নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সবুজের দেশ। যেখানে বহু বছর ধরে মানুষ সংযোগ স্থাপন করে আসছে গাছেদের সঙ্গে। এশিয়ার প্রথম গ্রাম হিসাবেও জনপ্রিয় নাগাল্যান্ডের এই গ্রাম। আর এই গ্রামের আসল নাম হল খোনোমা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে ইন্দো-মায়নামার বর্ডারের কাছে অবস্থিত খোনোমা।
যদি খোনোমার প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করা হয়, তাহলে জানিয়ে দিই যে এই গ্রামের যে দিকেই তাকাবেন খুঁজে পাবেন সবুজ দিগন্ত। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে অল্ডার গাছ। তবে গ্রামটা অবস্থিত পাহাড়ের একদম ওপর। নীচে দুই পাহাড়ের মাঝের উপত্যকায় ধাপে ধাপে রয়েছে ধানক্ষেত। এখানে একে বলা হয় রাইস ট্যারাস। সেখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে সিঁড়িও।
গ্রামের উল্টো দিকেই রয়েছে জঙ্গল। যেখানে রয়েছে পাইন, ফার, টিক, গুসবেরি গাছের সমাহার। আর সেই জঙ্গলেও রয়েছে অজস্র কীট-পতঙ্গ, পশুপাখির আস্তানা। তবে এই অরণ্য ব্লিথস ট্র্যাগোপ্যান নামক একটি পাখির জন্য বিখ্যাত। এই পাখি দেখতে কিছুটা পায়রার মতই হয়, কিন্তু আকারে একটু বড়। এই কারণে এই অরণ্যকে ট্র্যাগোপ্যান স্যাঞ্চুয়ারি নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে এই সৌন্দর্যের সূচনা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে।
৭০০ বছরের এই গ্রামে বাস রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের। এই উপজাতিদের বলা হয় অঙ্গামি। আর এদের প্রত্যেকের জীবিকাই হল চাষবাস। এই অঙ্গামিরা গাছ ও জঙ্গল রক্ষার দায়িত্বে আজীবন রয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে তাঁরা গ্রামের চারপাশে ৩০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় তৈরি করে ফেলেছেন সংরক্ষিত অরণ্য। আঙ্গামি উপজাতির জন্য, যাঁরা এই গ্রামকে তাঁদের বাড়ি বলেন, শিকার ছিল তাঁদের পবিত্র সাংস্কৃতিক অনুশীলন। কিন্তু শিকার নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনযাত্রাও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যায়।
১৯৯০ সালে একটি শিকার প্রতিযোগিতায় গ্রামবাসীরা ৩০০ ট্র্যাগোপ্যান পাখির হত্যা করেন। সেই সময় এই বিষয়টি গ্রামের প্রবণীদের মধ্যে সমালোচনা তৈরি করেছিল। সেই সময় থেকে বন্ধ হয়ে যায় শিকার এবং শুরু হয় বন সংরক্ষণের কাজ। এখন, অঙ্গমি লোককথা অনুযায়ী, তাদের সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট দিক পাখি, প্রাণী এবং বনের গল্পে পরিপূর্ণ। এখানে চাষও করা হয় পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। ঝুম চাষে প্রায় কুড়ি রকম ধান ফলানো হয় খোনোমায়। আর সেই ঝুম চাষের জেরে অবশ্যম্ভাবী ভূমিক্ষয়কেও রোধ করতে পাহাড়ের ধাপে ধাপে রোপণ করা হয়েছে অল্ডার গাছ।
আরও পড়ুন: এই ৬ দেশ ২০২০ থেকে আজ অবধি সেই দেশের দরজা খোলেনি পর্যটকদের জন্য…
আরও পড়ুন: এবার পুজোয় ঘুরে আসুন ভূস্বর্গের প্রথম গ্রামে!
আরও পড়ুন: এবার মরিশাসে শুধু ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাববেন না, ভাবুন প্যারাডাইস দ্বীপে ভিলার মালিক হওয়ার কথা…