কলকাতা : বুধবার ১০৮ টি পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হল। তৃণমূলের সবুজ ঝড়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাদবাকি দলগুলি। তবে এই নির্বাচনের আগেই তৃণমূল শিবিরে কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। দলের অন্দরের কোন্দল রাস্তায় এসে পড়ে। তৃণমূলের দুটি প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রথমে বিক্ষোভ বাধে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যেই। তার উপর ছিল প্রার্থী তালিকায় পছন্দসই প্রার্থীদের জায়গা না পাওয়া। সেই নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখা যায় রাজ্য জুড়ে। রাস্তা আটকে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। বহু তৃণমূল নেতা টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন বহু তৃণমূল নেতা। তারপর তৃণমূলের বড় বড় নেতা মন্ত্রীদের তরফে সতর্ক করা হয় এইসব নির্দল প্রার্থীদের। জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয় বহু নেতা, কর্মী সমর্থকদেরই। আবার কাউকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। দলের এরকম পরিস্থিতিতে পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সবথেকে বড় কাঁটা ছিল নির্দল।
উল্লেখ্য, নির্দল কাঁটা রুখতে পারেনি তৃণমূলের জয়কে। তবে নির্দল প্রার্থী কোনও একটি পুরসভা সুরক্ষিত করতে না পারলেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। খুব একটা খারাপ ফলাফলও করেনি এই নির্দল প্রার্থীরা। বেশ কয়েকজন নির্দল প্রার্থী ফলাফল প্রকাশের পর জানিয়েছেন যে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেও তাঁরা তৃণমূলের আদর্শকে সামনে রেখে নির্বাচনে প্রচার করেছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাঁরা তৃণমূলেরি অংশ। তাঁরা তৃণমূলেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন নির্দল প্রার্থী। উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী পিনাকী ধামালি। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। দলের টিকিট না পেয়েই নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীদের দেওয়া হুঁশিয়ারিতেও দমেননি তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় তাঁকে দল থেক বহিষ্কারও করা হয়। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও জয়ী হয়ে তিনি বললেন, ‘আমি তো তৃণমূলেই আছি।’
নির্দলের প্রভাবের দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরসভা হল হুগলির চাঁপদানি পুরসভা। এইখানে তৃণমূলের পুরবোর্ড গঠনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল সেই নির্দল। এইবারের পুরসভা নির্বাচনে প্রথম থেকেই নির্দল প্রার্থী একটি বড় ইস্যু ছিল শাসক শিবিরের কাছে। এইবার সেই নির্দল প্রার্থীর জোরেই চাঁপদানি পুরবোর্ড গঠনে বাধাপ্রাপ্ত হল তৃণমূল। সেখানে পুরবোর্ড গঠন করতে হলে নির্দল প্রার্থীদের সাহায্যের দিকে হাত বাড়াতে হতে পারে ঘাসফুল শিবিরকে। চাঁপদানি পুরসভাতে আসন সংখ্যা ২২ টি। তার মধ্যে ১১ টি পেয়েছে তৃণমূল শিবির আর ১০ টি আসন গিয়েছে নির্দলের ঘরে এবং ১ টি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। চাঁপদানি পুরসভায় বোর্ড গঠন করার জন্য ম্যাজিক সংখ্যা হল ১২। অথচ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দলই। নির্দলের সাহায্য তৃণমূল নেবে কিনা সেটাই দেখার। কারণ দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীদের আর দলে ফেরানো হবে না।
এবার প্রথম থেকেই তৃণমূলের কাঁটা হয়েছিল নির্দল প্রার্থীরা। সেই কাঁটা কিছু কিছু পুরসভার ক্ষেত্রে তৃণমূলের গলায় ফুটলোও বটে। তবে নির্দল হয়ে জয়ী হলেও বহু জয়ী নির্দল প্রার্থীই জানিয়েছেন তিনি তৃণমূলে ছিলেন এবং তৃণমূলেই আছেন। তবে নির্দল প্রার্থীদের পুনরায় তৃণমূলে অন্তর্ভুক্ত করার কোনও বার্তা তৃণমূলের তরফে মেলেনি। উল্লেখ্য, এদিন নির্দলদের ‘ঘর ওয়াপসি’ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নির্দল নিয়ে আমি আলোচনা করব না। এটা রাজ্য কমিটির বিষয়। দল সিদ্ধান্ত নেবে। এটা কিছু এলাকায় হয়েছে। কিছু মানুষ করেছে। খুব বেশি নয়। আপনারা ফল দেখেছেন। খুবই ছোট ব্যাপার, রাজ্য কমিটিই এটা দেখবে।”
আরও পড়ুন : চার দশকের ‘অধিকারী মিথ’ ভাঙল কাঁথিতে, এগরা তবু মান বাঁচাল খানিক…