Intimate Relationship: শরীর শুধুই শরীর, ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’ কি মনের কথা বলে না আদৌ?

Friends With Benefits: বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে সেখানে কোনও মানসিক যোগসূত্রও কি তৈরি হয় না?

Intimate Relationship: শরীর শুধুই শরীর, 'ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস' কি মনের কথা বলে না আদৌ?
Follow Us:
| Updated on: May 17, 2022 | 5:45 PM

শেষ অবধি রিমিকার সঙ্গে দীপ্তর সম্পর্কটা ভেঙে গেল। সম্পর্ক ভাঙার পিছনে কী কারণ ছিল, হাজার চেষ্টা করেও রিমিকা জানতে পারেনি। আর এই যন্ত্রণাই তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ওদের দু’জনের সম্পর্ক ভাঙার পর দীপ্ত নিজেকে সামলে নিয়েছিল। কিন্তু রিমিকা পারেনি। তার ওপর উড়ে এসে জুড়ে বসে লকডাউন। সব কিছু নিয়ে ভেঙে পড়ে রিমিকা। এই সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় ওর ছোটবেলার বন্ধু রণ। বন্ধুর বিপদের সময় মানসিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল রণ। যদিও এটাই তার স্বভাব। তবে রিমিকা কোনওদিন দীপ্তর ‘রিবাউন্ড’ খোঁজেনি। রণর সঙ্গে রিমিকার সম্পর্কটা অন্যান্য বন্ধুর থেকে একটু আলাদাই ছিল। ওরা স্কুললাইফ থেকে একে-অপরের ভাল বন্ধু। ওদের মধ্যে কোনওদিন কোনও রাখ-ঢাক ছিল না। পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে লেখা থেকে শুরু করে প্রথমবার যৌনতায় মেতে ওঠার অনুভূতি—একে-অপরের সব আপাত ‘গোপন’ কথাই জানত ওরা। তবু বন্ধুত্বের বাইরেও কোনও সম্পর্ক যে গড়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে ভাবেনি ওরা। উইকেন্ডে একসঙ্গে ঘুরতেও যেত। কিন্তু সম্পর্ক সেইদিন থেকেই একটু অন্যরকম হয়ে গেল, যেদিন বিদেশে চলে যাওয়ার আগে রিমিকার সঙ্গে দেখা করল রণ। একে-অপরের শরীরকে চিনল, জানল ওরা। এই শরীরী মিলনে যে ওদের মনের কোনও যোগ ছিল না, সেটা ওরা জানত। আর তা-ই ওরা এই সম্পর্ককে ডাকত ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’ বলে।

‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’ বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রেন্ডে থাকলেও রিমিকার কাছে বিষয়টা একদম নতুন। রণ যদিও এর আগে কোনও সিরিয়াস সম্পর্ক ছাড়াই এক-আধবার মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তবু ওরা দু’জনেই এই বিষয়টাকে বেশ উপভোগ করছিল। নিয়ম করে ফোন করতে হয় না। কী করছ, খেয়েছ কি না, এই সব টেক্সটেরও উত্তর দিতে হয় না। রুটিনমাফিক দেখা করারও কোনও ঝামেলা নেই। তবু সারাদিন ধরে কী-কী মজার ঘটনা হয়েছে, সেগুলো বলার জন্য একজন রয়েছে। বাসে কোন ছেলের ওপর ক্রাশ খেয়েছে রিমিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন নন-ভেজ মিম মজাদার বলে মনে হয় রণর… একে-অপরের কাছে সব কিছু শেয়ার করা যায় মন খুলে। আবার যদি মাঝরাতে এক্স-এর কথা ভেবে ধুম করে ভেঙে পড়েন, ডিপ্রেশন কমাতেও পাশে রয়েছে ওই রিমিকা বা রণর মতো ওই বন্ধু। বন্ধু হিসেবে কোনও কমতিই তো নেই এই সম্পর্কে। উপরি পাওনা যৌনতা।

Can 'Friends With Benefits' Really Work? know what expert says

শরীরের চাহিদাতেই যৌনতা আসে। এতে ভুলের কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত সঙ্গমে মিলিত হলে মানসিক চাপ কমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে আর সচল থাকে রক্ত চলাচল। আর ফোরপ্লে যদি একটু মজাদার হয় তাহলে হ্যাপি হরমোন পুরো মুডটাই পাল্টে দেয়। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে সেক্স- বিষয়টা কি খুব জটিল?

