শ্রীরামপুর: তিনবারের সাংসদ। তার আগে একবার বিধায়কও ছিলেন। পেশায় আইনজীবী। সেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চব্বিশের নির্বাচনে শ্রীরামপুর আসন থেকে ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী আবার সম্পর্কে কল্যাণের প্রাক্তন জামাই। বামেদের বাজি দীপ্সিতা ধর। নির্বাচনে কে বাজিমাত করবেন, তা জানা যাবে ৪ জুন। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কত? পড়াশোনাই বা কতদূর? কী বলছে কল্যাণের নির্বাচনী হলফনামা?
বছর সাতষট্টির কল্যাণ হলফনামায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত আয়ের হিসেব জানিয়েছেন। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ৪ কোটি ৩২ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৬৬ টাকা। তার আগের অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২১-২২ এ তাঁর আয় ছিল ৪ কোটি ৩২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৪৪ টাকা। তিনি ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ১২৩ টাকা আয় করেছিলেন ২০২০-২১ অর্থবর্ষে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ২ কোটি ১২ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৬৯ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তিনি ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮২০ টাকা আয় করেছিলেন।
হলফনামায় স্ত্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের হিসেব জানিয়েছেন কল্যাণ। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তাঁর স্ত্রীর আয় ছিল ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৬০০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয় ছিল ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ২৫০ টাকা আয় করেছিলেন ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগের অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০১৯-২০ তে তাঁর আয় ছিল ২ লক্ষ ৬০ হাজার ২৫৪ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ১২০ টাকা আয় করেছিলেন কল্যাণের স্ত্রী।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কত?
মনোনয়ন পেশের সময় কল্যাণের হাতে ছিল নগদ ৫০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রী হাতে কোনও নগদ টাকা ছিল না। হলফনামায় কল্যাণ জানিয়েছেন, একাধিক ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর। মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী।
হলফনামায় কল্যাণ জানিয়েছেন, দুটি গাড়ি রয়েছে তাঁর। একটি গাড়ি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কিনেছেন। গাড়িটির দাম ২২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪২৭ টাকা। অন্য গাড়িটি ২০১৪ সালের নভেম্বরে কেনেন। গাড়িটির দাম ৪ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। তাঁর কাছে ১৫ লক্ষ টাকার সোনার গয়না রয়েছে বলে জানিয়েছেন কল্যাণ। আর তাঁর স্ত্রীর কাছে রয়েছে ২৪ লক্ষ টাকার সোনার গয়না। পেশায় আইনজীবী কল্যাণ তাঁর কাছে থাকা বইয়ের সম্ভারের কথা জানিয়েছেন। যার মূল্য ১ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে কল্যাণের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২৪ কোটি ২০ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৩৫ টাকা। আর তাঁর স্ত্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৭১ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৩৬ টাকা।
নিজের স্থাবর সম্পত্তির খতিয়ান দিতে গিয়ে কল্যাণ জানিয়েছেন, বাঁকুড়ায় পারিবারিক সূত্রে পাওয়া বাড়ির অংশ রয়েছে তাঁর। যার বর্তমান মূল্য ৭ লক্ষ টাকা। এছাড়া কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, দিল্লি ও শ্রীরামপুরে ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। তার মধ্যে শ্রীরামপুরের ফ্ল্যাটটি স্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে কেনা। সবমিলিয়ে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৫০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। আর তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩.১ লক্ষ টাকা।
গাড়ি ও বাড়ি কিনতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি। তাঁর মোট ঋণের পরিমাণ ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৯৮ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে সাংসদ হিসেবে পাওয়া ভাতা, আইনজীবী পেশার কথা উল্লেখ করেছেন কল্যাণ। আর তাঁর স্ত্রীর বুটিক রয়েছে। স্ত্রীর আয়ের উৎস হিসেবে হলফনামায় সেকথাই উল্লেখ করেছেন কল্যাণ। এছাড়া ব্যাঙ্কে জমানো টাকা থেকে পাওয়া সুদের কথাও আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী।
কতদূর পড়াশোনা করেছেন কল্যাণ?
১৯৭৫ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর আবার আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। হলফনামায় তৃণমূল প্রার্থী জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন কল্যাণ। ২০০৯ সাল থেকে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তিনি। এবার জিতে ফের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী কল্যাণ। এবারও কি শ্রীরামপুরে ফুটবে ঘাসফুল? ২০ মে রায় জানাবেন ভোটাররা। ভোটের ফল ৪ জুন। ততদিন শুধুই অপেক্ষা।