কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একযোগে ইডি-সিবিআই তদন্ত চলছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে, চাকরি গিয়েছে প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের। একের পর এক শিক্ষা-কর্তার গ্রেফতারি। এসবের মধ্যে আজ রবিবার ১১ ডিসেম্বর প্রাথমিকের টেট (Primary TET)। রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ৪৬০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিতর্ক এড়াতে থাকছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি সেন্টারে থাকছে সিসিটিভির নজরদারি। রাখা হচ্ছে পুলিশ। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য ছুটির রবিতেও বাড়তি বাস, ট্রেন এবং মেট্রোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন বেলা ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। তবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে। সকাল ১১টার মধ্যে ঢুকতে হবে পরীক্ষাকেন্দ্রে। সাড়ে ১১টা থেকে অ্যাডমিট কার্ড ও পরিচয়পত্র পরীক্ষা করবেন পরিদর্শক। পরীক্ষার্থীরা টেস্ট বুকলেট হাতে পাবেন পৌনে ১২টায়। পরীক্ষা শেষ বেলা ২.৩০ মিনিটে। অন্যদিকে সেন্টার ইনচার্জ যাঁরা তাঁরা প্রশ্নপত্র পাবেন ১১টায়। তার আগে পর্যন্ত স্থানীয় থানায় থাকবে প্রশ্নপত্র।
অবশেষে তীর্থপতি ইনস্টিটিউটে পৌছালেন পর্ষদের আধিকারিকদের একটি দল। শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক নেওয়ার প্রক্রিয়াও। এলাকায় এখনও মোতায়েন রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর অবশেষে টেটের বায়োমেট্রিক করাতে পারলেন ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা।
এবারের টেটে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৪৭৩ জন পরীক্ষা দিয়েছেন। মোট হিসেবে পরীক্ষার্থীর শতকরা হার ৮৯.৩৬ শতাংশ। প্রায় ১০ হাজারের বেশি বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থী ছিলেন এবার। জানালেন পর্ষদ সভাপতি।
বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক অবশ্য পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল যোধপুর পার্কের তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনের সমস্যার বিষয়টি স্পষ্ট করেন। বলেন, “ইলেকট্রনিকস ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে। তীর্থপতি ইনস্টিটিউটে হলে ছবি নেওয়া হয়েছে, আইডেন্টিটি কার্ড নেওয়া হয়েছে। টিম গিয়েছে। সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।” সঙ্গে গৌতম পাল আরও বলেন, “প্রত্যেক সেন্টারের রুমে ইন হাউস রুমে ফেসিয়াল রেকগনিশন করা হয়েছে। কোনও সমস্যা হবে না। আধারের সাথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেকগনিশন আছে। কোনও অসুবিধার জায়গাই নেই”
আড়াই ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও সেই বায়োমেট্রিক নিয়ে সমস্যার অভিযোগ। এবার ঘটনাস্থল যোধপুর পার্কের তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। পরীক্ষা শুরুর আগে সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীরই বায়োমেট্রিক করানো হয়নি। এদিকে পরীক্ষা শেষের পরেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও হয়নি বায়োমেট্রিক। আর এই নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বায়োমেট্রিক না হওয়া পরীক্ষার্থীরা। সোমা সর্দার নামে এক পরীক্ষার্থী সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সমস্যা সমাধানের জন্য পর্ষদের তরফ থেকে সেখানে একটি টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টেট পরীক্ষায় বায়োমেট্রিক সমস্যা নিয়ে অসন্তোষ পরীক্ষার পরেও। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করার কথা। পরীক্ষা শুরুর আগে সে কাজ শুরুও হয়েছিল বাঁকুড়া শহরের শিবশঙ্কর উচ্চ বালিকা বিদ্যাপীঠে। কিন্তু একদিকে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর চাপ, অন্যদিকে বায়োমেট্রিক সার্ভারে সমস্যার কারণে পরীক্ষা শুরুর আগে তা মাঝপথে বন্ধ করে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমনই অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা শেষে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহের অনুরোধ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শেষে বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করে। পরীক্ষার্থীদের দাবী, পরীক্ষা শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন ফের বায়োমেট্রিক সংগ্রহের কাজ শুরু করে, ততক্ষণে বেশ কিছু পরীক্ষার্থী বাড়িমুখো হয়ে থাকতে পারেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ ।
