Full Time Daughter: নিজেরই নিঃসঙ্গ মা-বাবাকে দেখাশোনার জন্য ৪৭,০০০ টাকার ‘চাকরি’ পেলেন মেয়ে, কোথায় ঘটল এমনটা?

Niana: আমার-আপনার আশপাশে অনেক পরিবার একে-একে হয়ে চলেছে শূন্য। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা বা কাজের জন্য ভিনদেশে বা অন্যত্র চলে যাওয়ায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা।

Full Time Daughter: নিজেরই নিঃসঙ্গ মা-বাবাকে দেখাশোনার জন্য ৪৭,০০০ টাকার ‘চাকরি’ পেলেন মেয়ে, কোথায় ঘটল এমনটা?
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 31, 2023 | 12:06 PM

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের (Parents) দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে সন্তান, এমনটাই কালের নিয়ম। যদিও যুগের হাওয়ায় এই নিয়ম বদলেছে। কিন্তু বাবা-মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব কতটা পালন করে সন্তানরা? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে মনে পড়ে যায় বৃদ্ধ পিতার জবানিতে নচিকেতার (Nachiketa)কণ্ঠে সেই মর্মস্পর্শী গানের লাইন, ‘আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’। তবে এমন যদি হয় বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে মাসের শেষে যদি মেলে মাইনে—ঠিক যেমনটা হয় চাকরির ক্ষেত্রে—তাহলে কেমন হয়?

হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন—অভিভাবকদের যত্ন নেওয়ার জন্য ফুলটাইম চাকরি। সম্প্রতি এই ঘটনাই ঘটেছে চিনে। শিরোনামে এমনই এক খবর, যা নজর কাড়ছে বিশ্ববাসীর। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের নিয়ানা নামে এক মহিলা বাবা-মায়ের দেখাশোনা করার জন্য ১৫ বছরের কর্মজীবনে ইতি টেনেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর এক সংবাদ সংস্থায় কাজ করতেন নিয়ানা। এরকম একটা চ্যালেঞ্জিং পেশায় থাকার দরুণ কাজের চাপ, মানসিক চাপের মুখে পড়ে একপ্রকার হাঁপিয়ে উঠছিলেন তিনি। দিনের পর দিন জীবন যুদ্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর। মেয়ের এই করুণ অবস্থা দেখে স্বাভাবিকভাবেই চুপ করে বসে থাকতে পারেননি বাবা-মা। তাই এই কঠিন সমস্যায় মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। তবে এক অভিনব উপায়ে—নিজেদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিয়ানাকে দিয়েছেন তাঁরা, তবে অর্থের বিনিময়ে। প্রত্যেক মাসে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৭০০০ টাকা মেয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিয়ানার বাবা-মা। এরপরই পাকাপাকাভাবে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন নিয়ানা।

কর্মব্যস্ততার চাপে কার্যত হাঁপিয়ে উঠছিলেন নিয়ানা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরও বেশি টাকা উপার্জন করার ইঁদুর দৌঁড়ে অংশ নিতে বাধ্য হন তিনি। এগোতে না পেরে আরও মানসিক চাপের শিকার হন নিয়ানা। তখনই তাঁকে তাঁর বাবা-মা বলেন, “তুমি কাজ ছেড়ে, চাকরির মতোই আমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিচ্ছ না কেন? ” বাবা-মায়ের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান নিয়ানা। তাঁদের পেনশনের টাকার কিছু অংশই প্রতি মাসে মেয়ের হাতে তুলে দেবেন তাঁরা, স্থির হয় এমনটাই। সারাদিন কী করতে হয় নিয়ানাকে? প্রত্যহিকের রুটিন নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। সকালে তাঁর কাজ বাবা-মায়ের সঙ্গে এক ঘণ্টা নাচা। এরপর দৈনন্দিনের প্রয়োজনে ব্যবহৃত মুদিখানার জিনিসপত্র গোছাতে বাবা-মাকে সাহায্য করা। সন্ধ্য়েয় নিয়ানার কাজ বাবার সঙ্গে হাতে-হাত মিলিয়ে ডিনার তৈরি করা। এছাড়াও বাড়ির গাড়ি চালানো, ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্রের যত্ন নেওয়া তাঁর দায়িত্ব। মাসে একবার বেড়াতে যান তাঁরা, সেই ট্যুর প্ল্যান করার কাজও নিয়ানারই।

বাবা-মায়ের সেবা করার এই কাজকে এক সুন্দর নাম দিয়েছেন নিয়ানা। তাঁর কথায়, “এটির নাম ‘ভালবাসায় মোড়া পেশা’। অর্থ উপার্জনের পিছনে না ছুটে বাবা-মায়ের সঙ্গে সারাদিনটা কাটানো অনেক শান্তি দিচ্ছে।” নিয়ানা আরও যোগ করেন, “বর্তমানে চিনে খুব পরিচিতি পেয়েছে এই চাকরি। ৯টা-৬ টার এই কাজকে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন পেশা হিসেবে।” নিয়ানার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে অনেকেই এই উদ্য়োগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আমার-আপনার আশপাশে অনেক পরিবার একে-একে হয়ে চলেছে শূন্য। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা বা কাজের জন্য ভিনদেশে বা অন্যত্র চলে যাওয়ায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। যদি এইভাবে বাবা-মায়ের পাশে থেকে তাঁদের সঙ্গ দেওয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। ছেলে-মেয়েই তো শেষ বয়সের লাঠি, তা যদি বেতনভুক্ত লাঠি হয়, ক্ষতি নেই তো। তবে প্রশ্ন, তৃতীয় বিশ্বের দেশে কত সংখ্যক বাবা-মা সন্তানকে এই চাকরির জন্য নিয়ানার অভিভাবকের মতো মাস মাইনে দিয়ে উঠতে পারবেন?