Success Secrets: সাফল্যের শিখরে থাকা প্রত্যেকে এই কাজ করেন! দেখুন তো আপনিও একই পথে চলছেন কি না…
Secrets for Success: সৃজনশীল হলে বেসরকারি বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা এবং সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট এগিয়ে যাবেন আপনি। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন দর্শন হোক বা পুরাতনকেই নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা―সব ক্ষেত্রেই আপনাকে হতে হবে CREATIVE! রান্না করতে ভাল লাগে? ভাল লাগে ফুলগাছের যত্ন নিতে বা হাতের কাজ করতে? তাহলে অবসর সময়কে নষ্ট না করে লেগে পড়ুন...
এক এক জনের অফিসের বাঁধা সময় এক এক রকমের। তবে সাফল্যের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও বাঁধাধরা গণ্ডি নেই। নেই কোনও সহজ পথ। আসলে আমরা যাদের থেকে শিখি, যাদের দেখে শিখি―তাঁদের প্রত্যেকের জীবনের কিছু সহজ দর্শন থাকে, থাকে কিছু মূল্যবোধ। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের ‘কাজ’ ছাড়াও তাঁরা এমন কিছু অতিরিক্ত বিষয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন, যা আগামীতে তাঁদের এগিয়ে দেয় অনেকটাই। অবসর সময়কে কাজে লাগানোর পন্থাই সফলতার চাবিকাঠি হিসাবে উঠে আসে বেশ কিছু সময়ে! আদতে সমাজের চূড়ায় বসে থাকা সেইসব ব্যক্তিদের সাফল্যের রহস্য খুবই সহজ, আবার খুব কঠিনও। এখনও জানেন না আপনি? তাহলে পড়ে আত্মস্থ করে নিন সাফল্যের এই ৮ চাবিকাঠি!
১. আত্মসমীক্ষা ও আত্মসমালোচনা
কাজের বাঁধা সময়ের বাইরেও পড়ে থাকে দিনের প্রায় ১৬টি ঘণ্টা। এই সময়ে আত্মসমীক্ষা করা আশু প্রয়োজন। অবসরে ক্রমাগত নতুন কিছু পড়া, শেখার মাধ্যমে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সফল ব্যক্তিরা। নতুন সেমিনারে যাওয়া হোক বা কোনও নতুন সেশনে যোগদান―জানার পরিধিকে যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করুন। আজকের দিনে বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যক্তি বিল গেটস (Bill Gates) বছরে অন্তত ৫০টি বই পড়েন, অর্থাৎ সপ্তাহে একটি তো বটেই!
আসলে শুধু পড়া নয়। পুঁথিগত বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে কতটা আধুনিক হওয়া যায়, কতটা সৃজনশীল হওয়া যায়―সেটাই জরুরি। সবসময় ব্যস্ত থাকাটা বড় কথা নয়, বরং সময়কে কাজে লাগিয়ে কতটা বেশি উৎপাদনশীল হতে পারছেন―সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
২. শারীরিক দৌর্বল্য কাটিয়ে ফেলুন
শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার অর্থ শুধুই দেখনদারি―এমন ভাবার কোনও কারণই নেই। মন সতেজ এবং বুদ্ধিদীপ্ত হতে গেলেও শরীরচর্চার কোনও বিকল্প নেই। কর্পোরেট জগতে যখন সবার মগজ ছুটছে ‘টার্গেট’-এর পিছনে, তখন দিনের একটু সময় নিজের জন্য না বের করলেই নয়! খোলা পার্কে যোগব্যায়াম হোক বা একটু ছোটাছুটি, এমনকি নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটলেও শরীরের হৃত গৌরবকে ফিরিয়ে আনা এমন কিছু কঠিন নয়। দিনে ২ ঘণ্টা হাঁটলেই মানসিক চাপকে (Stress) তুড়ি মেরে ওড়াবেন আপনি―চেষ্টা করেই দেখুন না!
৩. জীবন মানেই সম্পর্ক, আর সম্পর্ক মানে…
রাতের খাবার খাওয়ার সময়ে পরিবারের সঙ্গে একটু গল্প বা বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা, মনখোলা হাসি―মানসিকভাবে একজন মানুষকে সতেজ করতে এটুকুই যথেষ্ট! হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Harvard University) এক গবেষণা মোতাবেক, ৭৫ বছর পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের আনন্দের কারণ সম্পত্তি বা খ্যাতি নয়, সম্পর্ক বা রিলেশনশিপই এক্ষেত্রে আসল চাবিকাঠি! খুশি নাগরিকরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছতে সমর্থ হন, এর নেপথ্যে রয়েছে খুব সহজ যুক্তি। মনে আনন্দ থাকলে জীবনের বাধাবিপত্তিকে এড়ানো যায় সহজেই, নতুন কৌশল ভাবার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক কাজ করে দ্রুত। মন জটিলতাকে দূরে সরিয়ে নতুন সবকিছুকে আপন করে নেয় সহজেই। সফল ব্যক্তিরা যতই ব্যস্ত হোন না কেন, দিন শেষে পরিবার তথা কাছের মানুষদের জন্য সময় বের করেন অনায়াসে। বজায় থাকে ভারসাম্য, জীবন হয় সুখের।
৪. ভাবার সময় নিন, ভাসার সময় নিন
সফল ব্যক্তিরা মাঝে মাঝেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান। একাকী নীল-নির্জনে চলে যান সবকিছুকে দূরে সরিয়ে! আসলে এই তথ্যপ্রযুক্তির ভরা সংসারে নিজেকে সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ (Shut Down) যারপরনাই কঠিন। আরও কঠিন নিজেকে মোবাইল থেকে দূরে রাখা। তবে মাঝেমধ্যে এটাও করা প্রয়োজন। প্রযুক্তির সংযোগ বন্ধ করে আত্মিক সংযোগ স্থাপন করুন নিজেরই সঙ্গে―প্রকৃতির নীরবতার অংশ হওয়ার চেষ্টা করুন। যাঁরা সফল, তাঁদের অনেকেই মনকে একাগ্র করার উদ্দেশ্যে ধ্যান করেন। ধ্যান না করতে পারলে চিন্তা নেই! ছাদের খোলা হাওয়ায় বসুন এক কাপ চা নিয়ে, তবে হ্যাঁ―ফোনটা দূরে রাখাই এক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয়।
৫. হাত বাড়ান, জ্ঞান বাড়ান, পা বাড়ান সাফল্যের পথে…
আপনার সাফল্য এবং জ্ঞান, ভাগ করলে কমবে না। বরং আপনার আশপাশের আর পাঁচটা মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিন আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা! বিশ্বাস করুন, সাফল্যের শীর্ষে থাকা প্রত্যেকেই মনেপ্রাণে এ কথা বিশ্বাস করেন। যাঁরা আজ সফল, তাঁরা প্রত্যেকেই একদিন শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। শিক্ষক, বাবা-মা হোক বা প্রেমিক-প্রেমিকা, প্রত্যেকের থেকে কিছু না কিছু শিখি আমরা প্রত্যেকেই। সম্পূর্ণ মানুষ হওয়ার মধ্যেই যে আসল সাফল্য, তার শিক্ষা ছড়িয়ে দিন আপনার আশপাশের মানুষের মধ্যে। সাফল্যের উঁচু শিখরে ওঠার সময়ে হাত বাড়িয়ে দিন আপনার পরের জনের দিকে, হয়তো আগামীতে আপনাকেও অযাচিতভাবে সাহায্য করবে অচেনা কেউ!
৬. ভুল করা ভুল নয়
ভুল। তারপর আবার ভুল। আবার একটা বড় ভুল। এভাবেই জীবনের প্রত্যেক পদক্ষেপে জমতে থাকে অভিজ্ঞতা। জ্ঞানভাণ্ডারে জমতে থাকে ‘বিবিধ রতন’! সাফল্যের পথে যাঁরা চ্যাম্পিয়ন, তাঁরা ঠেকে শিখেছেন, লড়াইয়ে থেকে শিখেছেন। হারলে হবে না। অদম্য এই জেদ আসবে তখনই, যখন আদতেই লড়বেন, এবং হ্যাঁ! ভুলও করবেন বারংবার। বিখ্যাত অজি ক্রিকেটার স্টিভ ওয়ার (Steve Waugh) আত্মজীবনী ‘Out of My Comfort Zone’। বইয়ের নামই বলে দেয় যে জীবনে এগোতে গেলে বেরিয়ে আসতে হবে আরামের গণ্ডি ছেড়ে। আরাম কেদারা ছেড়ে বেরতে হবে বেয়াড়া রাস্তায়, শিখে নিতে হবে খুঁটিনাটি। সফল হতে গেলে রাস্তাই শেখাবে সবটা, হাতে তুলে দেবে সাফল্যের চাবিকাঠি।
৭. মনে মরচে পড়তে দেবেন না!
‘Creativity’ বা সৃজনশীলতা শুধুমাত্র চিত্রকার বা সঙ্গীতজ্ঞদের মূলধন, এমনটা নয়। সৃজনশীল হলে বেসরকারি বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা এবং সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট এগিয়ে যাবেন আপনি। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন দর্শন হোক বা পুরাতনকেই নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা―সব ক্ষেত্রেই আপনাকে হতে হবে CREATIVE! রান্না করতে ভাল লাগে? ভাল লাগে ফুলগাছের যত্ন নিতে বা হাতের কাজ করতে? তাহলে অবসর সময়কে নষ্ট না করে লেগে পড়ুন। মননে মরচে পড়ার আগে এভাবেই নিজেদের সচল করে নেন সফল ব্যক্তিত্বরা―আপনিও এগোতে পারেন একই পথে।
৮. সুস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন
চূড়ান্তভাবে সফল হয়েও নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে না পারলে সবটাই বৃথা। ‘বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই’-এর মতোআপনার জীবনও হতে পারে ‘ষোলোআনাই ফাঁকি’! তাই শুরু থেকেই শুরু করুন। পরিমিত ও সঠিক সময়ে আহার করুন। ডায়েট (Diet) ঠিক করুন। শরীরের কথা শুনে শরীরকে চাঙ্গা রাখুন। যাঁরা সফল, তাঁরা সবসময় কাজ করেন―এই ভুল ধারণা থাকলে ঝেড়ে ফেলুন আজই, এখনই। দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাসে বেঁধে ফেলুন নিজেকে। তাহলে এবার সবটা আপনারই হাতে। এগিয়ে চলুন সাফল্যের দিকে…