Patal Bhuvaneshwar: দেবতার বাস রয়েছে পাতালেও! কুমায়নের কোথায় অবস্থিত এমন স্থান?
এই মন্দিরের অবস্থান উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের গঙ্গোলিহাটে মাটির নীচে। চারিদিক ঘন পাইন বনে ঘেরা। তারই মাঝে এক ছোট্ট গুহা। তার মধ্য দিয়েই প্রবেশ করতে হবে মাটির নীচে।
মুন্সিয়ারিতে দু’রাত কাটানোর পর, সবচেয়ে ভয় ভীতিকর বিষয়টি কী জানেন? আবারও সেই কালামনি টপ পেরিয়েই নীচে নামতে হবে। যতই রোমাঞ্চকর হোক না কেন, প্রাণের ভয় আর কোথায় যাবে! কিন্তু কুমায়নের এই উচ্চতর গ্রাম থেকে নেমে আপনি যাবেন কোথায়- এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তাহলে কি গন্তব্য মুন্সিয়ারিতেই শেষ? না! কুমায়নের এই সিরিজের শেষ গন্তব্য হল পাতাল ভুবনেশ্বর।
উত্তরাখণ্ডকে যে কেন দেবভূমি বলা হয়, তার পরিচয় কুমায়নের এই সিরিজের আপনি পেয়েই গেছেন। কিন্তু পাতাল ভুবনেশ্বরে একবার প্রবেশের পর এই ‘দেবভূমি’ একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে। উত্তরাখণ্ডের একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান এই অঞ্চল। মহাভারতের যোগ তো রয়েছেই, কিন্তু মাটির নীচে দেবতাদের এমন অবস্থান- যে কোনও নাস্তিক মানুষকেও টেনে নিয়ে যায় এখানে।
মাটির নীচে দেবতাদের বাস- নাম তাই ‘পাতাল ভুবনেশ্বর’। এই মন্দিরের অবস্থান উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের গঙ্গোলিহাটে মাটির নীচে। চারিদিক ঘন পাইন বনে ঘেরা। তারই মাঝে এক ছোট্ট গুহা। তার মধ্য দিয়েই প্রবেশ করতে হবে মাটির নীচে। প্রবেশদ্বার থেকে ৯০ মিটার গভীর ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ আর একবার মাটির নীচে প্রবেশ করে গেলে আপনার মনে হবে সত্যি অন্য ভুবনে এসে গেছেন আপনি।
পুরাণ কাহিনি তো রয়েছে, তার সঙ্গে এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি কোনও ভাবেই মিস করা চলে না। মহাভারতের নিবিড় যোগ রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। মনে করা হয়, অর্জুনের তীরেই নাকি স্থাপিত হয়েছে এই মন্দির। এর পাশাপাশি স্থানীয়রা মনে করেন, এই পাতাল ভুবনেশ্বরের মন্দির থেকে উত্তরাখণ্ডের চার ধামে নাকি যাওয়ার পথ রয়েছে। মনে করা হয়, এই পথ অর্জুনের তীর মারার কারণেই তৈরি হয়েছিল। পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় একসঙ্গে কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং অমরনাথের দর্শন হয়। তবে এগুলো শুধুই লোককথা। এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যদিও জানান দেয় অন্য কথা।
সবুজ ঘন জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট গ্রাম। একটা গুহা উরফে মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি পর্যটন কেন্দ্র। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি পাইন গাছ। স্থানীয়দের দাবি, এই জঙ্গলের মধ্যে চিতাবাঘও রয়েছে। এই কথা কতটা সত্যি তা জানা না গেলেও, এই জঙ্গল পক্ষীপ্রেমীদের কাছে স্বর্গোদ্যান। রঙ-বেরঙের পাখিদের সমাহার পাতাল ভুবনেশ্বরে। কারোর ডাক আপনার খুব পরিচিত, কাউকে হয় তো আপনি এর আগে দেখেননি।
হোটেলের বাগানে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আপনি হিমালয়ের এক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এখানে। পাহাড়ের বেশ নীচে অবস্থিত হলেও পাতাল ভুবনেশ্বরে থেকেও আপনি হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ দেখতে পাবেন। মুন্সিয়ারি থেকে নীচে নেমে যখন আবারও পঞ্চচুল্লিকে দেখবেন, মনে হবে যে আপনি কত কাছে ছিলেন ওই তুষারাবৃতগুলির। কিন্তু কুমায়নের এই যাত্রা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আপনার।