Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ২৫–বর্ধমানের ১০৮টি শিব মন্দির ঘুরে সোজা পৌঁছে যান আউশগ্রামে

Weekend Trip From Kolkata: নীরবতার নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে এবং সম্ভবত এটি আউশগ্রাম সম্পর্কে সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি। কোনও ভিড় নেই, কোনও অবাঞ্ছিত শব্দ নেই, কোনও গাড়ির হর্ন নেই। যতদূর চোখ যায়, অন্তহীন সবুজ আর সবুজ।

Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ২৫–বর্ধমানের ১০৮টি শিব মন্দির ঘুরে সোজা পৌঁছে যান আউশগ্রামে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 05, 2023 | 9:18 AM

কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত আউশগ্রাম বাংলার একটি অতুলনীয় গ্রাম। আপনি এখানে একরের পর একর ধানক্ষেত দেখতে পাবেন। দিগন্ত নীল আকাশের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, ঘোরাঘুরি ও কর্দমাক্ত গ্রামের রাস্তা এবং গরুর গাড়ির অলস চলাচল। সংক্ষেপে, আপনি যদি গ্রামবাংলায় কিছু অলস সময় কাটাতে চান, তাহলে সপ্তাহান্তে কলকাতা থেকে ‘মুক্তি পেতে’ আউশগ্রাম এক আনন্দদায়ক ছুটি। এই পর্বে আমি আউশগ্রামের একটি সফর, একটি বিস্ময়কর পুনর্মিলন এবং এই স্থানে কীভাবে পৌঁছাতে হবে, কোথায় থাকতে হবে এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে কিছু তথ্য বর্ণনা করছি।

কলকাতা থেকে ভোরবেলা বাইকে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বর্ধমানের উদ্দেশ্যে। বর্ধমানের ১০৮টা শিব মন্দির দেখে সোজা চলে আসুন অরগ্রামে। নিজের কাছে বাইক থাকার জন্য অরগ্রামের ফরেস্ট ঘুরে দেখুন এবং তারই পাশে অবস্থিত ব্রিটিশের তৈরি এয়ারপোর্ট এবং রানওয়েও দেখে নিন। এটি স্বাধীনতার পূর্বে চালু ছিল। এরপরই গুসখারা থেকে বাঁ দিক নিয়ে পৌঁছে যান আউশগ্রামে।

কখনও-কখনও একটি-একটি জায়গার নিছক নির্মলতাই আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে এবং আমরা সেই জায়গার প্রেমে পড়ে যাই। অনেক ব্যস্ত উৎসবের মরসুমের (দুর্গাপূজা) পরে, আমরা কেবল একটি শান্ত এবং শহরের সমস্ত কোলাহল থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। নীরবতার নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে এবং সম্ভবত এটি আউশগ্রাম সম্পর্কে সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি। কোনও ভিড় নেই, কোনও অবাঞ্ছিত শব্দ নেই, কোনও গাড়ির হর্ন নেই। যতদূর চোখ যায়, অন্তহীন সবুজ আর সবুজ। দিগন্তের অন্তহীন নীল আকাশের সঙ্গে মিশে রয়েছে সবুজ ধানক্ষেত। দূর থেকে কুনুড় নদীও তার আপন গতিতে প্রবাহমান।

গুসখারা থেকে ডান দিক নিয়ে পৌঁছে যাবেন এখানকার নীলকুঠিতে। এই নীলকুঠিটি অনেক পুরনো এবং এর পিছনে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে। এছাড়াও এখানে রয়েছে উজান পার্ক, যা বাচ্চা এবং বড়দের সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। শীতকালে এখানে রংবেরঙের পাখি আর ফুলের চাষের এক অদ্ভুত সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। চারিদিকে সবুজ ধানের ক্ষেতে মাঝখানের মাটির রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবেন।

এছাড়া এখানে অজয় নদীর তীরে রাজবাড়ী দেখতে ভুলবেন না। রায়পুরের জমিদার বাড়ি এখনও তার ভাস্কর্য লক্ষ্য করার মতো। জমিদার বাড়িটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও তা দেখার মত। এছাড়াও আছে অজয় নদীর ভিউ পয়েন্ট এবং অজয় নদীর পিকনিক স্পট, যা শীতকালে এখানকার আঞ্চলিক মানুষের একটি ভালো সময় কাটানোর স্থান।

এছাড়াও এখানে আছে ইলামবাজার উদ্ভিদ জীবাশ্ম পার্ক, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং গাছের গুঁড়িকে রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে তাদের জীবাশ্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে এই পার্কটিকে। নানা প্রজাতির গাছের গুঁড়িকে জীবাশ্বে পরিণত করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। হতে পারে এসব প্রজাতির কাজ বর্তমান পৃথিবীতে নেই, তাই এভাবেই তাদের নাম দিয়ে দেখাতে চেয়েছে তাদের বিস্তার।

এখানে আপনি মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য ছোটখাটো অনেক খাবার জায়গা বা হোটেল পেয়ে যাবেন। রাত কাটানোর জন্য হোটেল বা হোমস্টে পাবেন। আমি এখানে রাত কাটাইনি। তবে গ্রামে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা সত্যি খুব ভাল। এখানে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে যায়। তারপর ঝিঁ-ঝিঁ পোকা আর মশার উপদ্রব। ফেরার সময় রইল একটা দোকানের ঠিকানা, যেখানে আপনাকে একবার হলেও দাঁড়াতেই হবে। এই দোকানের চা, সিঙ্গাড়া এবং মণ্ডা-মিঠাই খুবই সুস্বাদু। ঠিক যেমন বড়া চৌমাথার কাছে অবস্থিত ‘অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। তারপর আবার নবাবহাট হয়ে জিটি রোড ধরে ফিরে আসুন কলকাতায়।