিকড়ে পৌঁছে গোটা চক্র ফাঁস করে TV9 বাংলা।
ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পরই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি করেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও এক সমাজসেবীর অনুরোধে তিনি বাড়ি গিয়ে টিকা দিয়েছেন। প্রশ্ন ওঠে, এমন কী পরিস্থিতি হয়েছিল যে, বারাসত এক নম্বর ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক দফতরের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক নম্বর এয়ারপোর্টের বাসিন্দার বাড়ি গিয়ে টিকা দিলেন? সূত্রের খবর, এক প্রৌঢ় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তিনি ভ্যাকসিন দিয়েছিলেন। যার বদলে প্রাথমিকভাবে টাকাও নেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি ভাইরাল হতেই অভিযুক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক সেই সমাজকর্মীকে ফোন করে বলেন, টাকা ফেরত দিয়ে আসতে।
ভাইরাল অডিয়োতে অভিযুক্ত চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, “ওই বুড়ো-বুড়িকে ৬০০ টাকা ফিরিয়ে দিও, আমি তোমাকে রিটার্ন করে দেব। বুড়ো-বুড়িকে ফোন করে বলে দিও, আপনারা কাউকে বলবেন না যে টাকা-পয়সা দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যত রাতই হোক টাকাটা ফিরিয়ে দিও। আর বলে দিও যে (টিকা) এখান থেকে নেয়নি, বারাসত ছোট জাগুলিয়ে থেকে নিয়েছে, এটুকু বলতে। তাহলে তুমিও বিপদে পড়বে না, আমিও বিপদে পড়ব না। এটা যদি পার পেয়ে যাই আর কোনও অসুবিধা থাকবে না।”
TV9 বাংলায় এই খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পরই দ্রুত পদক্ষেপ করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়কে। সেই রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটল নবান্ন। আরও পড়ুন: Video: ‘বুড়ো-বুড়িকে ৬০০ টাকা ফিরিয়ে দিও…’, শহরে ফের টিকা ‘দুর্নীতির’ পর্দাফাঁস TV9 বাংলায়