ছোট্ট আরভ জীবনে আসার পর এক লহমায় যেমন জীবনটাই বদলে গিয়েছে দিয়া-অনির্বাণের। নতুন মা-বাবার দায়িত্ব পেয়ে দুজনেই খুব খুশি। কী ভাবে ছেলেকে বাড়ি আনবে, ছেলেকে অভ্যর্থনা জানাবে কী ভাবে, কী কী কিনবে ওর জন্য এইসব নিয়ে নানা পরিকল্পনা করেছে দুজনে মিলে। বাড়ির নতুন সদস্যকে Welcome করতে হাজির সকলেই। সকলেই নানা উপহারে ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের ছোট্ট মানুষটিকে। একরত্তিকে নিয়েই সকলে ব্যস্ত। আর এক রাতের মধ্যে দিয়াও যেন পারফেক্ট মা হয়ে উঠল। একা হাতেই সামলাত আরভের সব কাজ। কাউকেই ধরতে দিত না। কিন্তু ক’দিন পর অনির্বাণ দেখল দিয়া যেন আগের থেকে অনেকটাই চুপ হয়ে গিয়েছে। কারোর সঙ্গে তেমন কথাও বলছে না। কিছু বললেই মেজাজ হারাচ্ছে। রাত হলেই কান্নাকাটি। সবার সঙ্গে ঝামেলা লেগেই রয়েছে। নিজে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করছে না। কেন তার মন খারাপ এই রকম প্রশ্ন অনির্বাণ বার কয়েক করলেও সদুত্তর পায়নি। বিষয়টা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাচ্ছে দেখে অনির্বাণ যোগাযোগ করল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে। আর তখনই তিনি বললেন দিয়া পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের (Postpartum depression)শিকার।
আর এর জন্য দায়ী হরমোন। মা হবার সময় শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। এমনকী সন্তানের জন্মের পরও সেই পরিবর্তন চলতে থাকে। স্টেরয়েডাল হরমোনগুলি প্রভাব ফেলে আমাদের মস্তিষ্কেও। যেখান থেকে নতুন মা (New Mom) নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। অনুভূতিতেও আসে পরিবর্তন। যে কারণে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে পরিবারকেও। সন্তান আসার পর তাঁকে নিয়ে সবাই যতটা মেতে থাকেন, সেই একই নজর কিন্তু থাকে না মায়ের প্রতি। কোথাও গিয়ে তাঁর মনে হয় তিনি যে এতদিন এত কষ্ট করলেন সেই কষ্টের দাম কেউ দিচ্ছে না।
সন্তানের জন্য তিনি যে রাতের পর রাত জেগে কাটাচ্ছেন তা যেন অর্থহীন। সেখান থেকেই আসে এই মানসিক সমস্যা। যে কারণে এই সময়টা পরিবারের সকলের উচিত মায়ের পাশে থাকা। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর মা-কেও কিন্তু ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে। কারণ তিনি সন্তানকে স্তন্যপান করান। নতুন মায়েরা ডায়েটে কী কী রাখবেন সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলেন ডায়াটেশিয়ান নন্দিনী সুষমা দাস।
মাছ খান- নিয়মিত খাবারের তালিকায় অবশ্যই মাছ রাখুন। মাছের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরকে পুষ্টি দেয়। এছাড়াও এই সময় DHA খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা পাওয়া যায় মাছ থেকেই।
লো-ফ্যাট ডেয়ারি- যেহেতু মায়েরা স্তন্যপান করান তাই এই সময়টা তাঁদের শরীরের জন্য ক্যালশিয়াম আর ভিটামিন ডি বেশি মাত্রায় প্রয়োজন। সন্তানের হাড়ের গঠনে সাহায্য করে ক্যালশিয়াম। তাই টকদই রোজ খান একবাটি করে। কিংবা খেতে পারেন ছানা কাটিয়ে।
চিকেন খান- চিকেনের অতিরিক্ত তেল-মশলাদার কোনও খাবার নয়, বরং স্যুপ স্ট্যু বেশি করে খান। পেঁপে, গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, টমেটো দিয়ে বানিয়ে নিন চিকেন স্ট্যু। কিংবা বানাতে পারেন দই চিকেন। এতে শরীর ভাল থাকবে। পুষ্টিও পাবেন। তবে রেড মিট একেবারেই চলবে না।
বিভিন্ন ডাল খান- প্রতিদিন একবাটি করে মুসুরের ডাল খান। প্রয়োজনে ডালের জল খান। বা বিভিন্ন ডাল আর সবজি দিয়েও তরকারি বানিয়ে একবাটি খান। বিশেষত যাঁরা ভেজ খান। প্রাণীজ প্রোটিন একেবারেই না খেলে এই সব খাবার বেশি করে খেতে হবে।
ভাতের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস খান– ব্রাউন রাইসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যা শরীরের জন্য ভাল। সেই সঙ্গে গ্লুকোমিক ইনডেক্সও কম। ফলে শরীরে ক্যালোরি কম যায়। এই সময় যতটা কম ক্যালোরির খাবার খেতে পারবেন ততই ভাল।
এর সঙ্গে অবশ্যই খান জোয়ান জল। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের আগে এক চামচ জোয়ান একগ্লাস জলে মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। এবার তা ছেঁকে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে কিন্তু শরীর থাকবে সুস্থ। স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।
আরও পড়ুন: Winter menu: শীতে শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে মেনে চলুন রুজুতা দিওয়েকরের এই বিশেষ ডায়েট টিপস