ক্যানসার আক্রান্ত পুনম কুমারী পরীক্ষা দিতে না পেরে গিয়েছিলেন ডিআই-এর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর সমস্যার কথা শোনা হয় সেখানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারলেন না পুনম। তাঁর পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও, তিনি আর পরীক্ষা দিতে পারবেন না বলে জানালেন ডিআই।
সুতি থেকে আসার সময় বহরমপুরে যানজটে থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে পারেননি সুজয় অধিকারী। ১০ মিনিট দেরিতে পৌঁছানয় তাঁকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার সেন্টার পড়েছিল ডোমকল গার্লস কলেজে। ১০ মিনিট দেরি হওয়ার জন্য ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই পরীক্ষার্থী সুজয় অধিকারীকে।
আরামবাগ বয়েজ হাই স্কুল থেকে টেট পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসছেন পরীক্ষার্থীরা। সকাল ১১ টার দিকে বায়োমেট্রিক নিয়ে দীর্ঘ লাইন পড়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ দেখায় পরীক্ষার্থীরা। আরামবাগ মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ সামাল দিয়ে, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষার্থীরা জানালেন পরীক্ষা ভাল হয়েছে।
দুপুর ১২ টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে টেট পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি থেকে বেরোচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। হাতে ওএমআর শিটের প্রতিলিপি সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরোলেন পরীক্ষার্থীরা।
বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুলের সামনে ১১.৪৭ থেকে ২.০৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর ডিআই অফিসের উদ্দেশে রওনা দিলেন ক্যানসার আক্রান্ত পরীক্ষার্থী পুনম কুমারীকে। ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর কার্তিক মান্নার সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। বিষয়টি নিয়ে ডিআই কার্ত্তিক মান্নার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “উনি বলার পর আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি। উনি আমাকে ফোন করেছিলেন। ফোনে জানান, উনি আমাদের প্যারা টিচার। ওনাকে তো আমি চিনি না। উনি আসুন, দেখি উনি কী বলছেন।” তবে তাঁর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানাননি ডিআই। বললেন, “বিকল্প ব্যবস্থা এখন কী নেওয়া যেতে পারে? উনি যখন বলছেন আমাদের প্যারা টিচার, আমি কথা বলে দেখতে পারি।”
টেটের দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “গত ৬ মাস ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক স্তরে কোঅর্ডিনেশন কমিটি আছে। পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হচ্ছে। তবে বিরোধীদের একাংশ অনেকভাবে বানচাল করার চেষ্টা করছে।”
পাঁচ বছর পর টেট হচ্ছে। কেমন চলছে পরীক্ষা, তা খতিয়ে দেখতে রবিবার ময়দানে প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পৌঁছন পর্ষদ সভাপতি। কেমন চলছে পরীক্ষা, তা খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের মোবাইল কোথায় রাখা হয়েছে, তাঁরা ব্যাগ কোথায় রাখছেন, সমস্ত বিষয় জানতে চান। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে চলে যান বিধাননগর কলেজে।
মহেশতলা থেকে বাগবাজারে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন পুনম কুমারী। দেরী করে আসায় পরীক্ষায় বসার অনুমতি পেলেন না তিনি। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরীক্ষা দেওয়া হল না এক টেট পরীক্ষার্থীর। বর্তমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীর নাম নাজমা খাতুন। ওই পরীক্ষার্থীর বাড়ি বহরমপুরে। সামসেরগঞ্জের কাঞ্চনতলা জেডিজে ইনস্টিটিউশনে সিট পড়েছিল তার।