অভিনেত্রী তথা মনোবিদ সন্দীপ্তা সেন ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’-এ থাকা কাপলদের মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন TV9 বাংলার সঙ্গে। সন্দীপ্তা বলেন, “মানুষের ধৈর্য্য কমে গিয়েছে। মানুষ এখন সহজে অ্যাডজাস্টমেন্ট-এ যেতে চায় না। সম্পর্কে গেলে দায়িত্ব নিয়ে আবার অনেক কিছু করতে হবে। সেই দায়িত্ব অনেকে নিতে চায় না। আর সেক্স হচ্ছে শারীরিক চাহিদা। এই ধরনের সম্পর্কে জড়ালে শারীরিক চাহিদাও পূরণ হয়ে যাচ্ছে, আবার কোনও দায়িত্ব নিতে হচ্ছে না। নিজের মতো থাকা যাচ্ছে।”

এই সম্পর্কে কোনও পিছুটান নেই। কিন্তু মনের মিলও যে নেই, তা নয়। ভাল বন্ধুর প্রতি ভালবাসা থাকতে বাধ্য। আর কিছু না হোক, একে-অপরের প্রতি শ্রব্ধা থেকে যাবে সারাজীবন। ভবিষ্যতে যদি এই সম্পর্কে না-ও থাকে, তা হলেও একে-অপরের প্রতি কোনও রাগ, অভিমান থাকবে না। রাস্তায় হঠাৎ দেখা হলেও বলে উঠবেন, ‘কী রে, কেমন আছিস?’… আর যদি বছর পরে রিইউনিয়ন হয়, বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে গল্প করবেন, ‘মনে আছে, সেই ক্লাস ১০-এ কী করেছিলিস তুই!’

এ তো গেল ভবিষ্যতের কথা। বর্তমান সময়ে আপনার ভাল থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। কোনও পরিচিত মানুষের বুকে মুখ গোঁজা তো খারাপ বিষয় নয়। বরং এই সম্পর্কে জড়ানোর আগে আপনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আপনাদের দু’জনেরই সচেতন হওয়া ভীষণ ভাবে জরুরি। আপনি যদি মনে করেন, এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যৌনতা অবধি নিয়ে যাবেন এবং আপনার মধ্যে ‘বন্ধু’ সম্পর্কে বাড়তি কোনও অনুভূতি তৈরি হবে না, তখনই এই সম্পর্কে পা রাখুন। ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’ গড়ে ওঠার আগে, দু’জনের মধ্যে এই বিষয় সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করুন।

একে-অপরের সঙ্গে সততা বজায় রাখুন। এই সম্পর্কের মধ্যে আপনার যদি অন্য কোনও মানুষের প্রতি অনুভূতি জাগে সেই বিষয়েও বন্ধুকে জানান। কিংবা আপনি যদি কোনও সম্পর্কে থাকার পরও নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড রিলেশনশিপ চান, সেই সম্পর্কেও পার্টনারকে অবগত করুন। আপনি যদি ভবিষ্যতে আপনার বন্ধুর সঙ্গে ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস-এর চেয়ে বাড়তি কোনও সম্পর্ক না চান, অর্থাৎ আপনি যদি না চান ভবিষ্যতে সে আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা হয়ে উঠুক, তাহলে এমন কোনও কথা বলবেন না যাতে সঙ্গীর মনে কোনও অনুভূতি তৈরি হয়। জানেন তো যে কোনও সম্পর্কের ভিত হল কমিউনিকেশন?

Can 'Friends With Benefits' Really Work? know what expert says

কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে সেখানে কোনও মানসিক যোগসূত্রও কি তৈরি হয় না? এই প্রসঙ্গে সন্দীপ্তা বলেন, “হিউম্যান সাইকোলজি অনুযায়ী, খুব কমক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, শারীরিক মিলনের পর কোনও মানসিক যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে না পার্টনারের প্রতি। কোথাও না কোথাও গিয়ে একটা মনের যোগ তৈরি হয়ে যায়। ভালবাসা না হলেও ভাললাগা তৈরি হয়ই। অবচেতন মনে হলেও পার্টনারের প্রতি একটা অধিকারবোধ জন্মায়। হয়তো সম্পর্ক এড়াতে এটা কেউ মানতে চায় না। আর তখন সম্পর্কে নানা সমস্যা দেখা দেয়।” অভিনেত্রীর কথায়, “অনেক দিন ধরে একজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকার পর ফিলিংস জন্মে যায়। তাছাড়া যে তার বন্ধু, যাকে সে পার্টনার হিসেবে সিলেক্ট করেছে, তার প্রতি তো একটা ভাললাগা রয়েছেই। সেই কারণেই তো সে তার সঙ্গে শারীরিক মিলনে ইচ্ছুক হচ্ছে। বিষয়টা র‍্যানডম হলে, সেখানে মানুষ হুক-আপ করত। কিন্তু ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’-এর ক্ষেত্রে একটি মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই এখানে বুঝতে হবে যে, কোথাও গিয়ে এখানে দু’টো মানুষের একে-অপরের প্রতি অনুভূতি রয়েছে।” সুতরাং, একটা সম্পর্ক বাস্তবে কখনওই ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’ হতে পারে না।