Sundarbans: সাপের কামড়ের সচেতনতায় চার দেশে চলল সুন্দরবনের সাইকেল
Snake Bite: ‘দ্য কাটমাণ্ডু পোস্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালে প্রতি বছর ২,৭০০ মহিলা ও শিশু মৃত্যুর কারণ হল সাপের কামড়। তাই তাঁদের জন্য সাপে কামড়ানোর পরে কী করণীয়, সে বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা প্রয়োজন। তাগিদটা অনুভব করেন সুন্দরবনের ‘ক্যানিং যুক্তিবাদী সংস্থা’র সদস্যরা।
প্রতি বছর সাপের কামড়ের (Snake Bite) ঘটনা ঘটে বাংলার বিভিন্ন জেলায়। একই ঘটনা ঘটতে দেখা যায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর ৬৪,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে (death due to snake bite)। সারা দুনিয়ার সাপের কামড়ের ৮০% ঘটনাই ঘটে ভারতীয় উপমহাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে গড়ে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২,০০০। চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার পেশায় চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। ডাঃ মজুমদার সরকারি হাসপাতালে কর্মজীবনে দেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সাপে কামড়ের রোগীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, ততক্ষণে ‘অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে’। হাতুড়ে, গুণিন আর ওঝাদের অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় আখেরে ক্ষতি হয় রোগীদেরই। চিত্রটা কিছুটা একই রকম নেপাল, ভুটান আর বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে অথবা মফঃস্বলেও। কৃষিজীবী (Farmer) জনগোষ্ঠীর দিনের অধিকাংশ সময় কাটে মাঠে আর শস্যের ক্ষেতে। নেপালের তরাই অঞ্চল ঝোপঝাড়ে ভরা। চাষের কারণে এই অঞ্চলে মানুষকে যেতে হয়। ‘দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালে প্রতি বছর ২,৭০০ মহিলা ও শিশু মৃত্যুর কারণ হল সাপের কামড়। তাই তাঁদের জন্য সাপে কামড়ানোর পরে কী করণীয়, সে বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা প্রয়োজন। তাগিদটা অনুভব করেন সুন্দরবনের ‘ক্যানিং যুক্তিবাদী সংস্থা’র সদস্যরা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ২৬শে অক্টোবর ৬ জন পরিবেশকর্মী সাইকেল নিয়ে রওনা হন নেপাল, ভুটান আর বাংলাদেশের পথে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-এর লক্ষ্য, ২০৩০-এর মধ্যে সর্প দংশনে মৃত্যুর হার অর্ধেক করা। আর সাইকেল চালাতে-চালাতে তুষার ও শুভেন্দু বলছেন, “আমরা চাই ৫০% নয়, সাপের কামড়ে মৃত্যু বন্ধ হোক। সেটা তখনই সম্ভব, যখন সঠিক সচেতনতা গড়ে উঠবে। সাপে কামড়ালে ওঝা বা গুণিন নয়, রোগীকে সবার আগে হাসপাতালে নিয়ে যান।” পরিবেশবান্ধব দূষণমুক্ত যান সাইকেলে চড়ে তুষার-শুভেন্দুরা সহজেই মিশে যাচ্ছেন ওঁদের যাত্রাপথের দু’পাশের মানুষের সঙ্গে। তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সচেতনতামূলক পোস্টার-ব্যানার।
সুন্দরবনের ক্যানিং থেকে সাইকেল চালিয়ে ওঁরা চলেছেন তিন দেশে। সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়েছেন ৭৩ বছরের নিরঞ্জন সর্দার। পথে পড়ছে যেসব গ্রাম-জনপদ আর মফঃস্বল, সেখানেই সাপে কামড়ানোর সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করতে-করতে চলেছেন কাবিল জমাদার, রবি সাউরা। সাপে কামড়ালে রোগীর জন্য প্রথম এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্পদংশনের রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে জীবন রক্ষা হয়।
রায়গঞ্জ, মালদা, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়িতে সাপে কামড়ানোর পর চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে সচেতনতা ছড়িয়েছে সুন্দরবনের দু’চাকার দল। ক্যানিংয়ের ‘যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা’র সদস্য তুষার ও সুদীপ্ত খুলনা মেডিকেল কলেজে করেছেন সচেতনতা শিবির। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষ। ওঁদের উদ্দেশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন খুলনার মানুষজন, চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। সাইকেল আরোহীদের বাংলাদেশের যাত্রাপথের খোঁজখবর রাখছেন স্বাস্থ্যকর্মী সাকিব। নেপালে সাইকেল যাত্রাকে স্বাগত জানাচ্ছেন মেডিসিনের অধ্যাপক সঞ্জীব শর্মা। ভারত ছাড়া প্রতিবেশী তিনটি দেশে এই ধরনের উদ্যোগ সেই দেশের মানুষদের ইতিমধ্যেই যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে।