Bypolls: দক্ষিণবঙ্গের ৪ আসনে কারা বাজিমাত করবে? আজ ব্যালটবন্দি প্রার্থীদের ভাগ্য
Bypolls: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনে জিতেছিল তৃণমূল। শাসকদল ২৪ হাজার ৩৯৭ ভোটে জিতেছিল। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। কিন্তু, লিড ছিল ২ হাজার ১৭০ ভোট। অর্থাৎ ৩ বছরে ব্যবধান কমেছে ২২ হাজার ২২৭ ভোট।
কলকাতা: পাঁচ জেলা। ছয় আসন। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে দুটি আসন। আর দক্ষিণবঙ্গে ৪টি। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের দুই জেলা বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুর। দুই জেলাতে একটি করে আসনে উপনির্বাচন। মেদিনীপুর ও তালডাংরা। আর উপনির্বাচন রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ২টি আসনে। নৈহাটি ও হাড়োয়া। বুধবার ভোট দেবেন ভোটাররা। তার আগে দেখে নেওয়া যাক, দক্ষিণবঙ্গের এই চারটি আসনের হাল-হকিকত।
প্রথমে মেদিনীপুর। জুন মালিয়া সাংসদ হওয়ার কারণে মেদিনীপুরে অকাল ভোট। দেখে নেওয়া যাক, উপনির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণ কোন খাতে বইছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনে জিতেছিল তৃণমূল। শাসকদল ২৪ হাজার ৩৯৭ ভোটে জিতেছিল। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। কিন্তু, লিড ছিল ২ হাজার ১৭০ ভোট। অর্থাৎ ৩ বছরে ব্যবধান কমেছে ২২ হাজার ২২৭ ভোট।
তার মানে লোকসভায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান কিন্তু, অনেকটাই কমেছে মেদিনীপুরে। লোকসভা ভোটের এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, মেদিনীপুর পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরপ্রধানের ওয়ার্ড-সহ ১৬টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। লোকসভা ভোটের হিসেবে ৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। গ্রামীণ এলাকার ভোট এযাত্রায় জুন মালিয়াকে লিড দেয়। এই আসনে দীর্ঘদিন বামেদের দাপট থাকলেও, পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীপুরও ঘাসফুলের দিকে চলে আসে। তারপর থেকে তৃণমূলের গড় হয়ে উঠেছে। এবারের উপভোটে অবশ্য বেশ কিছু স্থানীয় বিষয় জায়গা পেয়েছে।
এই খবরটিও পড়ুন
মেদিনীপুরে ভোটের ইস্যু কী? তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে ‘অনুন্নয়ন’, ‘দুর্নীতি’ অভিযোগ। গ্রামীণ এলাকায় বালি তোলার জন্য রাস্তা খারাপ। মেদিনীপুর বিধানসভায় ৯ পঞ্চায়েত এলাকা তৃণমূলের হাতে থাকায়, জুন মালিয়া বেরিয়ে যান।
পাশের জেলা বাঁকুড়ার তালডাংরা পুরোপুরি গ্রামীণ। পরিবর্তনের বছরে ওই বিধানসভা সিপিএমের হাতে ছিল। তবে ২০১৬ থেকে তালডাংরায় দাপট দেখাতে থাকে তৃণমূল। একুশের ভোটে জয়ী অরূপ চক্রবর্তী এবার সাংসদ হওয়ায় উপনির্বাচন বাঁকুড়ার এই কেন্দ্রে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, একুশের ভোটের পর চব্বিশের ভোটে জঙ্গলমহলের এই আসনে কী বদল এল।
২০২১ সালে তালডাংরায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ১২ হাজার ৩৭৭ ভোট। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের লিড ছিল ৭ হাজার ৪৮৩ ভোট। ৩ বছরে ব্যবধান কমেছে ৪ হাজার ৮৯৪ ভোট। একুশের পর, লোকসভা ভোটে মেদিনীপুরের মতো তালডাংরাতেও তৃণমূলের মার্জিন কমেছে। এবারের লোকসভার নিরিখে ছটি আসনের মধ্যে এই দুটি আসনে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক অনেকটা কম ছিল। সূত্রের খবর, দুটি আসনের জন্যই ঝাঁপাচ্ছে পদ্ম শিবির।
মেদিনীপুর, তালডাংরা নিয়ে তাল ঠোকাঠুকি যখন হচ্ছে, এসব থেকে যেন খানিকটা দূরে উত্তর ২৪ পরগনার দুই আসন নৈহাটি আর হাড়োয়া। একটি কেন্দ্র কলকাতা লাগোয়া, আর একটি একেবার গ্রামীণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুটি আসন তৃণমূলের জন্য অনেকটাই সেফ। তার ব্যাখ্যা হিসেবে কয়েকটা তথ্য তুলে ধরছেন তাঁরা।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে নৈহাটিতে তৃণমূল জিতেছিল ১৮ হাজার ৮৫৫ ভোটে। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের লিড ছিল ১৫ হাজার ৫১৮ ভোট। ৩ বছরে ব্যবধান কমেছে ৩ হাজার ৩৩৭ ভোট।
দ্রোহকালের ভোটে নারী সুরক্ষা যেমন নির্বাচনের ইস্যু তেমনই নৈহাটির নির্বাচনে সবথেক বড় বিষয় হতে চলেছে একটি জুটমিল। সব দলের প্রচারে জায়গা পেয়েছে তা। ভোট প্রচারে সিপিআই এমএল লিবারেশন শ্রমিক মহল্লায় বেশি সময় দিয়েছে। নৈহাটির ভোটের ইস্যু এবার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গৌরীপুর জুটমিল খোলার দাবি। আবার তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’-র অভিযোগ উঠেছে।
নৈহাটিতে উন্নয়নের দাবিতে ভোট। আর হাড়োয়ায় মাঝেমধ্যে ভেড়ি নিয়ে গন্ডগোলের খবর আসে। তৃণমূলের জমানায় প্রতিটি ভোটেই হাড়োয়ায় জোড়াফুলের মার্জিন বেড়েছে। আর গত লোকসভার হিসেব ধরলে তা শাসক দলকে স্বস্তি দেওয়ার মতো।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জিতেছিল ৮০ হাজার ৯৭৮ ভোটে। সেখানে লোকসভায় এই কেন্দ্রে তৃণমূলের লিড ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৯১ ভোট। ৩ বছরে ব্যবধান বেড়েছে ৩০ হাজার ১৩ ভোট।
বিধানসভা ভোটের নিরিখে ফল তৃণমূলের পক্ষে ৫-১। ছয়ে-ছয়ের লক্ষ্যে মাদারিহাটে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির কোন কৌশল? বুধবার প্রার্থীদের ভাগ্য ব্যালটবন্দি হবে। আর ফল জানা যাবে ২৩ নভেম্বর।