ব্যাগ রাখা নিয়ে বিড়ম্বনা প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, “দু’ একটি জায়গায় ব্যাগ রাখা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ব্যাগে করে হয়ত শীতবস্ত্র এনেছেন। আমরাও যখন পরীক্ষা দিয়েছি ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে পারব কি না… এমন সমস্যা হয়েছে। এগুলি খুব সামান্য তুচ্ছ বিষয়। আমার মনে হয় এগুলি মিটে যাবে।”
টিভি নাইনকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “আজ দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তদারকি করছেন। শুধু তো শিক্ষা দফতর নয়, আরও অনেক বিভাগ রয়েছে। পুলিশ, আপদকালীন বিভাগ-সহ সকলের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব আধিকারিকরা আজ বিকাশ ভবনে উপস্থিত রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে চলছে।”
অবশেষে বিতর্কে পড়ে পর্ষদের নির্দেশে স্কুলের বাইরে একা সব ব্যাগ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে নিয়ে গেলেন প্রধান শিক্ষক। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজে তদারকি করে স্কুলের বাইরে থাকা সবকটি ব্যাগ ভিতরে নিয়ে গেলেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, পর্ষদ আগে নির্দেশ দিয়েছিল ব্যাগ বাইরে রাখার জন্য। এখন নির্দেশ এসেছে তা ভিতরে রাখার জন্য।
অন্য কলেজে সিট পড়া দুই পরীক্ষার্থী ভুল করে পূর্ব বর্ধমানের কালনা কলেজে চলে আসেন। তাঁদের কালনা থানার সিভিক ভলান্টিয়াররা নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পরণে কালো শার্ট-প্য়ান্ট। মাথায় কালো টুপি। বাউন্সার ওঁরা। একেবারে গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। চোখ ঘুরছে চতুর্দিক। তাঁরাই এবার পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে। টেট পরীক্ষার নিরাপত্তায় বাউন্সার।
পড়ুন বিস্তারিত: টেট পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে বাউন্সার! দেখেই চমকে উঠলেন পরীক্ষার্থীরা
ব্যাগ রাখা নিয়ে সমস্যায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষাহলের ভিতর ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে পর্ষদ। এদিকে এমন বহু পরীক্ষার্থী এসেছেন, যাঁদের সঙ্গে কেউ নেই। মালদহ, কলকাতা কিংবা বসিরহাট ছবিটা সর্বত্রই এক। সেইসব পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে ব্যাগ রেখে ঢুকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যাগের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে? প্রত্যেকেরই ব্যাগে মোবাইল ফোন, মানিপার্স, ওয়ালেট, ঘড়ি কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেন্টারগুলিতে অন্তত একটা ঘরের ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল, যেখানে পরীক্ষার্থীদের ব্যাগগুলি নিরাপদে রাখা যেত।
সবিস্তারে পড়ুন: ব্যাগ কোথায় রাখব, একটা রুম তো রাখতে পারত’, টেট দিতে এসে বিপাকে পরীক্ষার্থীরা
বায়োমেট্রিকের ডিভাইস ঠিকমতো কাজ না করায় দমদম কমলাপুর বালিকা বিদ্যাপীঠে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে সাময়িক সমস্যা।
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরের চত্বর একরকম ফাঁকা করে দিল পুলিশ। পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার মুখে পরীক্ষার্থীদের লম্বা লাইন। যাতে কোথাও কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই কড়া পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে। ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসাররা পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে রয়েছেন তদারকিতে। মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত ২০টি পরীক্ষা কেন্দ্রে কড়া পুলিশ ব্যবস্থা রেখেছে পুলিশ ।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে রবিবার বড় চ্যালেঞ্জের দিন। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম টেট হচ্ছে। সকাল থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে চরম ব্যস্ততা। পর্ষদ এই প্রথমবার এরকম একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। সেখানে সারি বেঁধে সাজানো রয়েছে কম্পিউটার স্ক্রিন। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের ছবি দেখতে পাচ্ছেন আধিকারিকরা। রয়েছে একটি জায়ান্ট স্ক্রিনও। বিভিন্ন সেন্টার থেকে আসা সরাসরি ফুটেজ সেখানে দেখতে পাচ্ছেন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অর্থাৎ এদিনের পরীক্ষার খুঁটিনাটি নখদর্পণে রাখতে যে পর্ষদ কতটা তৎপর, এ ছবিতে তা স্পষ্ট।
বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডে ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে ভুল ঠিকানা রয়েছে বলে অভিযোগ। সল্টলেক লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ AD ব্লকে পরীক্ষা, কিন্তু অ্যাডমিট কার্ডে লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ বিডি ব্লক উল্লেখ করা রয়েছে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী ভুল করে BD ব্লকে চলে গেলে পরে তাঁদের বলে দেওয়া হয় সঠিক ঠিকানা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনলাইন থেকে অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে তাঁরা হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করলেও কোনওরকম সহযোগিতা করা হয়নি। যদিও পর্ষদ সূত্রে খবর, আগেই নির্দেশিকা দিয়ে এই ঠিকানা বিভ্রান্তি দূর করেছে তারা। কোথাও অ্যাটেন্ডেন্সে সমস্যা হলে পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন সেন্টার অবজারভার।
টেট পরীক্ষার্থীদের লম্বা লাইন শিলিগুড়ির একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ব্যাগ রাখতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সরব পরীক্ষার্থীরা। বসিরহাটের ১১টি টেট পরীক্ষা কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই পরীক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। টেট পরীক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, ব্যাগ রাখা নিয়ে তাঁরা চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন টেট পরীক্ষা কেন্দ্র অর্থাৎ স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে ব্যাগ নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। যার ফলে ক্ষোভ বাড়ছে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, ব্যাগে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে। টাকাপয়সা থেকে শুরু করে সবই সেখানে। কোনও ভরসায় ব্যাগ বাইরে রেখে ঢুকবেন প্রশ্ন তাঁদের।
গোঘাটের অঘোরকামিনী প্রকাশচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে টেট পরীক্ষার্থীদের লম্বা লাইন। তার মধ্যেই সোনার গয়না খুলে ঢুকতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। এমনকী বিয়ের লোহা বাঁধানো পর্যন্ত খুলতে বলা হচ্ছে মাইকিং করে, অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। যদিও এ নিয়ে কোনও আধিকারিকি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
টেটের প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি বিভ্রাট। বর্ধমানের ট্রেজারি থেকে হাটগোবিন্দপুরের কলেজের টেট সেন্টারে প্রশ্নপত্র নেওয়ার জন্য বাক্সটি গাড়িতে চাপানোর পর গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। তড়িঘড়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।
বায়োমেট্রিক ছাড়াই বারাসাত নবপল্লি বয়েজ হাইস্কুলে পরীক্ষার্থীদের ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সকাল থেকে আঁটোসাটো নিরাপত্তায় বর্ধমানের ট্রেজারি বিল্ডিং। এখান থেকেই বর্ধমানের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে টেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া হবে। পাশাপাশি সকাল থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে স্টেশনে স্টেশনে টেট পরীক্ষার্থীদের ভিড়। দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর শাখার উলুবেড়িয়া স্টেশনে ব্যাপক ভিড়ের ছবি ধরা পড়ল।
টেটের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহকুমা শাসকের দফতরগুলিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। বিচ্ছিন্ন সাগরদ্বীপে পরীক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার জন্য জলযানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সাগর কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে। সাগরের কচুবেড়িয়াতে ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে সহায়তা কেন্দ্র। এখান থেকে পরীক্ষার্থীরা সবরকম সহায়তা পাবেন।
