ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে- Beauty With Brain। রাজমাতা গায়ত্রী দেবীও ঠিক তাই। যেমন তাঁর রূপ, তেমন তাঁর সৌন্দর্য। কিশোরী বয়সে তাঁর চেহারা ঈষৎ ভারীর দিকেই ছিল। এই নিয়ে অবশ্য তাঁকে কম কথাও শুনতে হয়নি। পাশাপাশি তিনি ছিলেন শ্যামবর্ণা। জয়পুর রাজঘরানার এই সুন্দরী একজন সফল রাজনীতিবিদ। রাজমাতা গায়েত্রীর বর্ণময় জীবন সব সময় থেকেছে লাইমলাইটে। তাঁর চিন্তাভাবনা এতটাই আধুনিক ছিল যে তা রীতিমতো ভাবতে বাধ্য করেছিল সেই সময়ের সমাজকে। বিশ্বের অন্যতম সেরা মন্ত্রমুগ্ধর তালিকাভুক্তও করা হয় তাঁকে।
কোচবিহারের রাজকুমারী এই পরমা সুন্দরী। মহারাজা দ্বিতীয় সাওয়াই মান সিং-এর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক কেরিয়ারেও ছিলেন সফল। তবে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার মতের প্রচুর অমিল ছিল। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির সদস্য ছিলেন গায়ত্রী দেবী। ১৯৪৩ সালে মহারানি গায়েত্রী দেবী গার্লস পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় জয়পুরের মৃৎ শিল্পীরা নতুন পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন।
ফ্যাশানেও আইকন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গায়ত্রী দেবী। সেই সময়কার ভোগ ম্যাগাজিনে বিশ্বের সেরা ১০ সুন্দরীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সেরা স্টাইল আইকন হিসেবে তিনিই বিবেচিত হয়েছিলেন। একরঙা সিল্ক, পিঠ ঢাকা গ্লাস হাতা ব্লাউজের সঙ্গে মিশেছিল তাঁর আভিজাত্য আর জনদরদী সত্ত্বা। ছোট করে কাটা চুল, এক রঙা সিল্ক, আর স্টেটমেন্ট মুক্তোর মালায় নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেঠিলেন। শাড়ির সঙ্গে সব সময় মুক্তোর মালা পরতেন। কানে টপ, কপালে টিপ এই ছিল তাঁর সাজ। কখনও কিন্তু ঝোলা দুল পরতে দেখা যায়নি তাঁকে। ব্লাউজের সামনে থাকত ছৌকো গলা। প্রচিটি পোশাকে যেমন জুড়ে থাকত আভিজাত্য তেমনই স্টাইলিশ। গায়েত্রী দেবীর সেই কবেকার ফ্যাশান কিন্তু আজও মন কাড়ে টিনএজারদের।
গায়ত্রী দেবীর পড়াশোনা শুরু লন্ডনের প্রিপারেটরি স্কুলে। তারপর বিশ্বভারতীর পাঠভবন এবং পরে উচ্চশিক্ষা সুইৎজারল্যান্ডে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ঘোড়সওয়ার এবং পোলো খেলোয়াড়। ভালবাসতেন শিকার করতে এবং নিত্যনতুন গাড়ি চালাতে। গায়ত্রী দেবীর দিদিমা এবং মা দু’জনেই ছিলেন সময়ের তুলনায় এগিয়ে। তাঁদের থেকে সেই ধারা পেয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী নিজেও। দুই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও নিজের প্রেমের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন তিনি। বাবা মায়ের অসম্মতি সত্ত্বেও বিয়ে করেছিলেন রাজা দ্বিতীয় সোয়াই মান সিংহকে। সৌন্দর্য অবং আধুনিকতার এমন মেলবন্ধন চট করে দেখা যায় না। যে কারণে গায়ত্রী দেবী আজও সকলের মনে গেঁথে রয়েছেন। তাঁর স্টাইলে উদ্বুদ্ধ এখনকার মেয়েরাও।