কলকাতা: বাংলা রবীন্দ্রনাথের, বাংলা সুভাষ বোসের, বাংলা রানি রাসমনির। বাংলা বঙ্কিমের, বাংলা জীবনানন্দের। বাংলা সৌরভের, বাংলা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানের। বাংলা চায়ের ঠেকে তুফান তোলা আড্ডার। বাংলা সন্ধ্যে বেলায় হারমোনিয়ামের সুরে। বাংলা মানে ফেলুদা, বোমকেশে, বাংলা উত্তম সুচিত্রা সৌমিত্রেক। বুকে হাত রেখে কেউ বলতে পারবে বাংলার মেধা, কৃষ্টি, সংস্কৃতির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহস কেউ দেখাবে। অনেকেই বলেন, এখনও বাঙালি যেখানে হাত ছোঁয়ায় সেটা সোনায় পরিণত হতে পারে। কিন্তু, বাঙালি কী এখন হাতটা ছোঁয়াতেই ভুলে যাচ্ছে? অনেকেই বলেন, বাঙালি ভুলে যাচ্ছে তার অস্মিতা। কিন্তু, এই প্রবণতা আজ থেকে নয়। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হয়তো আবার নতুন করে বিতর্কটাকে সামনে নিয়ে এসেছে, চায়ের ঠেক থেকে বাড়ির বৈঠকী আড্ডায়, এমনটাই মত প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
যদিও এই ইস্যুতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য মমতার পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য যেখানে অন্য অনেক রাজ্য থেকে মানুষ এখানে পরিষেবার জন্য আসেন। মানুষকে এখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ফলে বাংলার সরকারকে এই পরিষেবাগুলি দিয়ে মানবতার দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন করে যাচ্ছে। তারপরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আমরা সকলেই চাই বাংলার যে রীতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস রয়েছে, সেই স্বতন্ত্র বাংলার রীতিনীতি অটুট থাকুক।” তাঁর দাবি, অন্য রাজ্য থেকে মানুষ আসুক, পরিষেবা নিক, কিন্তু বাংলা মানবিকতার সব দায়িত্ব পালন করবে কিন্তু তার ঐতিহ্য উজ্জ্বল রেখে।
এদিকে এখন তো বাঙালি বিয়েতে সংগীত, মেহেন্দির মত অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু অন্য প্রদেশের বিয়েতে বাঙালির শুভদৃষ্টি হয় কী? বাংলা দু হাত আকাশে মেলে সবাইকে আপন করে নিতে পারে। কিন্তু সেটাই কী বাঙালির নিজের অস্বিত্ব রক্ষার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা চলছে, বছরের পর বছর। কিন্তু বাঙালি কী সেই উত্তর পেয়েছে? অন্যকে ভালোবাসতে বাসতে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে গেছে বাংলা ও বাঙালি? ভুলে গেছে নিজের ভাষা, নিজের ঐতিহ্য, নিজের অস্মিতাকে? মমতার মন্তব্য়ের পর এই প্রশ্নগুলি যেন আরও জোরালো হয়ে উঠে আসছে।