আলিপুরদুয়ারে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা নিয়ে যাতে পরীক্ষার্থীরা হয়রানির মধ্যে না পড়েন সেজন্য পরীক্ষা স্পেশাল বাস চালাচ্ছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। ইতিমধ্যে ৬টি বাস চা বাগান-সহ প্রত্যন্ত এলাকায় রওনা দিয়েছে। আলিপুরদুয়ারে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০৩৫৬৪-৩৫৯২৫২। এই নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা পাবেন পরীক্ষার্থীরা। আলিপুরদুয়ার জেলায় ২৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১১,৩৯১ জন পরীক্ষা দেবেন।
হাওড়ায় টেট পরীক্ষার দিন সকাল থেকেই পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য স্বাভাবিক রয়েছে সমস্ত পরিষেবা।
রাস্তায় যানজট। সে কারণে হেঁটেই পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে পরীক্ষার্থীরা। বহরমপুর শহরে ঢোকার আগে থেকে দু’দিকে প্রায় কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় যানজট। রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে। চিন্তায় পরীক্ষার্থীরা। কেন পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করেনি পুলিশ প্রশাসন, প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের।
টেট পরীক্ষার জন্য ব্যারাকপুর মহকুমায় সরকারি বাসের পাশাপাশি সব প্রাইভেট রুটের বাসের সংখ্যা ৩০% বাড়ানো হয়েছে। ব্যারাকপুরের সঙ্গে যোগাযোগকারী হাওড়া, হুগলি, কলকাতা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন রুটেরই বাস এদিন বাড়ানো হয়েছে। সকাল থেকেই সেই সমস্ত রুটের বাস চালু হয়ে গিয়েছে।
সীমান্ত থেকে সুন্দরবন, টেট পরীক্ষার্থীদের সুস্থ পরিষেবা দিতে তৎপর বসিরহাটের প্রশাসন। সুন্দরবনের ইছামতী, কালিন্দী, বিদ্যাধরী-সহএকাধিক নদী পেরিয়ে টেট পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সকাল সকাল।
আরামবাগ স্টেশনে পরীক্ষার্থীদের ভিড়।
সাত সকালেই টেট পরীক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় আরামবাগ স্টেশনে। ট্রেনে উঠতে ব্যাপক হুড়োহুড়ি। নাজেহাল পরীক্ষার্থীরাই। হুগলির একপ্রান্তে অবস্থিত আরামবাগ। আর এই আরামবাগের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এই সমস্ত পরীক্ষার্থীদের ছুটতে হচ্ছে জেলার অপর প্রান্তে। প্রায় তিন চার ঘণ্টা যাতায়াতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এদিকে যে জায়গায় পরীক্ষাকেন্দ্র সেখানে পৌঁছতে ভরসা ট্রেনই। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ট্রেন চালালে সুবিধা হতো।
পর্ষদ কর্তাদের মতো পরীক্ষা ঘিরে সতর্ক কলকাতা ও জেলা পুলিশ। প্রশ্নপত্র নিয়ে আসা এবং প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া উভয়ক্ষেত্রেই থাকছে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। লালবাজার সূত্রে খবর, কলকাতায় ১৩টি থানা এলাকায় মোট ১৫ জায়গায় টেট সেন্টার পড়েছে। সেখানে ১০ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন। এই সেন্টারগুলির দায়িত্বে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসারকে। সঙ্গে পুলিশবাহিনী। রাস্তায় যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ রাখতে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকবে। নিজের জ়োনে পরীক্ষাকেন্দ্র মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন ডিএসপি বা এসিপিরা। কন্ট্রোল রুমে থাকবেন অতিরিক্ত অফিসার। সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর পাহারায় সেন্টারে আসবে প্রশ্নপত্র।
শনিবারই পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট বিধি নিয়ম মেনেই পরীক্ষা হবে সব জায়গায়। পর্ষদের গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব থাকা আধিকারিকদের। এক জনের নামে অন্য প্রার্থী এসে যাতে পরীক্ষা না দিতে পারে, তার জন্য বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা থাকছে পরীক্ষাকেন্দ্রে। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের পরই ক্লাসরুমে ঢোকার সুযোগ পাবেন পরীক্ষার্থীরা। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে। থাকবে মেটাল ডিটেক্টর।